কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষ ঘটিয়ে মিলল অক্সিজেন, রকেটের জ্বালানি, অসামান্য সাফল্য পেল চিন
নয়াদিল্লি: মহাকাশ অভিযানে একের পর এক মাইলফলক তৈরি করে চলেছে চিন। এবার প্রকৃতির হিসেব নিকেশই পাল্টে দিলেন চিনের বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম উপায়ে মহাকাশে সালোকসংশ্লেষ ঘটিয়ে নজির তৈরি করলেন। তাঁদের এই সাফল্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে মহাকাশ বিজ্ঞানের জগতে। মহাকাশে গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ এই কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া। (Artificial Photosynthesis in Space)
মহাকাশ গবেষণার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজস্ব স্পেস স্টেশন গড়েছে চিন, যার নাম Tiangong. সেখানেই পৃথিবীর চারিদিকে পাক খেতে খেতে কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষ ঘটিয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন চিনের বিজ্ঞানীরা। Shenzhou 19 অভিযানের আওতায় এই অসাধ্যসাধন হয়েছেন। কৃত্রিম উপায়ে সালোকসংশ্লেষ ঘটিয়ে অক্সিজেন উৎপন্ন করেছেন চিনা বিজ্ঞানারী। পাশাপাশি, রকেটের জ্বালানি তৈরির উপাদানও তৈরি করে ফেলেছেন। (Science News)
২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদের মাটিতে মানুষ নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে চিনের। তার আগে কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদন করে মাইলফলক তৈরি করেছে তারা। পৃথিবীতে সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে উদ্ভিদ যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জল ব্যবহার করে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ উৎপন্ন করে, কৃত্রিম উপায়ে সালোকসংশ্লেষ ঘটিয়ে চিনা বিজ্ঞানীরা অক্সিজেন এবং ইথিলিন তৈরি করেছেন। এই ইথিলিন রকেটের জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ড্রয়ারের মতো একটি যন্ত্র এবং অর্ধপরিবাহী অনুঘটকের মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধন হয়েছে।
গত ১৯ জানুয়ারি চিনা সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞানীদের এই সাফল্য উদযাপন করা হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদের অনুরূপ সালোকসংশ্লেষ ঘটানো সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর বাইরে, মহাকাশের বুকে অক্সিজেন এবং মহাকাশযানে ব্যবহৃত জ্বালানির উপাদান তৈরিতেও সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই সাফল্য আগামী দিনে মহাকাশ অভিযানে বিজ্ঞানীদের সহায়ক হবে বলে মত চিনা সংবাদমাধ্যমের।
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইডকে রূপান্তরিত করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে চিন। চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা China Manned Space Agency (CMSA) জানিয়েছে, মহাকাশে মানুষ পাঠানোর আগে এই পরীক্ষা ফলদায়ক হয়ে উঠবে।
এর আগে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে সালোকসংশ্লেষের পরীক্ষা চালানো হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে চালানো হয় ওই পরীক্ষা। কিন্তু হংকংয়ের সংবাদমাধ্যমের দাবি, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে সৌরশক্তি ব্যবহার করে জলকে ভেঙে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন তৈরি করা হয়, যাতে মহাকাশচারীরা শ্বাস নিতে পারেন। কিন্তু তাতে বেশি শক্তির অপচয় হয়। দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বাস্তবসম্মত নয়। চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহে দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে যেতে হলে কৃত্রিম উপায়েই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। মহাকাশ অভিযানে পৃথিবীর উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হলে, সেখানে প্রাপ্ত উপাদানকে কাজে লাগিয়েই সমাধান বের করার পক্ষে চিনা বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশ অভিযানে আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে চিনের Tiangong. দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেই গবেষণার কাজ চালাতেন চিনা বিজ্ঞানীরা। কিন্তু দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতার জেরে সেখানে তাঁদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরই নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় চিন। গত দু’বছর ধরে মহাকাশে সক্রিয় চিনের স্পেস স্টেশন। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসেই সম্পূর্ণ ভাবে কার্যকর হয়ে ওঠে সেটি।
আরও দেখুন