১০ ম্যাচ অপরাজিত এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে প্রতিশোধের ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের, কাঁটা ফুটবলারদের চোট-আঘাত

কলকাতা: নতুন বছরে সমর্থকদের নতুন আলোর দিশা দেখাতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) কোচ অস্কার ব্রুজো (Oscar Bruzon)। কিন্তু নতুন বছরে দু’বার মাঠে নামা হয়ে গেলেও তাঁর দল এখনও জয়ের মুখ দেখতে পায়নি। দুই ম্যাচেই হেরেছে তারা। প্রথমে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে, পরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের কাছে। চোট-আঘাত, কার্ড সমস্যায় জর্জরিত তারা। কী ভাবে প্রথম এগারো বাছবেন, তাই নিয়েই প্রতি ম্যাচের আগে অনেক ভাবতে হচ্ছে কোচকে। এই অবস্থায় রবিবার তারা মাঠে নামবে সেই এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে, যারা প্রথম লিগে তাদের হারিয়েছিল। সেই এফসি গোয়া এখন পয়েন্ট টেবলে সেরা চারের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
সেরা চারে থাকলেও নতুন বছরে তারাও তিনটি ম্যাচের মধ্যে একটিতে জিততে পেরেছে। শেষ দু’টি ম্যাচে ড্র করেছে ভারতীয় কোচ মানোলো মার্কেজের দল। তার মধ্যে একটি আবার টেবলের একেবারে নীচে থাকা হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে। সেটি ছিল চলতি লিগে হায়দরাবাদের তিন নম্বর ড্র। গত বছরের শেষ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলেরও পয়েন্ট নষ্ট করেছে এই হায়দরাবাদ। এ দিক থেকে তারা প্রায় একই জায়গায় থাকলেও অন্যান্য দিক থেকে ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে এগিয়েই রয়েছে আরব সাগর পাড়ের দল।
শেষ দশ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে মার্কেজ-বাহিনী। তার মধ্যে ছ’টি জয়। তারা শেষ হেরেছে ১৯ অক্টোবর, মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে। আর প্রথম ম্যাচে জামশেদপুর এফসি-র কাছে হেরেছিল তারা। চলতি লিগে এই দু’টি ছাড়া আর কোনও ম্যাচে হারেনি গোয়া। অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গল তাদের দশ নম্বর হার থেকে আর মাত্র এক ধাপ দূরে। শেষ দশটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জিতেছে তারা। গত বছরের শেষ দিকে নর্থইস্ট ইউনাইটেড, চেন্নাইন এফসি, পাঞ্জাব এফসি, জামশেদপুর এফসি-র মতো দলকে হারালেও শেষ তিন ম্যাচে জয়ের খরা তাদের পয়েন্ট টেবলে এগারোর ওপর উঠতে দেয়নি এখনও।
তার ওপরে লাল-হলুদ শিবিরে চোট-সমস্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালাল পুরো মরশুম থেকেই ছিটকে গিয়েছেন। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সল ক্রেসপো খেলার মতো ফিট নন। একই অবস্থা হেক্টর ইউস্তেরও। চোট-আঘাতের তালিকায় আগেই ছিলেন ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপ। তাতে ঢুকে পড়েছেন আরও দুই ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি ও প্রভাত লাকরা। দলের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ও অধিনায়ক ক্লেটন সিলভাও পুরোপুরি ফিট নন বলেই শোনা যাচ্ছে। মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তী গত ম্যাচে চোট সারিয়ে ফিরলেও লাল কার্ড দেখে এই ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছেন। তা হলে মাঠে নামবেন কারা? কোচের সামনে এটাই এখন সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন।
সদ্য ভেনেজুয়েলা থেকে আনা হয়েছে ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিসকে। কিন্তু সদ্য ভারতে এসে পরিবেশ ও সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তিনি কতটা স্বচ্ছন্দে খেলতে পারবেন, এই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবু সেলিসকে রেখেই হয়তো প্রথম এগারো গড়তে হবে কোচকে। আক্রমণে দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের সঙ্গে দেখা যেতে পারে তাঁকে। কলকাতা ডার্বিতে খুব কষ্ট করে দল সাজাতে হয়েছিল অস্কার ব্রুজোনকে। আক্রমণের খেলোয়াড়কে রক্ষণে, রক্ষণের খেলোয়াড়দের মাঝমাঠে রেখে দল সাজাতে হয়েছিল তাঁকে। এই ম্যাচেও হয়তো সেই পথেই যেতে হবে তাঁকে।
গত দুই ম্যাচে জয় না পাওয়া এফসি গোয়াকে টেবলের ওপর দিকে জায়গা ধরে রাখতে গেলে এই ম্যাচে জয় পেতেই হবে। তাই বিপর্যস্ত ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে নিশ্চয়ই মরিয়া হয়ে উঠবে তারা। দলের সর্বোচ্চ স্কোরার আরমান্দো সাদিকু গত ম্যাচে গোল পাননি, তবে তার আগের ম্যাচে দলের একমাত্র গোলটি তিনিই করেছিলেন। এ পর্যন্ত ন’গোল করে সর্বোচ্চ স্কোরারদের তালিকায় ওপর দিকেই রয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও তরুণ তরুণ মিডফিল্ডার ব্রাইসন ফার্নান্ডেজ পাঁচ গোল করে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতার জায়গায় আছেন। এই দু’জনকে কড়া নজরে না রাখলে বিপদে পড়তে পারে ইস্টবেঙ্গল। প্রথম লিগে তাদের বিরুদ্ধ হ্যাটট্রিক পাওয়া বোরহা হেরেরার চোট। এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি।
তবে গত দুই ম্যাচেই প্রথমে গোল করে এগিয়ে যাওয়ার পরও শেষ দিকে গোল খেয়ে ড্র করতে হয়েছে তাঁর দলকে। এই ব্যাপারটা নিশ্চয়ই চিন্তায় রেখেছে মার্কেজকে। দল নিয়মিত গোল করলেও দূর্গ অক্ষত রাখতে পারছে না তারা। ২৯ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় মোহনবাগানের পরেই থাকলেও ২০ গোল খেয়েছে তারা। গত দশটি ম্যাচে অপরাজিত থাকলেও এর মধ্যে মাত্র তিনবার ক্লিন শিট রাখতে পেরেছে তারা। সন্দেশ ঝিঙ্গন, ওদেই ওনাইন্দিয়া, জয় গুপ্তাদের মতো ডিফেন্ডার থাকতেও কেন এই অবস্থা। কিন্তু সাদিকু, ব্রাইসনরা আটকে গেলে এফসি গোয়ার হয়ে কারা গোল করবে, এটা একটা বড় প্রশ্ন। যা ইস্টবেঙ্গলের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: অগ্নিগর্ভ মোহনবাগানের সভা! মারধরের অভিযোগ দেবাশিস গোষ্ঠীর, পাল্টা কী বললেন সৃঞ্জয়?
আরও দেখুন