নয়াদিল্লি: পৃথিবীর বাইরে পরস্পরের বাণিজ্যসঙ্গী হয়ে উঠল চিন এবং রাশিয়া। চাঁদের বুকে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে চুক্তি স্বাক্ষর করল তারা। চাঁদের মাটিতে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার কাজ চালাতেই সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত। চাঁদের উপর গবেষণা চালাতে International Lunar Research Station গড়ে তুলবে চিন ও রাশিয়া, যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র। (Power Plant on Moon)
চিন ও রাশিয়া যে মউ স্বাক্ষর করেছে, সেই অনুযায়ী ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্য়মাত্রা রাখা হয়েছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA চাঁদের কক্ষপথে মহাকাশঘাঁটি তোলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালের বাজেটে তাদের সেই প্রস্তাব বাদ গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার প্রকল্পে অনুমতি দিতে নারাজ বলে খবর। আর তার পরই চাঁদের মাটিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে হাত মেলাল চিন ও রাশিয়া। (China-Russia Lunar Project)
জানা গিয়েছে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চাঁদের মাটিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হবে। অর্থাৎ নির্মাণকার্যে মানুষের কোনও হাত থাকবে না। ২০২৪ সালেই এ নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ROSCOMOS-এর ডিরেক্টর জেনারেল ইউরি বরিশভ। তাঁদের প্রস্তুতি প্রায় সারা হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন।
International Lunar Research Station হয় চাঁদের মাটিতেই গড়ে তোলা হবে, অথবা চাঁদের কক্ষপথে। আর সেখানে বিদ্যুতের জোগান অব্যাহত রাখতে চাঁদের মাটিতে বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা। বরিশভ জানান, দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার জন্য এই প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে চাঁদের মাটিতে মানুষের দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতির জন্য একরকম অপরিহার্য।
চাঁদের মাটিতে যদি International Lunar Research Station গবেষণাকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়, সেক্ষেত্রে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে বাছা হতে পারে। এখনও পর্যন্ত ১৭টি দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ওই প্রকল্পে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে মিশর, পাকিস্তান, ভেনিজুয়েলা, তাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। চিনের Chang’e-8 অভিযানই চাঁদের মাটিতে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবে বলে জানা যাচ্ছে। ২০২৮ সালে Chang’e-8 অভিযানের আওতায় চাঁদে প্রথমবার মানুষ অবতরণ করাবে চিন।
২০২১ সালের জুন মাসে প্রথম International Lunar Research Station গড়ে তোলার কথা সামনে আসে। ২০৩০ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে সেই মতো পৃথিবী থেকে জিনিসপত্র পাঠানো হবে বলে জানায় চিন ও রাশিয়া। রেডিওআইসোটোপ, নিউক্লিয়ার জেনারেটর এবং সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা জানানো হয় যেমন, তেমনই চাঁদের বুকে কমিউনিকেশন নেটওয়র্ক গড়ে তোলার কথাও বলা হয়। চাঁদের মাটিতে যান চলাচলের ব্যবস্থা করাও লক্ষ্য।
চন্দ্রাভিযান নিয়ে চিন ও রাশিয়া হাত মেলানোয় NASA-র উদ্বেগ বাড়ল। ট্রাম্প সরকারের আমলে তাদের একাধিক প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেই আবহে চিন এবং রাশিয়া একজোট হয়ে তাদের মাত দিতে চাইছে কি না, উঠছে প্রশ্ন। মহাকাশ অভিযানকে ঘিরে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আমেরিকার রেষারেষি সর্বজনবিদিত। নতুন করে ফের সেই অবস্থা ফিরতে চলেছে বলেও উদ্বিগ্ন কেউ কেউ।
আরও দেখুন