Santosh Trophy 2024-25: ভাগচাষী বাবা দিতে পারেননি বুট, আজ ছেলে সন্তোষ চ্যাম্পিয়ন! অঝোরে কাঁদছে পরিবার…

Estimated read time 1 min read
Listen to this article


বিধান সরকার: কেরালাকে হারিয়ে ৩৩ বারের মতো ঐতিহাসিক সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy 2024-25) জিতেছে বাংলা। দীর্ঘ ৬ বছর অপেক্ষার পর ৭৮ তম জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়ন বঙ্গ ফুটবলাররা। শেষবার বাংলার সাফল্য এসেছিল ২০১৬-১৭ সালে। ২০১৭-১৮ ও ২০২১-২২ মরসুমে এই সন্তোষ ফাইনালে এই কেরালার কাছেই টাইব্রেকারে হেরেছিল বাংলা। এবার মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে সঞ্জয় সেনের শিষ্যরা। 

নিজামের শহর থেকে বাংলায় ফিরে চাকু মান্ডিরা সংবর্ধনায় ভেসে গিয়েছেন। আজ বাংলার ঘরে ঘরে রবি-চাকু ছাড়াও আদিত্য থাপা, মনোতোষ মাঝি, রবিলাল মান্ডি, সৌরভ সামন্তদের নামগুলো পৌঁছে গিয়েছে। তবে আরও একজনের কথা বলতে হবে তিনি সুপ্রিয় পণ্ডিত। যাঁর জীবন সংগ্রামের গল্প শুনলে আপনার রক্ত গরম হয়ে যাবে। ডায়মন্ড হারবার এফসি-র বছর আঠাশের ফরোয়ার্ড হুগলির নালিকুলের অন্তর্গত বন্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামের সবাই তাঁকে বাবাই নামেই চেনেন। এখন হুগলির তথা বাংলার গৌরব সুপ্রিয়!

আরও পড়ুন: বাবা-মা হতদরিদ্র জনমজুর, তাঁদের ঘাম-রক্তেই পুষ্ট রবি বাংলাকে করলেন ভারতসেরা…

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্তোষজয়ী বাংলা দলের ফুটবলারদের জন্য চাকরি ঘোষণা করেছেন। সুপ্রিয়ও পাবেন চাকরি। তবে তাঁর চলার পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। অনেক বাধা পেরিয়ে লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন সবার প্রিয় বাবাই। পাড়ার মাঠ থেকে বৈদ্যবাটি কৃষ্টিচক্র হয়ে কলকাতা ময়দানে। রেনবো, ভবানীপুর, পিয়ারলেসের হয়ে খেলা সুপ্রিয় এখন কিবু ভিকুনার টিমে। 

ছোটবেলায় ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের খেলা দেখতে ভালোবাসতেন সুপ্রিয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। যখনই সময় পেতেন তখনই মাঠে গিয়ে ফুটবল নিয়ে প্র্যাকটিস করতেন। তবে তাঁর খেলা মোটেও ভালো চোখে দেখত না তাঁর পরিবার। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ইতি টানতে হয়েছিল তাঁকে। বাবা কাশীনাথ ও মা কৃষ্ণা পণ্ডিত ছেলেকে ফুটবল খেলতে দেখলেই বকাবকি করতেন। কারণ কাশিনাথ ছিলেন একজন ভাগ চাষী। অন্যের জমিতে চাষ করে যা উপার্জন হতো তা দিয়েই চলত তাঁদের সংসার। ছেলে ফুটবল খেলে বড় নাম করবে, সেটা ছিল তাঁদের কাছে স্বপ্নের মতো। অর্থের অভাবে ছেলের জন্য সামান্য বুট কিনে দিতে পারেননি সুপ্রিয়র বাবা। যদিও ছোট থেকে সুপ্রিয়র ছিল প্রবল জেদ। বাবা মায়ের বকাবকিতেও চালিয়ে গিয়েছেন খেলা। 

বিভিন্ন জায়গায় খেলে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে একাধিক পুরস্কার। প্রথম তাঁর ছেলের খেলাধুলা মা মেনে নিতে না পারলেও পরবর্তীতে ছেলেকে তিনিই উৎসাহ দিয়েছেন। ছেলে খেলতে গিয়ে কোথাও চোট আঘাত পেলেই মায়ের মন কেঁদে উঠত। এখন ছেলের খেলা আর মিস করে না বাবা-মা। ছেলের খেলা আছে জানলেই কাজকর্ম সেরে বসে পড়েন টিভির সামনে । আজ তাঁদের সেই ছেলে জাতীয় খেতাব জিতেছেন। কোচ সুবিমল সিনহার হাত ধরে প্রথমে মানকুন্ডু ও বর্তমানে বৈদ্যবাটি কৃষ্টিচক্রের মাঠে প্র্যাকটিস করে বাবাই।

সুপ্রিয় জানান, ছোট থেকেই কষ্ট করে বাবা তাঁকে মানুষ করেছেন। তবুও যখন যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন। এবারে সন্তোষ ট্রফিতে খুব কঠিন টিম ছিল তাঁদের গ্রুপে। কাশ্মীর, রাজস্থান, তেলেঙ্গানার মত কঠিন দল অংশগ্রহণ করেছিল। সেমিফাইনালেও লড়াই ছিল কঠিন। প্রতিপক্ষ যতই শক্ত হোক না কেন তিনিও ছাড়ার পাত্র ছিলেন না । ১০০ শতাংশ দিয়ে  লড়াই করেছেন। তবে ক্যাপ্টেন চাকু মান্ডির সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন সবসময়। তিনি সুপ্রিয়কে বলতেন যে, বাংলার প্রতিটা মানুষের ভরসা তাঁদের উপরেই। তাই লড়তে হবে এবং জিততে হবে। সুপ্রিয় জানিয়েছেন খেলার প্রথমে ছন্নছাড়া মনে হচ্ছিল তাঁর। পরের পর দলের গোল দেখেই তাঁর খেলার প্রতি আরও খিদে বেড়ে যায়। সুপ্রিয় আরও জানিয়েছেন, দলের জন্য তিনি লড়াই করেছেন। কিন্তু গোল করতে পারেননি, এই আক্ষেপ জিতেও থেকে গিয়েছে তাঁর। মুখ্যমন্ত্রীর চাকরি ঘোষণায় তিনি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন। সুপ্রিয়র স্বপ্ন ইন্ডিয়া টিমে খেলার।

আরও পড়ুন: সন্তোষের ফাইনালে বাংলার জয়-জয়কার! শেষ ৬ বছরের অপেক্ষা, কেরালাকে হারাল সঞ্জয়ের শিষ্যরা…

ছেলের সাফল্যে আজ চোখে জল মায়ের , অশ্রুসজল চোখে কৃষ্ণা জানান , ‘অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। মেরেছি, বকেছি, তবু ও খেলা ছাড়েনি। বাবার ইচ্ছা ছিল না! জানতেন খেলাধুলো করে কিছুই হবে না। তবু আমি ঈশ্বরের প্রতি ভরসা রেখেছি, জানি একদিন না একদিন ছেলে ঠিক মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এখন ছেলে অনেক ভালো জায়গায় গিয়েছে। আর সেটা দেখেই আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এখন চাই ছেলে অনেক বড় হোক। কাশীনাথও অঝোরে কাঁদছেন, ছেলের সাফল্যে চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, সংসার চালাতে পারতাম না। ছেলের জন্য একটা বুট কেনার পয়সা ছিল না। বই কেনার পয়সাও ছিল না, অন্যের জমি চাষ করতাম। অনেক বকাবকি ও করেছি। আজ ছেলের অনেক বড় হয়েছে, এখন বুঝতে পারছি তখন কেন বকতাম ওকে!’ সুপ্রিয়র গল্পগুলোই বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলার ফুটবলকে।

 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

 





Source link

JagoronBarta http://www.jagoronbarta.com

জাগরণ বার্তা হল একটি অগ্রণী অনলাইন সংবাদ পোর্টাল যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে নিরপেক্ষ, সঠিক এবং সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা বাংলার প্রকৃত কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours