NOW READING:
‘আমার সঙ্গে থাকতে চাইত, ভেবেছিলাম ওঁর সঙ্গে কথা বলব’, ছেলের স্নায়ুর অসুখ ছিল, জানালেন দিলীপজায়া
May 13, 2025

‘আমার সঙ্গে থাকতে চাইত, ভেবেছিলাম ওঁর সঙ্গে কথা বলব’, ছেলের স্নায়ুর অসুখ ছিল, জানালেন দিলীপজায়া

‘আমার সঙ্গে থাকতে চাইত, ভেবেছিলাম ওঁর সঙ্গে কথা বলব’, ছেলের স্নায়ুর অসুখ ছিল, জানালেন দিলীপজায়া
Listen to this article


কলকাতা: ছেলে যে ভাল নেই, তা বুঝতে পারছিলেন তিনি। স্বামীর সঙ্গে কথাও বলবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। ছেলে প্রীতম দাশগুপ্ত, ওরফে সৃঞ্জয়ের মৃত্যুর পর এমনটাই জানালেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার। জানালেন, তিনিই গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান ছেলেকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানলেন সব শেষ। 

দিলীপের সঙ্গে রিঙ্কু ঘর বেঁধেছেন এখনও একমাসও হয়নি। আর সেই অবস্থাতেই মঙ্গলবার ছেলের মৃত্যু দেখতে হল রিঙ্কুকে। নিউটাউনের শাপুরজির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় প্রীতমের দেহ। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। আর সেই অবস্থাতেই ছেলের কথা বলতে গিয়ে ভেঙে পড়লেন রিঙ্কু। 

এদিন সংবাদমাধ্যমে রিঙ্কু বলেন, “রাতে ওর দুই অফিস কলিগ ছিল ফ্ল্যাটে। একজন রাত ১০টা নাগাদ এসেছিল, অন্য জন ৩টে নাগাদ। ১২-১২.৩০টা নাগাদ শেষ বার ফোন করেছিল আমাকে। বলল, সকাল ৮টা নাগাদ সায়েন্স সিটি যাবে। দুর্গাপুর যাবে মামার সঙ্গে। বলল পরিতোষ মামাকে বলে দিও। আমি বললাম, ‘তুই ফোন করে বলে দে’!”

এদিন সকালে যখন ফ্ল্যাটে ঢুকে ছেলের অচৈতন্য দেহ দেখতে পান, ছেলের অসুস্থতার কথাই মাথায় এসেছিল রিঙ্কুর। বিকেলেও তিনি বললেন, “দেড় বছর আগে একবার জ্ঞান হারিয়েছিল। নিউরোর ওষুধ খাওয়াতাম আমি। কিছুদিন ধরে ঠিকঠাক ওষুধ খাচ্ছিল না। মুখে বলত না, কিন্তু স্বপ্ন ছিল আমার সঙ্গে থাকবে। আমি বললাম, দাঁড়া শীঘ্রই নিয়ে আসব। বলল আগে তো ঘর বানাবে! আমি বললাম, আগে তুই আসবি, তার পর ঘর বানাব। ঘর পরে হবে, আগে তুই থাকতে শুরু করে দিবি। আনন্দে ছিল যে একসঙ্গে থাকব।”

গত কয়েক দিন ধরে তিনিও অস্বস্তি বোধ করছিলেন বলে জানান রিঙ্কু। তিনি বলেন, “দু’-তিন দিন আমারও ঘুম হয়নি। কেন জানি না। মনে হচ্ছিল, ছেলেটা ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করছে না। টেনশনে ছিলাম। আমি এখানে রান্না করছি, আর ওখানে রান্নার লোক এসে ঘুরে যেত। কখন বন্ধুর বাড়ি থাকত।”

রিঙ্কু বিয়ের পর দিলীপের বাড়ি চলে যাওয়াতেই কি প্রীতমের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আসে? জবাবে রিঙ্কু বলেন, “মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ওর। আমাকে বুঝতে দিত না। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম। রান্নার লোক এসে বেল বাজিয়ে ফিরে যাচ্ছিল। রান্না হচ্ছিল না। ঘুম থেকে উঠে অফিস দৌড়ত। বলত, ‘কিছু খেয়ে নেব। এটা খেয়েছি, সেটা খেয়েছি’। আমি বুঝতে পারছিলাম, খাওয়াদাওয়া ঠিক হচ্ছে না।”

দিলীপের সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে কথা বলবেন বলেও ভেবেছিলেন রিঙ্কু। তাঁর বক্তব্য, “আমি ডিসাইড করেছিলাম ওঁকে বলব। কাল রাতেই কথা বলতে চাইছিলাম। কিন্তু দেখলাম উনি বেরিয়েছেন। ভেবেছিলাম আজই বলব যে, ‘দেখো, আমি ছেলেকে এখানে আনব। হয় ছেলেকে এখানে আনব, নয় আমাকে ছেলের সঙ্গে থাকতে হবে’। একদিন কথাও হচ্ছিল। তখন উনি বলেছিলেন, ‘দেখো যদি বাইরে চাকরি করতে চলে যেত! ওকে অকটু অ্যাকাস্টমড হতে দাও। ও তো নিজেই বলছে বাড়িঘর আছে, এখানে কী করে থাকবে’। আসলে আমাদের ঘরের সমস্যা ছিল। আমি ভাবছিলাম যে ছেলের যত্ন হচ্ছে না। চঞ্চল ছিল। আমি তো মা! বুঝতে পারতাম।”

রবিবারও রিঙ্কুর সঙ্গে দেখা করতে যান প্রীতম। মাদার্স ডে পালন করেন একসঙ্গে। রিঙ্কু বলেন, “রবিবার মাদার্স ডে সেলিব্রেট করতে এল। কেক আনল, গিফট আনল। শনিবার থাকতে গিয়েছিলাম ওর সঙ্গে। বলল, দক্ষিণ কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থাকবে রাতে। রবিবার আসবে। সেই মতো আমি ওর সঙ্গে তানিশ্কে ঢুকলাম। ও গাড়ির চাবি দিয়ে চলে গেল। আমি চলে এলাম। রবিবার বাড়িতে এল। আমাদের সঙ্গে সময় কাটাল। বললাম থাকতে। ও বলল পরে আসবে।”

 রিঙ্কু  জানিয়েছেন, এদিন ফ্ল্যাটে গিয়ে ছেলের দুই সহকর্মীকে দেখেন তিনি। ছেলের মন ভাল থাকে যাতে, তাই আসাযাওয়া ছিল সহকর্মীদের। রিঙ্কু বলেন, “ওরাও বলত যে নিয়ে যাও আন্টি। ও বলত, ‘তোরা বাড়িতে মা-বাবাকে দেখতে পাস। আমার ব্যাপারটা বুঝবি না’। আবার বলত, ‘আমি হ্যাপি আছি’। আমি আজ গিয়ে দেখলাম হাফ প্যান্ট পরে শুয়ে আছে, যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। পাশের ফ্ল্যাটের একজন তেল মাসাজ করছিল। আমি ফোন পেয়ে কোনও রকমে গাড়ির চাবি ও পার্স নিয়ে বেরিয়ে আসি। উনি (দিলীপ) বললেন আমার সঙ্গে একজনকে যেতে। কখন অ্যাম্বুল্য়ান্স আসবে না আসবে, দোতলা থেকে নামানো হল ওকে। আমিই দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওরা বলছিল অনেক কিছু, আমি বললাম আগে এমারজেন্সিতে নিয়ে যেতে।”

আরও দেখুন



Source link