<p><strong>রানা দাস, কালনা:</strong> গুজরাতের কারখানায় কাজ করতে গিয়ে নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয়েছে এরাজ্যের কালনার বাসিন্দা নাবালক। ভাইরাল ভিডিও সামনে আসতেই এবার আরও অভিযোগ উঠে আসছে। অভিযুক্ত হাপান মোল্লা রোজগারের টোপ দিয়ে দুঃস্থ পরিবারের বহু নাবালককেই রাজকোটে নিয়ে গিয়েছে। অভিযোগ উঠছে, তাদের কেউ সাত বছর ধরে নিখোঁজ আবার কেউ পালিয়ে বেঁচেছেন।</p>
<p><strong>কুকীর্তির পর্দা ফাঁস:</strong> কখনও দামি মোবাইল ফোন, কখনও ভাল কাজ, মোটা টাকা মাইনের টোপ দিয়ে দুঃস্থ পরিবারের ছেলেদের ভিন রাজ্যে কাজে পাঠানো হয়। আর রোজগারের আশায় সেখানে গিয়ে এভাবেই জোটে বেধড়ক মার, নৃশংস অত্যাচার। কালনার উপলতি এলাকার বাসিন্দা বছর বারোর বালকের এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গেছে। সামনে আসছে ভয়ঙ্কর সব অভিযোগ। কালনার শিকারপুরের বাসিন্দা হাপান মোল্লা ওরফে আজিদ মোল্লা নাকি গ্রামে গ্রামে ঘুরে এভাবেই বহু নাবালককে কাজের টোপ দিয়ে গুজরাতের রাজকোটে নিয়ে গেছে। গ্রামের গরিব পরিবারগুলোই ছিল তার টার্গেট।</p>
<p>৮ বছর আগে হাপানের সঙ্গে ছেলেকে গুজরাতে কাজে পাঠিয়েছিল জঙ্গলপাড়ার পরিবার। কিন্তু ৭ বছর ধরে তার কোনও খোঁজই নেই! নাবালকের অত্যাচারের ভিডিও সামনে আসতে সাহস করে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন দম্পতি। অভিযোগকারিণী বাসিন্দা বলেন, "আমরা গরিব মানুষ। খেতে পরতে দিতে পারছি না। তাই পাঠিয়েছি। কাজের জন্য। বেশি টাকা পাবে ওইজন্যই পাঠিয়েছিলাম। হারিয়ে গেছে বলছে না বলছে পালিয়ে গেছে। এবার আমরা গরিব মানুষ, অতদূর আমাদের টাকা পয়সা আছে, তাই জোগাড় করে খুঁজতে যেতে পারব?”</p>
<p>অভাবের তাড়নায় ৭ বছর আগে হাপানের সঙ্গে কাজ গিয়েছিলেন জঙ্গলপাড়ারই আরেক যুবক। কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছেন তিনি। কালনার বাসিন্দা জানাচ্ছেন, "লোহার পাইপ দিয়ে মেরেছে। দু’জন ধরেছিল আর মারছে মালিকটা। আমার থেকে (ছোট) আরেকটা ছেলে ছিল, ওকেও খুব মারধর করত প্রত্যেকদিন, অত্যাচার করত। যখন যেটা পাবে সেটা দিয়েই মারবে। লোহার রডে করে মেরে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল জায়গাটা। এমন জায়গায় পাঠিয়ে দেব আর কোনওদিন বাড়ি ফিরতে পারবি না, এরকম বলত।”</p>
<p>কালনার উপলতি, শিকারপুর, জঙ্গলপাড়ার অনেক পরিবারই দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খায়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই হাপান মোল্লার মতো এজেন্টরা নাবালকদের কাজের টোপ দিয়ে ভিনরাজ্যে নিয়ে যায়, যার পরিণতি হয় মর্মান্তিক। আক্রান্ত বালকের দাদু বলেন, "মোটরবাইক করে এসে ছেলেপুলের সব খোঁজখবর করে এ গ্রাম, সে গ্রাম, পাশের গ্রাম। আমার জামাইয়ের কাছে এল, এসে বলল তোমার এই ছেলেটাকে দেওয়া যাবে না? ছেলেটাকে দাও। আমার নিজস্ব ছেলের মতো থাকবে, ব্যক্তিগত ভাবে। আমি খাওয়াব, মাখাব, মানুষ করব, কাজ শেখাব বলে এইভাবে নিয়ে গেছে।”</p>
<p>অভাবের তাড়নায় কোলের সন্তানদের হাপান মোল্লার সঙ্গে ভিন রাজ্যে কাজে পাঠালেও হাল ফেরেনি দুঃস্থ পরিবারগুলোর। কিন্তু গত কয়েক বছরে হাপান মোল্লার হালচাল বেশ দ্রুতই বদলেছে। শিকারপুরে পেল্লাই বাড়ি,স্থানীয় সূত্রে খবর, তিন চারটে মোটরবাইক, প্রচুর জমি, রাস্তার উপরে দোকান সবই রয়েছে তার। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত হাপান মোল্লার খোঁজে গুজরাতের রাজকোটে গেছে কালনা থানার একটি টিম।</p>
Source link
কেউ সাত বছর ধরে নিখোঁজ, কেউ বেঁচেছেন পালিয়ে; কালনার হাপান মোল্লার কুকীর্তির পর্দা ফাঁস
