কলকাতা: ধস-কাণ্ডের পর শুভেন্দুর অধিকারীর সফর, বিজেপির বিক্ষোভ ঘিরে হাওড়ায় তৈরি হল ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। আর বিরোধী দলনেতা যখন হাওড়ায় দাঁড়িয়ে সপ্তমে সুর চড়ালেন, তখন কুকথা নিয়ে সমালোচনার মুখেও দিলীপ ঘোষ বুঝিয়ে দিলেন, তিনি অনড় তাঁর অবস্থানেই!
প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, বিতর্ক দিলীপ কে নিয়ে হবে না তো কাকে নিয়ে হবে? আমাকে তোমারই হিরো বানিয়েছ। বিতর্ক বললে টিআরপি বাড়ে নেতারা ভোট বাড়ে। সেইজন্য দিলীপ ঘোষকে নিয়ে তরপায়। শুক্রবার খড়গপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তা উদ্বোধন করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন দিলীপ ঘোষ। এরপরই মেজাজ হারান তিনি।
গত শুক্রবার মেদিনীপুর বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, এই ৫০০ টাকার চাকররা এরা কিছু করতে দেয় না। ঘেউ ঘেউ করে। কাজ করে উদ্বোধন করছি, আবার ঘেউ ঘেউ করছে? প্রাক্তন নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের সঙ্গে চরম বচসায় জড়িয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ! আর এই ঝগড়া ঝাটির মাঝেই বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য় সভাপতির গলায় উঠে এসেছিল বিতর্কিত নানা শব্দ!দিলীপ ঘোষের মুখের ভাষার তীব্র সমালোচনা করে তৃণমূল।
মহিলাদের প্রতি দিলীপ ঘোষের এহেন মন্তব্যের সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে তিনি যে এক বিন্দু সরতে নারাজ, এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তা বুঝিয়ে দিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ। দিলীপ ঘোষ বলেন, কোন বেটা বলেছে সমাজ ব্য়বস্থা আমি জানি না। ভারতে মহিলাকে হত্য়া করেছে কৃষ্ণ। পুতনাকে কৃষ্ণ হত্য়া করেছে। ভাবুন আজ যদি তিনি মহান হতেন তার নামে শহিদ বেদী হত। তাহলে লক্ষ্মণও তো ভিলেনও। নাক কেটেছেন মহিলার। মহিলা মানে মমতা থাকবে মাতৃত্ব থাকবে, সৌজন্য় থাকবে। শরীরে মহিলা বললে হয়ে গেল নাকি, গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে, চেঁচামেচি করে। তাদের প্রতি কে সম্মান দেবে। কোন ছোটলোক সম্মান দেবে। আমি সেখানে কী অন্য়ায় করেছি?
বিক্ষোভের মুখে পড়ে, দিলীপ ঘোষ যেভাবে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন, তাঁকে আবার সমর্থন করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।শুভেন্দু বলেন,’দিলীপদা কাল MP ল্যাডের রাস্তা উদ্বোধনে যাবেন, আপনি সেখানে দুটো মহিলা পাঠিয়ে দিয়ে তাঁকে বাধা দেবেন? যা বলেছে ঠিক বলেছে, সবার সমর্থন আছে। খবরদার চুলকাতে আসবেন না।’বিক্ষোভের মুখে পড়ে, দিলীপ ঘোষ যেভাবে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন, তাঁকে আবার সমর্থন করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ওলো সই, ওলো সই, আমার ইচ্ছা করে, তোকে মনের কথা কই – দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারীর সেটা মনের কথা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।’ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। তাঁর আমলেই বাংলা থেকে বিজেপির সাংসদ ২ থেকে বেড়ে হয় ১৮, বিধায়ক ৩ থেকে বেড়ে হয় ৭৭। বর্তমানে অবশ্য় দিলীপ ঘোষেই দলে কোনও পদ নেই। এই প্রেক্ষাপটে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন তিনি।
আরও পড়ুন, পাথরচাপুড়িতে মেলার উদ্বোধনে অনুব্রত, কেন ‘একসঙ্গে’ দেখা গেল না কাজলকে ?
আপনি বললে পার্টির লোকের অসুবিধা হয় বোধহয়? উত্তরে তিনি বলেন,’ জানি না, পার্টির থেকেও বলার চেষ্টা হয়েছে, দিলীপ দা যেন না বলে। আমি যদি বললে ভোট বাড়ে, তখন বলেছিলাম, আমি বললে ভোট কমে, তাই বন্ধ করেছি। আমি বললে, জানি না কার অসুবিধা হচ্ছে।’ আপনার কণ্ঠরুদ্ধ করছে? প্রশ্নের উত্তরে দিলীপের জবাব,’ আমার কণ্ঠ খোলাই আছে। যা ইচ্ছা বলি, কে আটকাছে?’ নির্বাচনে কী হবে – দিলীপ ঘোষ আক্রমণাত্মক হবেন, না গুটিয়ে আসবে? এই প্রশ্নেও কড়া জবাব দিলেন তিনি। বললেন,’ আমার ভূমিকা আক্রমণাত্মকই থাকবে।’দিলীপ ঘোষের কথা যখন রাজ্য় রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে, তখন জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতির বাড়ি থেকে বান্ডিল বান্ডিল পোড়া নোট উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে।
আরও দেখুন