আশাবুল হোসেন, রাজীব চৌধুরী ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : বোলপুর থানার আইসি-কে কদর্য ভাষায় গালিগালাজ করার ঘটনা সামনে আসার পর অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতারের দাবি তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। অধীর চৌধুরী বলছেন, এখনই ঘাড় ধরে থানায় ভরে দেওয়া উচিত। সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, অধস্তন অফিসারের পরিবারের সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে, পুলিশের ডিজি বসে দেখছেন! শনিবার অনুব্রতকে বোলপুর থানায় হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামান্য কমানো হয়েছে তাঁর নিরাপত্তা।
পুলিশের একজন IC-কে চুলের মুঠি ধরে বার করে নিয়ে আসার হুমকি! মা-স্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলে জঘন্য ভাষায় গালাগালি, নোংরা ইঙ্গিত! কিন্তু এতকিছুর পরও স্রেফ ৪ লাইনের ক্ষমা প্রার্থনা করে বিবৃতি! তাও আবার অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজের সাফাই দেওয়ার চেষ্টা! অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “নুরুল যে ছেলেটা আমাদের খুব ভাল ছেলে, ওর বাবা পর্যন্ত আমাদের দল করত। ওকে যখনই শুনেছি মেরে পা-হাত ভেঙে দিয়েছে আমার মনটা খুব খারাপ। তা আমি IC-কে, আমিও বলেছি, চাঁদুও ফোন করে বলেছি যে, আপনি তাড়াতাড়ি যান আগে ছেলেটাকে হসপিটালাইজড করুন। তখন উনি আমাকে একটা অন্য ধরনের কথা বলেছে, সেটা আমি আর বলতে রাজি নই। তখন আমি নিজের রাগ সামলাতে পারিনি। স্বাভাবিক আমি বলেছি। এর জন্য আমি দুঃখিত, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”
বিরোধীরা বলছে, এই দায়সারা ক্ষমা চেয়ে লাভ নেই। অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করতে হবে। প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলছেন, “আমি তো বলব ঘাড় ধরে থানায় এখনই ভরে দেওয়া উচিত। SP বাঁচাতে চাইছেন। ঘাড় ধরে থানায় ভরে দাও আগে। পুলিশকে যদি তার মাকে নিয়ে গালাগালি শুনতে হয়, সমাজ মাধ্যমে তাহলে সেই পুলিশের মর্যাদা সমাজের কাছে থাকবে কী ? মমতা ব্যানার্জি পুলিশমন্ত্রী তাঁর জবাব দেওয়া দরকার।”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, “জেলে থাকার কথা তো। আমি আপনাকে বলছি, উনি(অনুব্রত মণ্ডল) জামিন নিয়ে নেবেন। জামিন অযোগ্য ধারায় যে মামলা লাগিয়েছেন, তাতে মেডিক্যাল রিপোর্ট লাগে, আপনি মেডিক্যাল রিপোর্ট দিতে পারবেন না। আপনাকে আমি বলে দিচ্ছি উনি (অনুব্রত মণ্ডল) জামিন পাবেন আর IC বোলপুর সাসপেন্ড হবেন।”
ফোনে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দেওয়ার ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বোলপুর থানার IC লিটন হালদার। তার ভিত্তিতে সরকারি আধিকারিককে হুমকি, সরকারি কাজে বাধা, নোংরা ভাষা ব্যবহার-সহ একাধিক অভিযোগে FIR দায়ের করা হয়েছে।
বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, “আমরা এই ঘটনাতে যত স্ট্রং লিগাল অ্যাকশন নেওয়ার দরকার আছে সেটা আমরা নিচ্ছি। আইন অনুযায়ী যা যা অ্যাকশন নেওয়ার আছে, আমরা সব অ্যাকশন নেব।”
রাজ্য পুলিশের ডিজিকে টেনেই অবিলম্বে অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি দাবি করেছেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, “যে পুলিশের ডিজি তাঁর নিজের অধস্তন অফিসারের স্ত্রী এবং মায়ের ইজ্জত নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে সেটা বসে বসে দেখছেন এখান থেকে ভবানী ভবন থেকে, কান ধরে অনুব্রত মণ্ডলকে জেলের ভিতরে ঢোকাতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “পুলিশ প্রশাসন যা যা তাদের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেই বিষয়ে দলের তরফে এখন কোনো মন্তব্য করব না।”
শনিবার অনুব্রত মণ্ডলকে বোলপুর থানায় হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের অশ্রাব্য গালিগালাজের অডিও সামনে আসার পর, তাঁর নিরাপত্তা সামান্য় কমিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে ওয়াই প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে ৪টে করে গাড়ি থাকে। দুটি পাইলট কার এবং দুটি পুলিশের গাড়ি। সেই ৪টে গাড়ির মধ্যে ১টি গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে পুলিশের ১৫ জন হাউস গার্ড থাকতেন। তার মধ্যে ৫ জন হাউস গার্ডকে তুলে নেওয়া হয়েছে।
আরও দেখুন