কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: সম্মুখ সমরে টেকনিসিয়ান ও পরিচালক সংগঠন। টালিগঞ্জে বন্ধ শ্যুটিং। এবার ফ্লোরে নেই পরিচালকরা। টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায় সকাল থেকে ফ্লোরে দেখা নেই পরিচালকদের। শ্যুটিং-এর কল টাইম থাকায় সকাল ১০টার মধ্যে অভিনেতা, অভিনেত্রী থেকে শুরু করে মেকআপ আর্টিস্ট, অনেকেই স্টুডিওয় চলে আসেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিচালকদের দেখা মেলেনি। পরিচালক সৃজিত রায়ের সেট অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখাকে কেন্দ্র করে টেকনিসিয়ানদের সঙ্গে পরিচালকদের সংঘাত তুঙ্গে। অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে শ্যুটিং ফ্লোরে না আসার সিদ্ধান্ত নেন পরিচালকরা। মুখ্যমন্ত্রীর কথাও মানছে না ফেডারেশন, অভিযোগ ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার। যদিও এবিষয়ে এখনও মুখে কুলুপ ফেডারেশনের। এবার এই বিষয় নিয়েই মুখ খুলেছেন টলিউডের অভিনেতা পরিচালক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী (Chiranjeet Chakrabort)।
বার বার বন্ধ হচ্ছে শ্যুটিং, এর সমাধানসূত্র কী? চিরঞ্জিৎ বলছেন, ‘এর সমাধান সবার মতো আমিও খুঁজছি। ফেডারেশনের কী কোনও একটা ফর্ম নেই? যেখানে গেলে আমরা জানতে পারব এটা করা যায় না বা এটা করা যায়। এত ছোট একটা ইন্ডাস্ট্রি.. প্রভাস বা অল্লু অর্জুন একটা ছবিতে যে রোজগার করে, ১০০ কোটি, সেটা আমাদের পুরো ইন্ডাস্ট্রির বাজেট। সেটাও ১০০ টা ছবি হলে। গতবছর তো মাত্র ৩৫টা ছবি হয়েছে। পরিচালক রাহুল৪কে বয়কট করা নিয়ে গতবছর একটা সমস্যা হয়েছিল, যতদূর খবর পাচ্ছি, সেই রাহুল নাকি এখনও একটাও কাজ পায়নি। তাঁকে কেউই কাজ দিচ্ছে না। সেটা একটা দুর্ঘটনা, একটা দুঃখের কথা। শিল্প বা শিক্ষা, যে কোনও জায়গাই যদি রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সেটা অনভিপ্রেত। আমরা কেউ সেটা চাই না। এটা বড় কোনও ফোঁড়া নয়, এটা একটা ছোট ব্রণ যেটা বার বার ফিরে আসছে। শুধু ডিরেক্টরস গিল্ড নয়, শিল্পীদের সবাইকে জড়ো হতে হবে, বসতে হবে। তবে হয়তো আমরা কোনও সমাধান পেতে পারি।’
ফেডারেশনের মাথাতেই তো বসে রয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সেক্ষেত্রে? চিরঞ্জিৎ বলছেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে কোনও কথা হয় না। কোনও কলেজের প্রিন্সিপালেরও রাজনৈতিক মতামত থাকতে পারে। সেটা নিয়ে উত্তেজনা নয়। তবে বৃহৎ রাজনীতিতে ঢুকে পড়লে মুশকিল হবে। বড় রাজনীতির ক্ষেত্রটা যদি এখানে ঢুকে পড়ে, তাহলেই মুশকিল। রাজনীতি টলিউডে প্রবেশ করুক, সেটা যে পক্ষেই করুক, আমরা সেটা চাইব না। মমতাদি গতবার সমাধান করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তার পরেও সেই ছেলেটা এখনও কাজ পায়নি। এটা খুব দুঃখের। আমি চাই তিনি একবার সিরিয়াসলি বসে বিষয়টা দেখুন, ভাবুন। তিনি ডাকলে কেউ যাবেন না তা তো হতে পারে না। তিনি যদি বসে একবার একটু কথা বলে নেন।’
মুখ্যমন্ত্রী তো কমিটি গড়ার কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেই কমিটি তো কাজই শুরু করেনি। চিরঞ্জিৎ বলছেন, ‘হ্যাঁ আমি জানি তো সেটা করেনি। জানি না কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে। সেটার জন্য আমি আবেদন করব, নিবেদন করব একজনকেই যিনি সব পারেন। আমাদের একটা ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রি। আমরা তো আর বিজনেস সামিটে গিয়ে বলতে পারি না আমাদের কোটি কোটি টাকা দাও। এভাবে তো হয় না। তিনি সেখানে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্ভাবনা তৈরি করছেন। তাহলে এই যে ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রি, যে সারা ভারতবর্ষে বাংলার নাম উজ্জ্বল করেছে, এই জায়গা থেকেই সত্যজিৎ, মৃণাল সবাই এসেছে, এই ইন্ডাস্ট্রিটাকে একটু দেখতে হবে।’
ফেডারেশনের মাথায় যিনি বসছেন, তাঁর কি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না হওয়াই ভাল? চিরঞ্জিৎ বলছেন, ‘অবশ্যই। এক্ষেত্রেও তাই, সব ক্ষেত্রে তাই। কোনও জায়গাতেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের থাকা উচিত নয়। ফেডারেশন কেন, ডিরেক্টরস গিল্ডের মাথাতেও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকার কথা নয়। আর্টিস্ট ফোরামেরও থাকার কথা নয়। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাথায় না থাকলেও আমরা সবাই বসে একমত হতে পারছি। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাথায় থাকলে মানুষ নিজের মতটা জাহির করতে ভয় পায়। সমস্ত ইন্ডাস্টিটাকে বন্ধু হিসেবে চলতে হবে। নাহলে আমরা খুবই দুর্দশার মধ্যে রয়েছি। একটা ইন্ডস্ট্রিতে একটা সময়ে ৬০ কোটি ইনভেস্টমেন্ট হত, সেখান থেকে আমরা এখানে পৌঁছে গেলাম কী করে? এটা তো একটা চিন্তার বিষয় বটেই, তার ওপরে আবার এইসব ছোটখাটো সমস্যা।’
আরও পড়ুন: Aindrila Sharma Mother: ফের ক্যানসার আক্রান্ত ঐন্দ্রিলা শর্মার মা শিখা, ভর্তি হাসপাতালে
আরও দেখুন
+ There are no comments
Add yours