বেজিং: একতলা বা দোতলা নয়, ২৫ তলা থেকে পড়ে গিয়েও রক্ষা পেল ন’বছরের মেয়ে। এই ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে পড়শি দেশ চিনে। খেলতে খেলতে বহুতলের ২৫ তলা থেকে পড়ে যায় মেয়েটি। কিন্তু সামান্য হাড়ভাঙা ছাড়া মারাত্মক ক্ষতি হয়নি। মেয়েটির বেঁচে ফেরা অলৌকিক ঘটনা ছাড়া কিছু নয় বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ মেয়েটিকে ‘Miracle Girl’ বলছেন। (Viral News)
চিনের হুবেই প্রদেশের তাংশান থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, বহুতল আবাসনের ২৭ তলায় বাস মেয়েটির পরিবারের। গত ২৭ মার্চ নিজের ঘরেই ছিল মেয়েটি। একটি শেলফের উপর চড়ে জানলা খোলার চেষ্টা করছিল। বুঝতে পারেনি জানলার বাইরের কাঠামো আলগা হয়ে গিয়েছে। ফলে জানলার উপর চাপ দিতে গিয়ে নিজেও বাইরে পড়ে যায়। (China News)
চিনা সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২৫ তলা থেকে পড়ে যায় মেয়েটি। কিন্তু সটান নীচে পড়ার পরিবর্তে ৭ তলার একটি আবাসনের বর্ধিত প্ল্যাটফর্মে গিয়ে পড়ে মেয়েটি। অর্থাৎ ২৫ তলা থেকে একেবারে নীচে না পড়ে, ১৮ তলা নীচে পড়ে যায়। কিন্তু তাতেও সাধারণত বাঁচার কথা নয়। মেয়েটি কী করে বেঁচে গেল প্রশ্ন তুলছেন সকলে।
চিনা সংবাদমাধ্যম মেয়েটির নাম প্রকাশ করেনি। তবে পদবী উল্লেখ করেছে, Shen. মেয়েটির মা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর স্বামী বাড়িতে ছিলেন যদিও। কিন্তু মেয়ে পড়ে গিয়েছে বুঝতে পারেননি। বরং মেয়েকে ঘরে না পেয়ে স্ত্রীকে ফোন করেন তিনি। ওই মহিলার বক্তব্য, “নিজের ঘরে হোমওয়র্ক করার কথা ছিল মেয়ের। তাকে খেতে ডাকতে গিয়েছিল বাবা। কিন্তু ঘরে মেয়ে ছিল না। জানলা দিয়ে ঝুঁকে নীচেও তাকায় আমার স্বামী। কিন্তু একজোড়া চপ্পল ছাড়া কিছু দেখতে পায়নি।”
ওই মহিলা জানিয়েছেন, মেয়ে পড়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে মাথাতেও আসেনি তাঁদের। আবাসনের ম্যানেজার ফোন করে বিষয়টি জানান তাঁদের। সাততলার বর্ধিত প্ল্যাটফর্মে মেয়েটি পড়ে গিয়েছে বলে জানানো হয়। জানা যায়, সাততলার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা কিছু পডডার শব্দ শোনেন। বাইরে গিয়ে মেয়েটিকে দেখেন তিনি। পড়ে যাওয়ার পর কয়েক পা হেঁটে এগিয়ে যায় মেয়েটি, তাই উপর থেকে বাবা দেখতে পাননি বলে জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, কয়েক পা হাঁটলেও, তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করে মেয়েটি। ফলে প্ল্যাটফর্মের উপর শুয়ে পড়ে সে। সেই অবস্থাতেই তাকে দেখতে পায় প্রতিবেশীরা। মুখ ও কানের কাছে রক্ত লেগেছিল। ফুলে গিয়েছিল চোখ। রক্ত জমে গিয়েছিল। কিন্তু জ্ঞান ছিল টনটনে। মা ছুটে যেতেই কেঁদে বলে ওঠে, “আমাকে বাঁচাও।”
কিন্তু সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে কম হয়রানির শিকার হতে হয়নি মা-বাবাকে। জানা গিয়েছে, ২৫ তলা থেকে পড়ে গিয়েছে শুনে স্থানীয় শিশু হাসপাতাল মেয়েটিকে ভর্তি নিতে চায়নি। আর দেরি না করে ২০০ কিলোমিটার দূরে বেজিং চিলড্রেনস হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে ছোটেন মা-বাবা। সেখানে পরীক্ষা করে দেখা যায়, মেয়েটির হাতের হাড়ে চিড় ধরেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চোখের উপরের হাড় এবং শিরদাঁড়ার মাঝামাঝি অংশ। কিন্তু মস্তিষ্কে আঘাত লাগেনি।
এর পর হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় মেয়েটির। ১০ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় সে। এপ্রিলের শেষে ফের হাসপাতালে যাওয়ার কথা। সেখানে ফের পরীক্ষা করে দেখা হবে। মেয়েটির মা জানিয়েছেন, “ফোনে গোটা ঘটনা শুনে অজ্ঞান হয়ে যান আমার শাশুড়ি। তবে এখন ঠিক আছে মেয়ে। কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি। এত উপর থেকে পড়ে যাওয়ার পরও মেয়েকে ফিরে পেয়েছি। সকলে বলছেন, ঈশ্বর ওকে রক্ষা করেছেন।”
তথ্যসূত্র: South China Morning Post
আরও দেখুন