কলকাতা: নিরাপত্তাহীনতায় খোদ বিচারকরাই! নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা জজকে চিঠি দিলেন ডায়মন্ড হারবার মহকুমা আদালতের ACJM-সহ তিনজন বিচারক। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বিচারক আবাসনের বাইরে দুষকৃতীদের আনাগোনার আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন বিচারকরা। এই ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আবাসনের বাইরে ঘোরাফেরায় ধৃত ব্যক্তির দাবি, ‘ওখানে সেদিন ভেলা ভাসানো ছিল। ভেলা ভাসানোর দিনে ওখানে একটু নেশা করে ফেলেছিলাম। শুধু নীচে নেমে একটু উঠেছি। আর কিছুই জানি না আমি। পুলিশ আমাকে ধরে এনেছে। আমি শুধু নেমেছি। জাস্ট নেমে আবার উঠে এসেছি। নেশা করেছিলাম। বুঝতে পারিনি ওটা আবাসন।’
আর জি কর-কাণ্ডে বিচার চেয়ে গর্জে উঠেছে নাগরিক সমাজ। কিন্তু বিচারের দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে থাকে, সেই বিচারকদের একাংশই কি না নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন! তাঁদের ওপরে হামলার আশঙ্কা এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জেলা জজকে চিঠি দিলেন ডায়মন্ড হারবার মহকুমা আদালতের তিন বিচারক।
এই ঘটনায় নাম জড়াল পৈলান পুলিশ হেডকোয়াটার্সের এক পুলিশ অফিসার-সহ দুই পুলিশকর্মীর। চাঞ্চল্যকর বিষয় হল বিচারকরা চিঠিতে লিখেছেন শিশুদের যৌন হেনস্থার POCSO মামলায় একটি নির্দেশ দেওয়ার পরেই এই ঘটনা ঘটেছে। সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কাপ্রকাশ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা জজকে চিঠি দেন ডায়মন্ড হারবার মহকুমা আদালতের তিন বিচারক। সেখানে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করেছেন তাঁরা।
ডায়মন্ড হারবার মহকুমা আদালতের ACJM এবং দুই অতিরিক্ত জেলা জজের অভিযোগ, আবাসনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের থেকে তাঁরা খবর পান, কুমারেশ দাস নামে পৈলান পুলিশ হেডকোয়াটার্সের এক অফিসার দুজনকে আবাসনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য পাঠাচ্ছেন। বিচারকদের অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবার থানার এক অফিসারের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ওই পুলিশ অফিসার নিরাপত্তারক্ষীদের নির্দেশ দেন আবাসনে আসা দু’জনের পরিচয় গোপন রেখে তাদের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার জন্য। বিষয়টি তাঁদের গোচরে আসার পরই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে শুরু করেন তিন বিচারক।
আরও পড়ুন, ‘একজনও জুনিয়র সাসপেন্ড হলেও আমরা ওপিডি ওয়ার্ক তুলে নেব’, কড়া বার্তা সিনিয়র চিকিৎসকদের
এরপরের অভিযোগ আরও মারাত্মক। বিচারকদের দাবি, ওই ব্যক্তিকে আবাসনের আশেপাশে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে রাত ১টা ১৩ মিনিটে ডায়মন্ড হারবার থানার আইসি-কে ফোন করেন অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট। কিন্তু অভিযোগ, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আসেনি। এদিকে মুখ ঢাকা ওই দুষ্কৃতী সন্দেহজনকভাবে তখনও ঘোরাফেরা করে যাচ্ছে আবাসনের বাইরে। এই অবস্থায় রাত ১টা ২২ মিনিটে ফের আইসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন ACJM। তারও ২০ মিনিট পরে পুলিশ কর্মীদের নিয়ে বিচারকদের আবাসনে পৌঁছন আইসি।
বিচারকরা লিখেছেন, চলাফেরা দেখে তাঁদের আশঙ্কা যে ওই দুষ্কৃতী কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র থাকার সম্ভাবনা ছিল। কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ আসার পর নড়চড়ে বসে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে একজনকে গ্রেফতার করেছে ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ।
হাইকোর্ট সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে বিচারকদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তাদের আবাসনে রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত পিকেটিংয়ের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় FIR দায়ের হয়েছে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে
আরও দেখুন