দিঘা: অক্ষয় তৃতীয়ায় রাজ্য প্রশাসনের বড় অংশ দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে রয়েছেন। আর দুপুর গড়াতেই সেখানে ব্যতিক্রমী ছবি ধরা পড়ল। স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরে পৌঁছলেন দিলীপ। সেখানে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ও হল। উত্তরীয় পরিয়ে দিলীপকে স্বাগত জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উদ্বোধনের দিনই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে দিলীপের পদার্পণ রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। (Dilip Ghosh)
দলের শীর্ষস্তরের নেতা মন্ত্রী থেকে তারকা সাংসদ, এই মুহূর্তে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে রয়েছেন তৃণমূলের প্রায় সকলেই। বিকেলের কিছু পর আচমকাই সেখানে স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারকে নিয়ে হাজির হন বিজেপি নেতা দিলীপ। জানা গিয়েছে, দিলীপকে মন্দিরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌজন্য বজায় রাখতেই উদ্বোধনের দিন তাই সেখানে হাজির হন দিলীপ ও রিঙ্কু। (Digha Jagannath Temple)
এদিন দিলীপকে দেখে কার্যতই শোরগোল পড়ে যায় জগন্নাথ মন্দির চত্বরে। পুলিশি প্রহরায় দিলীপ যখন মন্দিরে ঢুকছেন, চারিদিকে তখন হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। তারই মধ্যে দিলীপ ও রিঙ্কুকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে যান কুণাল, অরূপ। সবুজ গালিচার উপর দিয়ে হেঁটে মন্দিরে ঢোকেন দিলীপ ও রিঙ্কু। অনুরাগীরে উদ্দেশে হাতও নাড়েন দিলীপ, হাত মেলান উপস্থিত অনেকের সঙ্গে।
মন্দিরে ঢোকার মুখে গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিলীপকে অভ্যর্থনা জানান অরূপ। ভিড় ঠেলে এর পর মন্দিরে ঢোকেন দিলীপ। গর্ভগৃহে প্রবেশ করে পুজো, প্রার্থনা সারেন দিলীপ ও রিঙ্কু। ঘটনাচক্রে, দিলীপ মন্দিরে ঢোকার কয়েক মিনিট আগেই ফের মন্দিরে ঢোকেন মমতা। ফলে দিলীপ যখন ভিতরে প্রবেশ করেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। আর তার পরই রাজ্য রাজনীতির এক বিরল ছবি ধরা পড়ে সেখানে। পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা যায় মমতা, দিলীপ এবং রিঙ্কুকে। হাসিমুখে খোশগল্পও করতে দেখাও যায় তাঁদের। অথচ এই দিলীপই একসময় মমতাকে লাগাতার আক্রমণ করে গিয়েছেন, কখনও কখনও তা মাত্রাও ছাড়িয়েছে। তাই চোখের সামনে যা দেখছেন, তা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না অনেকেই।
বিজেপি-র অন্য নেতারা কটাক্ষ ছুড়ে দিলেও, দিলীপ আগেই জানিয়েছিলেন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে যাবেন তিনি। কিন্তু উদ্বোধনের দিনই যে হাজির হবেন, তা কল্পনা করতে পারেননি অনেকে। ঘটনাচক্রে, আজই কাঁথিতে কর্মসূচি ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। আর সেই সময়ই স্ত্রীকে নিয়ে উলুবেড়িয়ে থেকে সরাসরি দিঘার জগন্নাথধামে হাজির হন তিনি। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে শুভেন্দু বলেন, “বিরোধী দলনেতা হিসেবে হিন্দুত্বের প্রশ্ন করুন, সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দেব। বিজেপি-র ব্যাপারে দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন। দলের অবস্থান ঘোষিত হলে, তাকে সমর্থন করার দায়িত্ব আমার। কিন্তু কোনও ব্যক্তি কী করবেন, কী বলবেন, তার উত্তর আমি দেব না।”
দিলীপের জগন্নাথ মন্দিরে এভাবে পদার্পণকে ঘিরে তাই জল্পনা জোর পেয়েছে। কারণ বিজেপি-তে দিলীপকে নিয়ে জল্পনা আজকের নয়। বিজেপি-র একদা রাজ্য সভাপতির সঙ্গে বর্তমান নেতৃত্বের সমীকরণ ঘিরে নানা কথা কানে আসে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় দিলীপের আসন বদল থেকে দলে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়া নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি দিলীপের বিয়েতে সুকান্ত শুভেচ্ছা জানাতে গেলেও, শুভেন্দুকে সেখানে দেখা যায়নি। সেই আবহেই দিলীপের দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পাশাপাশি বসা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
আরও দেখুন