কলকাতা: রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার ঠিক আগে রাজ্যে বিজেপি-র সমালোচনায় মুখ খুললেন দিলীপ ঘোষ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে দলের পতন শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করলেন তিনি। আর জি কর কাণ্ডে দলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন দিলীপ। রাজ্যে বিজেপি-র অবস্থা এই মুহূর্তে ভাল যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করলেন। পাশাপাশি, রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার জল্পনাও উস্কে দিলেন তিনি। (Dilip Ghoah)
রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি পদ হাতছাড়া হয়েছে আগেই। লোকসভা নির্বাচনেও পরাজয়ের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। রাজ্য বিজেপি-তে দিলীপ কোণঠাসা এমন তত্ত্বও উঠে আসছে। আর সেই আবহেই রাজ্যে দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনায় মুখ খুললেন তিনি। তাঁর সাফ কথা, “২০২১ সালের পর থেকে পার্টির ডাউনফল শুরু হয়েছে। রেজাল্ট ভাল হচ্ছে না। আমাদের এখন ডাউন যাচ্ছে।” (West Bengal BJP)
সম্প্রতি রাজ্য়জু়ড়ে তোলপাড় ফেলেছিল আর জি কর মেডিক্য়ালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা। বিচার চেয়ে, জুনিয়র ডাক্তারদের নেতৃত্বে নজিরবিহীন নাগরিক আন্দোলন দেখেছে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য়। এমন আন্দোলন, যা ইদানীংকালে সফলভাবে করে দেখাতে পারেনি কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দল। আর জি কর ইস্য়ুতে সেভাবে পথে নামতে দেখা যায়নি বিজেপি-কেও। উল্টে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনস্থলে গিয়ে গো ব্য়াক স্লোগান শুনতে হয়েছে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের মতো বিজেপি নেতাদের।
এই প্রেক্ষাপটে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের তুলনা টেনে, কার্যত দলীয় নেতৃত্বেরই সমালোচনা শোনা গেল দিলীপের গলায়। তাঁর বক্তব্য, “একটা ইস্যুই রাজনীতি পাল্টে দেয়। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ইস্যুতেই হাওয়ায় পাল্টে গিয়েছিল। এই যে এত ঘটনা ঘটছে, হয়ত আমাদের দল সেই ইস্যুগুলিকে নিতে পারছে না।” এমন পরিস্থিতিতে দিলীপের উদ্দেশে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “হাল ছেড়ো না বন্ধু, কণ্ঠ ছাড়ো জোরে।” লোকসভআ নির্বাচনে কেন্দ্র বদল করা নিয়ে আগেই দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন দিলীপ। দিলীপের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে মত কুণালেরও।
দিলীপের গলায় দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনা অবশ্য় এই প্রথম নয়। এর আগে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, কখনও সুকান্ত মজুমদার, কখনও তথাগত রায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। গত লোকসভা ভোটে দিলীপকে চেনা কেন্দ্র মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে, ঝুঁকিপূর্ণ বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে প্রার্থী করা হয়। সেখানে জিততে পারেননি তিনি। তারপর আসন বদল নিয়ে সরবও হয়েছিলেন। সেই অভিমানের রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে তাঁর গলায়। আগামীতে প্রার্থী হবেন কি না জানতে চাইলে বলেন, “যতদিন ভাল লাগবে রাজনীতি, যতদিন সম্ভাবনা রয়েছে, ততদিন থাকব। এবার ভোটে লড়ব না দলকে বলেছিলাম। কারণ রেজাল্ট আমার জানা ছিল। একটা সময় আসে, পার্টি যে দায়িত্ব দেয় করতে হয়। আমাকে সর্বোচ্চ পদে বসানো হয়েছিল। আমার কল্পনায় ছিল না বিধায়ক, সাংসদ হব। দল দায়িত্ব দিয়েছে, করে দিয়েছি। দলকে জিতিয়েছি। লড়তে শিখিয়েছি দলকে। মনে হয়, আমার রাজনৈতিক দায়িত্ব শেষ হয়ে এসেছে।”
দিলীপ ঘোষের মন্তব্য় জল্পনা উস্কে দিয়েছে, তাহলে কি তিনি এবার সন্ন্য়াসের পথে? যে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্ব বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সর্বকালীন সেরা ফল করছিল, সেই তাঁকেই কি কোণঠাসা করে সন্ন্য়াসের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ-জেপি নাড্ডারাও কি দিলীপ ঘোষকে নিয়ে উদাসীন? দিলীপ ঘোষের অভিমান কি রাজ্য় নেতৃত্বের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর? দলের নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “পরিবর্তনের মাধ্যমেই দল বাড়ে। দিলীপদার পর সুকান্তদা হয়েছেন, আগামীতে অন্য কেউ হবেন। এটা চলতেই থাকে। এটা রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া কোনও ব্যাপার নয়। দিলীপদা অনেক সিনিয়র, বাংলার মাটিতে দিলীপদার মতো মানুষকে দরকার।”
বার বারই অকপট দিলীপ, এর আগেও নিজের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছিলেন। একটা সময় ছিল দিলীপ মুখ খোলা মানেই খবরের শিরোনাম। সেই দিলীপ কি আস্তে আস্তে সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন? উঠছে প্রশ্ন।
আরও দেখুন