ডিয়ার জিন্দগি: মগজ না, হৃদয় দিয়ে ভাবা যাক

Estimated read time 1 min read
0 0
Listen to this article
Read Time:9 Minute, 57 Second


যে কোনও ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে এগোনোর অভ্যেস ভাল। যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মগজের উপর আস্থা রাখাতেও কোনও দোষ নেই। কিন্তু শুধুই মগজ আর বুদ্ধিকেন্দ্রিক ভাবনা-চিন্তায় অভ্যস্ত হয়ে পড়লে সমস্যা বিস্তর। আসলে সব ব্যাপারে সবার আগে বুদ্ধি আর মগজের ব্যবহার করতে করতে আমরা যন্ত্রে পরিণত হয়ে পড়ি। এর ফলে সব ব্যাপারেই আমরা ‘অঙ্ক’ কষি এবং খুঁজি। ফলে জীবনটা নেহাত ‘হিসাব’ হয়ে দাঁড়ায়। আর জীবনের এই হিসাবে যাঁকে বেমানান বলে মনে হয়, তাঁকেই আমরা অবলীলায় ছেঁটে ফেলি। তবে মনে রাখবেন, আধুনিক জীবনযাত্রার এই হিসাবি মানসিকতায় কিন্তু বাবা-মায়েরাই সব থেকে বেশি বেমানান হয়ে পড়তে পারেন।

এই ব্লগটি হিন্দিতে পড়ুন डियर जिंदगी : बुद्धि से ‘बाहर’ आने की जरूरत

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, কারও সঙ্গে গল্প করা, এসব ব্যাপারগুলো এখন অনেক বেশি হিসেবকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। ছেলেমেয়েরা বড় হতে না হতেই যেন বড় বেশি হিসেব নিকেশে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়ের সম্পর্কটাও আজকাল বড্ড প্রয়োজন নির্ভর। দূর দেশে ‘প্রতিষ্ঠিত’ হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়ের কাছে বাবা-মায়ের উপস্থিতি তাই শুধু ফোন বা ভিডিও কলে। দূর দেশের কথা ছাড়ুন, এমনও অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা দেশে থেকেও বাবা-মায়ের সঙ্গে বিদেশের দূরত্ব বজায় রাখেন।
প্রতি চার মাস অন্তর উইকেন্ড ‘পালন’ করতে যাওয়া পরিবারে বয়স্করা এখন ব্রাত্য। পরিবারের বয়স্কদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া তো দুরস্ত, তাঁদের সঙ্গে দুটি দিন একসঙ্গে কাটানোর মতো সময়ও নেই যুবসমাজের। সবাই নিজের কাজ, ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই অতি ব্যস্ত। 

ডিয়ার জিন্দেগি সিরিজে আমরা জীবনের কথা বলি এবং শুনি। জীবন-সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক সময় আলাপ হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের রেওয়ার এলাকার এক দল প্রবীণের সঙ্গে। সেই দলে একজন অবরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর কাছে সহজ মনে জানতে চেয়েছিলাম, ”আপনার বাড়িতে কে কে আছেন?” উনি কিছুক্ষণ খানিকক্ষণ চুপ থেকে ভারি গলায় উত্তর দিলেন, ”আমার চার সন্তান। তিন ছেলে, এক মেয়ে। চারজনই সেটেলড। তাই আমাদের কাছে আসার মতো সময় এই চারজনের কারও কাছেই নেই। আমরা স্বামী-স্ত্রী সব সময় নিজেদের মধ্যে কী কথা বলব বুঝতে পারি না। কোনওরকমে জীবন কাটাচ্ছি। একাকিত্ব আর অন্তহীন অপেক্ষা এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়েছে।”

জীবনযাপনের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা গ্রামে সব সময় পাওয়া যায় না। রোজগারের পথও সুগম নয় সেখানে। সব মিলিয়ে গ্রামাঞ্চলে ‘জীবন বিকাশে’র সম্ভাবনাও অনেক কম। ফলে গ্রামগুলো দিন দিন যেন শুনশান গলিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। সেই শুনশান গলিতে বাচ্চা বা যুবসমাজের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। একাকিত্বের মূর্ত প্রতীক হয়ে কেবল পড়ে থাকছেন কিছু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। শুনশান গ্রামগুলো এখন বয়স্কদের কাছে অন্ধকার বৃত্তের মতো। যেখানেই সারাদিন, সারারাত শুধু অন্ধকার আর একাকিত্ব নিয়ে ‘বেঁচে আছেন’ তাঁরা। আর ছেলেমেয়েরা নিজের জীবন সাজাতে, নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত। আর সেই ব্যস্ততা এতটাই তীব্র যে সন্তানরা তাদের জীবনে বৃদ্ধ বাবা-মার উপস্থিতি কার্যত টেরই পাচ্ছে না। আসলে আমরা সবাই মিলে একাকিত্বের একটা চক্রব্যুহ তৈরি করছি। নিজেরাই বুঝতে পারছি না, একদিন আমরা সবাই সেই চক্রব্যুহে অবধারিতভাবে বন্দি হয়ে যাব।

যে কাঁধে পা রেখে আমরা সাফল্যের সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি, আজ সেই কাঁধগুলোই দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমরা নিজেদের কাঁধ তাদের ভর দেওয়ার জন্য এগিয়ে দিচ্ছি না। কেরিয়ারেরর পিছনে ছুটতে ছুটতে, সাফল্যের সাপ-লুডো খেলায় নেমে আমরা নৈতিকতার পাঠ ভুলেছি। পরের প্রজন্মকেও আমরা এমন শিক্ষা দিচ্ছি, যাতে নৈতিকতার কোনও জায়গাই নেই।

আদতে মানুষ ও মানবিকতা থেকে আমরা ক্রমশ দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলছি। বড়দের সঙ্গে অন্যায় করছি তো বটেই, সেই সঙ্গে নিজেদের জন্যও এমন একটা রাস্তা তৈরি করছি যেটা একাকিত্ব আর শূন্যতার চোরাগলিতে গিয়ে মেশে। তাই, সাধু সাবধান…

লেখক জি নিউজের ডিজিটাল এডিটর

(https://twitter.com/dayashankarmi)

লেখাসংক্রান্ত মতামত জানান এখানে 

অনুলিখন : সুমন মজুমদার, জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল

 





Source link

About Post Author

JagoronBarta

জাগরণ বার্তা হল একটি অগ্রণী অনলাইন সংবাদ পোর্টাল যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে নিরপেক্ষ, সঠিক এবং সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা বাংলার প্রকৃত কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
JagoronBarta http://www.jagoronbarta.com

জাগরণ বার্তা হল একটি অগ্রণী অনলাইন সংবাদ পোর্টাল যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে নিরপেক্ষ, সঠিক এবং সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা বাংলার প্রকৃত কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

You May Also Like

More From Author

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *