কলকাতা: আর জি কর মেডিক্যালে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে একযোগে ১৫টি জায়গায় হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI. প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠ, আর জি কর মেডিক্যালের ফরেন্সিক মেডিসিনের অধ্যাপক দেবাশিস সোম, হাসপাতালের মেডিক্যাল সাপ্লায়ার বিপ্লব সিংহের বাড়ি, আর জি কর হাসপাতাল ছাড়াও বেশ কয়েকটি সংস্থার অফিসেও তল্লাশি চলছে। কলকাতা, হাওড়া-সহ ১৫টি জায়গায় চলছে CBI অভিযান। (RG Kar CBI Raids)

রবিবার সাতসকালে প্রথমে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে পৌঁছয় CBI. কলং বেল বাজিয়ে, দরজা ধাক্কা দিয়ে, ফোন করে চলে ডাকাডাকি। এমনিতে দরজা না খুললে, কী করা যেতে পারে, সেই নিয়েও চলে শলা-পরামর্শ। বেলেঘাটা থানাতেও যান দুই আধিকারিক। সওয়া একঘণ্টা পর নিজেই দরজা খোলেন আর জি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ। এর পর বাড়ির ভিতর ঢুকে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। CBI-এর এই দলে রয়েছেন মহিলা আধিকারিকও। নিরাপত্তার খাতিরে এলাকা ঘিরে রেখেছে CISF. সন্দীপ ঘোষের বাড়ির বাইরে আগে থেকেই মোতায়েন রয়েছে কলকাতা পুলিশের একটি দল। (RG Kar Corruption Case)

আর জি কর মেডিক্যালে পড়ুয়া-চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ছাড়াও হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে CBI. আর্থিক অনিয়ম-মামলায় গতকাল প্রথম FIR দায়ের করে তারা। গতকাল সন্দীপ ঘোষকে ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। গত ৯ দিনে ১০০ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আর জি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে। 

এর পাশাপাশি, আজ সকালে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি দল পৌঁছয় আর জি কর হাসপাতালে। সেখানে তিনটি দলে ভাগ হয়ে তদন্ত চলছে। 
প্ল্যাটিনাম জুবিলি বিল্ডিংয়ে অধ্যক্ষের অফিসে যায় CBI-এর একটি দল। রবিবার হওয়া সত্ত্বেও গাড়ি পাঠিয়ে আনা হয় নতুন অধ্যক্ষ ও নবনিযুক্ত উপাধ্যক্ষকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। CBI-এর দ্বিতীয় দল উপাধ্যক্ষের অফিস ও তৃতীয় দলটি অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ে পড়ুয়াদের ক্যান্টিনে যায়।

আর জি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠের এন্টালির ফ্ল্যাটেও রয়েছে CBI. হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি সন্দীপের আমলে হাসপাতালে একগুচ্ছ দুর্নীতির অভিযোগ করেন। সেই সময়ে আর জি কর মেডিক্যালের সুপার ও উপাধ্যক্ষ ছিলেন সঞ্জয়। সেই কারণেই আজ এন্টালিতে সঞ্জয়ের ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছে CBI. প্রাক্তন সুপারকে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।

কেষ্টপুরে আর জি কর মেডিক্যালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক দেবাশিস সোমের বাড়িতেও কেন্দ্রীয় সংস্থা। ভিজিল্যান্সের কাছে আর জি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতারের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত। গতকালই সন্দীপ ঘোষের জমানায় হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম FIR দায়ের করে CBI.

আজ হাওড়ার সাঁকরাইলের হাটগাছায় হাসপাতালের সাপ্লায়ার বিপ্লব সিংহর বাড়িতেও পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। আর জি কর হাসপাতালে মেডিক্যাল সরঞ্জাম সরবরাহ করতেন বিপ্লব। অভিযোগ ওঠে, সন্দীপ ঘোষের জমানায় বারবার টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হত বিপ্লবের সংস্থাকে। টেন্ডার পাওয়ার নেপথ্যে আর্থিক লেনদেন ছিল কি? CBI-এর প্রশ্নের মুখে বিপ্লব। 

আর জি কর হাসপাতালে আর্থিক অনিয়ম নিয়ে প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলির করা ১৫টি অভিযোগ খতিয়ে দেখছে CBI. এর মধ্যে রয়েছে, সরকারি অর্থের অপচয়ের অভিযোগ, স্বাস্থ্য ভবন এবং কলেজ কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া সরকারি সম্পত্তি বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনকে দেওয়ার অভিযোগ, খাবারের স্টল, ক্যাফে, ক্যান্টিন, সুলভ কমপ্লেক্সের মতো জায়গা টেন্ডার না ডেকেই বণ্টন করার অভিযোগ, হাসপাতালে কাজের টেন্ডার দেওয়ায় স্বজনপোষণের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকার টেন্ডার নির্দিষ্ট কয়েকজনকে দেওয়া, এই তালিকায় অযোগ্যরাও আছেন বলে অভিযোগ।

এছাড়াও, হাসপাতালের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ২০ শতাংশ হারে ঘুষ নেওয়া, মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে বরাদ্দ টাকা নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের বায়োমোডিক্যাল বর্জ্য বেআইনিভাবে বাইরে বিক্রি করার অভিযোগ, কলকাতা পুরসভাকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন বেনামি ব্যবসা চালানোর অভিযোগ, হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ, জিম এবং নিজের চেম্বারের সৌন্দর্যায়নের জন্য কোভিড ফান্ডের অপব্যবহারের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে বেআইনিভাবে চিকিৎসক-অফিসারদের বদলি-সহ নানা রকম অনিয়মের অভিযোগও এনেছেন আখতার। 

আরও দেখুন



Source link

Shares:
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *