কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: বর্ষার দিনেই যেন ডুবল ‘কেয়া পাতার নৌকা’। সাহিত্য জগতে নক্ষত্রপতন। বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন দুপুর ৩.১৫ মিনিট নাগাদ প্রয়াত সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়। বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন সাহিত্যিক।
লেক গার্ডেন্সের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন। নিউরো ও হার্টের কিছু সমস্যা ছিল এই নবতিপর সাহিত্যিকের। সেখানেই প্রয়াত বাংলা সাহিত্য জগতের বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া সাহিত্য জগতে। সাহিত্যিকের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছে পাবলিশার্সস অ্যান্ড বুকসেলার্সস গিল্ড।
সাহিত্যিকের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বর্ষীয়ান কথাসাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়ের মৃত্যুতে আমি গভীর শোক জ্ঞাপন করছি।’
বর্ষীয়ান কথাসাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়ের মৃত্যুতে আমি গভীর শোক জ্ঞাপন করছি।
প্রফুল্ল রায় জন্মেছিলেন পূর্ববঙ্গে এবং পরবর্তীকালে তাঁর নানা বিখ্যাত গ্রন্থে উদ্বাস্তু জীবনের যন্ত্রণা ফুটে উঠেছিল। ‘কেয়াপাতার নৌকো’ তাঁর কালজয়ী উপন্যাস। নানাসময়ে একাধিক সংবাদপত্র-পত্রিকা গোষ্ঠীর…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) June 19, 2025
১৯৩৪ সালে অবিভক্ত বাংলার ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন প্রফুল্ল রায়। ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পূর্ব পার্বতী’। এরপর ১৯৮৯ সালে ‘অমৃত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর কালজয়ী উপন্যাস ‘কেয়াপাতার নৌকা’। যদিও ছদ্মনামে ওই উপন্যাসটি লিখেছিলেন তিনি। দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে তিনি চলে আসেন স্বাধীন ভারতে। এ দেশে এলেও দেশভাগের যন্ত্রণা তাঁকে ছাড়েনি। তাঁরই লেখা কালজয়ী উপন্যাস ‘কেয়াপাতার নৌকো’ আজও প্রাসঙ্গিক। বিক্রমপুর অঞ্চলের রাজদিয়া গ্রামের পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাস। আর ওই রাজদিয়াতেই জন্ম নেন প্রফুল্ল রায়। সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়ের অন্যান্য জনপ্রিয় উপন্যাস হলো-‘শত ধারা বয়ে যাহা’, ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’, ‘নোনা জল মিঠে মাটি’। ‘কেয়াপাতার নৌকা’, ‘শতধারায় বয়ে যায়’, ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ আকারে এবং নামে আলাদা হলেও আসলে তিনটি উপন্যাস মিলেই একটি ত্রয়ী উপন্যাস।
বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পত্রিকায় তাঁর ধারাবাহিক উপন্যাস রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল। মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের পাশাপাশি বিহারের জনজীবনও ধরা পড়েছে তাঁর লেখায়। প্রফুল্লবাবুর বেশ কিছু লেখাকে অবলম্বন করে তৈরি হয়েছে একাধিক টেলিফিল্মও। তাঁর উপন্যাস ও ছোট গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে একাধিক ছবি ও টেলিফিল্ম। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল- ‘এখানে পিঞ্জর’, ‘বাঘ বন্দি খেলা’, ‘মোহনার দিকে’, ‘আদমি অউর আওরত’ ‘একানত আপন’ ‘চরাচর’, ‘টার্গেট’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘ক্রান্তিকাল’ ও ‘পিতৃভূমি’।
জীবনে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন প্রফুল্ল রায়। ১৯৮৫ সালে ‘আকাশের নিচে মানুষ’ গ্রন্থের জন্য পান রাজ্য সরকারের দেওয়া ‘বঙ্কিম পুরস্কার’, ২০০৩ সালে ‘ক্রান্তিকাল’ এর জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়াও বঙ্কিম পুরস্কার, পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ড-এর ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কারও পেয়েছেন।