নয়াদিল্লি: ভারতকে কার্যত গিনিপিগের সঙ্গে তুলনা করে বসলেন মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তি বিল গেটস। বাজারে নতুন কিছু আনার আগে, তা ভারতের উপর ঝালিয়ে নেওয়া আদর্শ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আর সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এতে পুরনো বিতর্কও উঠে এসেছে, যখন বিল গেটসের সংস্থার সাহায্যপ্রাপ্ত একটি সংস্থার টিকা পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সাত আদিবাসী কন্যার মৃত্যু হয়। (Bill Gates)
সম্প্রতি LinkedIn-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যানের সঙ্গ একটি পডকাস্ট অনুষ্ঠানে অংশ নেন গেটস। ভারতের পরিস্থিতি, উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেন, তা নিয়েই বিতর্ক দেখা গিয়েছে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “ভারত কে উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা যায়, যেখানে অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে- স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা। উন্নতি হচ্ছে। অবস্থাও স্থিতিশীল। সরকারের ঘরে রাজস্ব ঢুকছে। আগামী ২০ বছরে মানুষের অবস্থার উন্নতি হতে পারে। ভারত আসলে একটা ল্যাবরেটরি, পৃথিবীর অন্যত্র কিছু নিয়ে যাওয়ার আগে সেখানে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া যায়।” (Bill Gates on India)
গেটসের এই মন্তব্য ঘিরেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। আবার গেটস যে দাবি করেছেন, তাতে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে। আর সেই প্রসঙ্গেই পুরনো ঘটনার প্রসঙ্গ ফিরে এসেছে। স্কটল্যান্ডের এক চিকিৎসক, ‘The Skin Doctor’ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। গেটসের ফাউন্ডেশন আমেরিকার সংস্থা, Programme for Appropritae Technology in Health (PATH) -কে আর্থিক সহযোগিতা জোগায়। সেই সংস্থা ২০০৯ সালে ভারতে একটি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালায়, যার পর সাত আদিবাসী কন্যার মৃত্যু হয়।
“It’s a kind of laboratory to try things. When proven in India, they can then be taken to other places.”
— Bill Gates on India.In 2009, the American NGO PATH (Program for Appropriate Technology in Health), in collaboration with the ICMR, conducted clinical trials of a cervical… pic.twitter.com/66aFVrxCiM
— THE SKIN DOCTOR (@theskindoctor13) December 2, 2024
২০০৯ সালে Indian Council of Medical Research (ICMR)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের টিকা পরীক্ষা করে। গুজরাতের বদোদরা, তেলঙ্গানার খাম্মামে ১৪০০০ আদিবাসী স্কুল পড়ুয়াকে ওই পরীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অনেকের শরীরেই সমস্যা দেখা দেয়। এণনকি সাত কিশোরী মারাও যায়। পরবর্তীতে যদিও টিকা পরীক্ষার সঙ্গে ওই সাত জনের মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক কিন্তু রয়েছে আজও।
বিষয়টি নিয়ে সেই সময় তদন্ত শুরু হলে একাধিক অনিয়ম উঠে আসে। জনস্বাস্থ্যের উন্নতির নাম করে ওই পরীক্ষা চালানো হলেও, পরীক্ষার ধরন চেপে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন স্কটল্যান্ডের ওই চিকিৎসক। পরীক্ষার জন্য মা-বাবার সম্মতি আদায়ের পরিবর্তে হস্টেলের ওয়ার্ডেনের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয় বলে পুরনো অভিযোগ তুলে এনেছেন তিনি। বেছে বেছে আদিবাসী পড়ুয়া, সমাজের অনগ্রসর শ্রেণির উপর ওই পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। PATH যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে। সাতকন্যার মৃত্যুর জন্য সংক্রমণ এবং আত্মহত্যাকে দায়ী করে তারা। যদিও সমালোচকদের দাবি, ২০০৯ সালে ওই ঘটনা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ভারত-সহ উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বার বার গিনিপিগের মতো ব্যবহার করা হয়। হাজারো অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, তাবড় সংস্থা তার জন্য ছাড়পত্র পেয়ে যায় কী করে, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
আরও দেখুন