ভাস্কর মুখোপাধ্য়ায়, আশাবুল হোসেন, উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা : পুলিশ আধিকারিককে অশ্লীল ভাষায় হুমকি দিয়ে বিতর্কে অনুব্রত মণ্ডল। দলের বার্তার পর স্রেফ একটা দায়সারা ক্ষমাপ্রার্থনা ! যা নিযে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দায়সারা এই ক্ষমাপ্রার্থনাতে কি সাতখুন মাফ হয়ে যাবে ? পুলিশকে এই ভাষায় গালিগালাজ, হুমকি দিয়েও, স্রেফ ক্ষমা চেয়ে পার পাওয়া যায় ?
থানার IC-কে কদর্য ভাষায় হুমকি ! একজন সরকারি আধিকারিককে অকথ্য় গালিগালাজ ! এমন গালিগালাজ, যা বিপ ছাড়া টেলিভিশনে সম্প্রচার করা যায় না ! অনুব্রত মণ্ডলের এই কদর্য কথোপকথন সামনে আসার পর ছিঃ ছিঃ পড়ে গেছে। প্রশ্ন উঠছে, কখন গ্রেফতার হবেন অনুব্রত মণ্ডল ? কিন্তু, এত কিছুর পর অনুব্রত মণ্ডল কী করেছেন ? দলের বার্তার পর স্রেফ একটা দায়সারা ক্ষমাপ্রার্থনা ! যা নিয়ে আবার নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, “পুলিশ বিপদে পড়লে পুলিশের পাশে আমি দাঁড়াই। পুলিশকে গাল দেওয়ার কথা আমি কোনওদিনও ভাবতেই পারি না। পুলিশকে গাল যদি কেউ দেয়, আমি তাকে অপমান করি।”
প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ বিপদে পড়লে অনুব্রত মণ্ডল পাশে দাঁড়ানোর কে ? পুলিশকে তিনি কী ভাষায় হুমকি শাসানি দেন, সেই ছবি এর আগেও এই রাজ্য়ের মানুষ দেখেছে। তারপর তিনি এটা বলেন কী করে, যে পুলিশকে গাল দেওয়ার কথা তিনি ভাবতে পারেন না ? আজ তাঁর মুখে এই কথা কেউ বিশ্বাস করবে ? এখানেই শেষ নয়। আর কী বলছেন অনুব্রত মণ্ডল? তিনি বলছেন, “পুলিশের যখনই যে কোনও SP হোক, SDPO হোক, অ্যাডিশনাল এসপি হোক, যারা আমাকে যখনই যা বলেছেন যে এটা দেখে দিন, আমি দেখে দিয়েছি।”
এখানেও প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের বিষয় দেখে দেওয়ার অনুব্রত মণ্ডল কে ? পুলিশ প্রশাসনের অংশ, আর অনুব্রত মণ্ডল প্রশাসনের কেউ নন ! তাহলে তিনি কোন এক্তিয়ারে পুলিশের বিষয় দেখেন ? যে ভাষায় তিনি IC-কে হুমকি দিয়েছেন, গালিগালাজ করেছেন, তার জন্য় কোনও ক্ষমা প্রার্থনা যথেষ্ট নয় ! কিন্তু, এরপরও অনুব্রত মণ্ডল আবার সেই সব মন্তব্য়ের জন্য় যুক্তি খাড়া করেছেন ! অনুব্রতর কথায়, “আমি খুব দুঃখিত, কারণ আমি ওষুধ খাই তো রাতে অনেক ঘুমাই। আর আমি এখন ১০টার সময় ঘুমিয়ে যাই। ঘুমের ট্যাবলেটও খাই। সেইসময় ঘুমটা ভেঙেছে। আমি নিজের রাগ সামলাতে পারিনি। স্বাভাবিক আমি বলেছি। এর জন্য আমি দুঃখিত, আমি ক্ষমাপ্রার্থী ।”
প্রশ্ন উঠছে, এইসব গালিগালাজের জন্য়ও কোনও যুক্তি হতে পারে ? কোনও বোধবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এই কদর্য ভাষা ব্য়বহার করে তার জন্য় আবার যুক্তি দিতে পারেন ? অনুব্রত মণ্ডল দুঃখপ্রকাশ করে, প্রথম যে চিঠিটি দেন, তাতে দুঃখিত বানানটি অবধি ভুল ! পরে আবার তৃণমূলের রাজ্য় সভাপতি সুব্রত বক্সীকে তিনি একটি চিঠি দেন। যেটি সমান দায়সারা।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “এর আগে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এক পুলিশ অফিসারকে…কীভাবে আক্রমণ করেছিলেন, কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? বাড়তে দিয়েছেন আপনি (মুখ্যমন্ত্রী)। পঞ্চায়েত ভোটে বলেছিলেম, ‘মারো বোম’, কিছু করেছেন আপনি(মুখ্যমন্ত্রী)? করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “ওঁকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল প্রকাশ্যে ৷ সেটা উনি দিয়েছেন প্রকাশ্যে। দল বাকিটা দেখছে।”
কিন্তু, এতেই কি সাতখুন মাফ? পুলিশকে এই ভাষায় গালিগালাজ, হুমকি দিয়েও, স্রেফ ক্ষমা চেয়ে পার পাওয়া যায়?
আরও দেখুন