কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান : ছিল প্রাণ যাওয়ার ঝুঁকি ! কিন্তু, বিরল অস্ত্রোপচারে সাফল্য পেল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চার ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য এনে তরুণীকে নতুন জীবন দিল এই হাসপাতাল। এই অপারেশনকে রাজ্যের মধ্যে বিরল বলে দাবি করছেন বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসকরা। হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক ডাঃ এন সি কর্মকারের নেতৃত্বে জটিল এই অপারেশন সম্ভবপর করে তোলে হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক দল।
বর্ধমান হাসপাতালে সুপার তাপস কুমার ঘোষ জানান, হাইডাটিড সিস্ট (Hydatid Cysts) কমন একটি রোগ হলেও, এক্ষেত্রে ইনট্রাপেরিটোনিয়াল বা পেটগহ্বরের মধ্যে এই ধরনের হাজারেরও বেশি তরলপূর্ণ সিস্ট থাকা একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। যার ফলে এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। শুধু তাই নয়, যেহেতু তরুণী অবিবাহিত, তাই তার মাতৃত্ব রক্ষার স্বার্থে জরায়ুর প্রতিও বিশেষ নজর রাখতে হয়েছিল। এই অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল… যেহেতু হাজারেরও বেশি তরলপূর্ণ সিস্ট শরীরে ছিল তাই যে কোনো একটি সিস্ট ফেটে গেলে সেই সিস্ট থেকে নির্গত তরলের ফলে যে কোনো মুহূর্তে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারত। এমনকী রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। তাই এ বিষয়গুলির উপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে অ্যানাস্থেসিয়ার যাঁরা ডাক্তার ছিলেন তাঁদেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হয়েছিল। সাধারণ ক্ষেত্রে এই ধরনের অস্ত্রোপচার বিরল না হলেও, যেহেতু পেটগহ্বরে হাজারের বেশি এই ধরনের সিস্ট ছিল তাই এটি যেমন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তেমনি রাজ্যের বুকে এই ধরনের অস্ত্রোপচারের সংখ্যাও খুব সীমিত বা বিরল। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রেও এই ধরনের অস্ত্রোপচারের পূর্বের কোনো নজির নেই। স্বভাবতই বর্ধমান মেডিক্যালের ক্ষেত্রে এটি একটি অভূতপূর্ব সাফল্য এ কথা বলা যেতে পারে। বর্তমানে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ১৮-র এই যুবতী বিগত ছয় মাস ধরে পেট ফুলে যাওয়া সহ নানান শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত তিন মাসে সেটি আরও মারাত্মক আকার ন্যায় এবং একপ্রকার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। গত ২ মে এই উপসর্গ নিয়ে তিনি বর্ধমান হাসপাতালে আসেন চিকিৎসার জন্য। এখানে কিছু জরুরি পরীক্ষার পর দেখা যায়, তরুণীর সমগ্র পেটগহ্বরজুড়ে ছোট ছোট বেলুনের মতো তরলপূর্ণ হাজারেরও বেশি সিস্ট রয়েছে। এরপরেই হাসপাতালের তরফে শল্য চিকিৎসক এন সি কর্মকারের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয় এবং কীভাবে সফল অস্ত্রোপচার সম্ভব তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পরে ১৪ মে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এরপরই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যুবতীর পেটগহ্বরের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজারেরও বেশি তরলপূর্ণ সিস্ট বের করা হয়।
বর্ধমান হাসপাতালের আর এক শল্য চিকিৎসক এন এস জমাদার বলেন, “মূলত সংক্রমিত তৃণভোজী প্রাণী থেকে টেপওয়ার্ম জাতীয় পরজীবীর লার্ভা মানুষের শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে এই ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। যার ফলে লিভার, ফুসফুস সহ অন্যান্য অঙ্গে এই ধরনের সিস্ট তৈরি হয়। তবে এক্ষেত্রে লিভার, ফুসফুস বা অন্যান্য অঙ্গ ছাড়াও রোগীর সমস্ত পেটগহ্বর জুড়ে এই ধরনের সিস্ট তৈরি হয়েছিল, যা সংখ্যায় হাজারেরও বেশি। তাই এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।”
আরও দেখুন