কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে ক্রমশ। সেই সঙ্গে চড়ছে রাজনীতির পারদও। আর সেই আবহেই ফের বিস্ফোরক বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল এবং সিপিএম থেকে যাঁরা বিজেপি থেকে এসেছেন, তাঁরা ‘সৌজন্য’ জানেন না বলে মন্তব্য করলেন তিনি। দিলীপের এই মন্তব্য ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে এসে ওঠা শুভেন্দু অধিকারীকেই- কি তিনি নিশানা করলেন দিলীপ? উঠছে প্রশ্ন। (Dilip Ghosh)
শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখই হয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন দিলীপ। সম্প্রতি লোকসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান নরেন্দ্র মোদি থেকে বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই। তাঁদের সেই শুভেচ্ছাবার্তার স্ক্রিনশট সোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয় দিলীপ ঘোষের দফতর থেকেও। বিজেপি-র সৌজন্যবোধের কথা তুলে ধরে খোঁচা দেওয়া হয় নবীন বিজেপি-র একাংশকে। লেখা হয়, ‘বিজেপি-র সৌজন্য বুঝতে ‘হঠাৎ বিজেপি’-র আর এক জন্ম নিতে হবে’। (West Bengal BJP)
সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে এদিনও কোনও রাখঢাক করেননি দিলীপ। তাঁর কথায়, “বাংলার যে রাজনীতি, সিপিএম, তৃণমূলে থেকে রোগটা আমাদের মধ্যেও এসে গিয়েছে যে, বিরোধী মানেই শত্রু। কাল শত্রু, দলে এসে গেলে আজ মিত্র। আবার চলে গেলে শত্রু। এই সংস্কৃতিতে তো সমাজ চলতে পারে না! আমি বলতে চেয়েছি যে, এটাই বিজেপি-র সংস্কৃতি। বিজেপি রাজনীতির জন্য শত্রু বা মিত্র হবে না। বিরোধী নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁকে সম্মান জানানো হয়েছে। আমি তো অনেককেই এই সম্মান দিই। অনেকে আবার সেটা হজম করতে পারেন না। কিন্তু এই দূষিত রাজনীতি করে না বিজেপি।”
Rahul Gandhi celebrated birthday on June 19. PM Modi and BJP leaders wished him, and Rahul graciously thanked them. This is the true spirit of political courtesy. Those who see politics in such gestures reflect a narrow mindset. Rise above it or risk becoming isolated. pic.twitter.com/mPt20dl0DU
— Office of Dilip Ghosh (@DilipGhoshOff) June 20, 2025
এর আগে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে রাজ্য বিজেপি-র বিরাগভাজন হতে হয় দিলীপকে। রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে কি তাহেল সৌজন্যের বালাই নেই এই মুহূর্তে? দিলীপের জবাব, “সৌজন্য দেখা যাচ্ছে না, কারণ যাঁরা তৃণমূল বা সিপিএম থেকে এসেছেন, তাঁরা ওই সৌজন্যে অভ্যস্ত নন। তাঁরা হিংসা, দুর্নীতির রাজনীতিতে অভ্যস্ত। বিজেপি-র উদার রাজনীতি, বসুধৈব কুটুম্বকম বা সবকা সাথ, সবকা বিকাশ বললেও, হজম করতে পারেন না। তাই এই ধরনের সমস্যা হয় তাঁদের। বিজেপি-র নীতি কিন্তু পরিষ্কার। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দেখেই চলা উচিত বিজেপি-র। নইলে পার্থক্য থাকবে কী করে?”
দিলীপের এই মন্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মন্তব্য করা হচ্ছে। রাজ্য বিজেপি-তে শুভেন্দু অধিকারী বা অন্যদের সঙ্গে দিলীপের দূরত্ব নিয়ে কম গুঞ্জন নেই। তাই তিনি কাকে নিশানা করলেন, উঠছে প্রশ্ন। এ নিয়ে বিজেপি-র বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “দিলীপবাবু সর্বভআরতীয় স্তরে রাজীনতি করেছেন। তিনি রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের নেতা ছিলেন। বিজেপি-তে বিভিন্ন দলের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সম্মতি নিয়ে এই দলে যোগ দিয়েছেন এবং দলের রীতিনীতি মেনেই কাজ করছেন। কোথাও শৃঙ্খলা বা সৌজন্যের বিষয়ে রীতিনীতির সঙ্গে না গেলে, অবশ্য়ই কথা বলা হবে। তবে আমি এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু শুনিনি।”
তবে তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “দিলীপ ঘোষ যে মন্তব্য করেছেন, আমার ধারণা, তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়েই বলেছেন। তবে একথা সত্য যে, দিলীপ ঘোষ না চাইলে শুভেন্দু অধিকারী ঢুকতে পারতেন না। পাশাপাশি বসে তাঁরা মিটিংও করেছেন। আজ দিলীপ ঘোষকে ঘরের বাইরে বের করে দিয়ে তাঁর চেয়ারে গিয়ে বসেছেন শুভেন্দু। সেটা হজম করতে হচ্ছে দিলীপকে। একথা সত্য যে, যত ছাঁট জিনিস, ফেলে দেওয়া জঞ্জাল, সবক’টাকে জড়ো করে বিজেপি নিজের বাড়ির ফুলদানিতে সাজিয়েছেন। আর তার জন্যই এক সময়ের বাড়ির মালিক, দিলীপ ঘোষ দুর্গন্ধে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।”