জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ উত্তাল কোটা সংরক্ষণ আন্দোলন ঘিরে। ছাত্র থেকে শুরু নানা পেশার মানুষ যুক্ত হয়েছে এই আন্দোলনে। ছাত্র ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে ১৫০ জনের বেশি লাশে এখন পদ্মার রঙ লাল। প্রতিবাদের রঙ লালে ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল পিকচার বদলেছেন অনেকেই। এবার ছাত্রমৃত্যুর প্রতিবাদে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিছিলে পা মেলালেন ওপার বাংলার একগুচ্ছ প্রথমসারির তারকা।
আজমেরি হক বাঁধন, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মোশারফ করিম, তানভীর আহসান থেকে শুরু করে মামুনুর রশীদ, আকরাম খান, নূরুল আলম আতিক, আজাদ আবুল কালাম, হাসান, পিপলু আর খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মুনেম ওয়াসিফ, ঋতু সাত্তার, তাসলিমা আকতার লিমা, তানিম নূর, সৈয়দ আহমেদ শাওকি, ওয়াহিদ তারেক, রেদওয়ান রনি, আমিরুল রাজিব, তানজিম ওয়াহাব, জাহিন ফারুক আমিন, ইয়াছির আল হক, শঙ্খ দাশগুপ্ত, সাবিলা নূর, নাসিফ আমিন, তাসনিয়া ফারিন, হুমাইরা বিলকিস, শিবু কুমার শীল সহ একাধিক তারকা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাঁটলেন মিছিলে। সরকারের বিরুদ্ধে যেখানে কথা বলতে চান না এপার বাংলার বেশিরভাগ তারকা সেখানে সরকারের অন্যায়কে অন্যায় বলার ক্ষমতা দেখিয়ে দিলেন ওপার বাংলার তারকারা, এই আলোচনায় সরগরম নেটপাড়া।
আরও পড়ুন- Salman Khan: ‘সলমানকে মেরে ইতিহাস গড়…’, শ্যুটারদের ভোকাল টনিক বিষ্ণোইয়ের, প্রকাশ্যে অডিও ক্লিপ…
কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সবাই জড় হতে থাকেন। গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক- এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সেখানকার চারপাশ। তা ছাড়া বিভিন্ন গান গেয়েও নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিল্পীরা। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আরও অনেক তারকাই। ছাত্রমৃত্যুর প্রতিবাদে কবিতা লিখেছেন তাহসান। ছবিতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন মিথিলার মেয়ে আয়রা। সেই ছবি শেয়ার করে রাফিয়াত রাশিদ মিথিলা লেখেন, ‘আমার মেয়ের আঁকা ছবি। ছোটরাও বড় হয়ে গেলো। এবার বড়দের একটু সুমতি হোক।’
আজমেরি হক বাঁধন- যে অন্যায়-অবিচার-নিপীড়ন করা হয়েছে বা করা হচ্ছে এখনো, যেভাবে গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে, যেভাবে গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে একটি গণতান্ত্রিক দেশে সেই দৃশ্য দেখার পর কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ যদি বাড়িতে বসে থাকতে পারে, তাহলে আমার বলার কিছু নেই। কারণ আমার একটি ১২ বছরের সন্তান আছে। আমি নিজে এ দেশের নাগরিক। আমার বিদেশি কোনো পাসপোর্ট নেই। আমি এই দেশেই থাকবো এবং এই দেশটি আমার। এই দেশটি আমরাই সংস্কার করবো। আমাদের সঙ্গে অন্যায়-অবিচার-নিপীড়ন হয়েছে। যতদিন শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে আছে, আমরা ততদিন তাদের সঙ্গে থাকবো। আমার যদি বিবেক থেকে থাকে, তাহলে এই অবস্থায় মানসিকভাবে সুস্থ থাকার কোনো অবকাশ নেই। কারণ যেদিন থেকে এই ঘটনাগুলো শুরু হয়েছে, যেদিন থেকে গুলি চলেছে, সেদিন থেকে আমি দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি। কারণ ওই শিশুগুলোর মধ্যে আমার সন্তান থাকতে পারতো। ওই মানুষগুলোর মধ্যে আমি, আপনি থাকতে পারতাম। এটা কোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি হতে পারে না। আমি এসব অন্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক। এর প্রকাশ্য প্রয়োগ আমরা দেখতে চাই৷ যতদিন ছাত্ররা মাঠে আছে, ততদিন আমি আছি তাদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন- Rachna Banerjee: ক্লাসরুমে দিদিমণি রচনা! পড়ুয়াদের পড়াও ধরলেন সাংসদ-অভিনেত্রী…
মোশারফ করিম- আমরা রক্তপাত চাই না, আমরা শান্তি চাই। এসবের বাইরে থাকতে চাই। আমি সাধারণ মানুষ। আমরা সবাই সাধারণ মানুষ। আমরা মূলত সকল মানুষের পক্ষে। দেশে বর্তমানে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমাদের ঘরে বসে থাকার মতো অবস্থা নাই। আমরা শান্তি চাই, আমরা রক্ত দেখতে চাই না। সকল নির্যাতন, গোলাগুলি, হত্যা, রক্ত এসব দেখতে চাই না। আমরা এগুলোর বাইরে থাকতে চাই।
মেহের আফরোজ শাওন- দম বন্ধ লাগছে। জুলাই মাস আগে থেকেই আমার জন্য একটি বিষণ্নতার মাস ছিল। কিন্তু ২০২৪-এর জুলাইয়ের শেষ ১৩ দিন যেন সব কিছু ছাড়িয়ে গেল। ৮ জোড়া নিষ্পাপ চোখ আমাকে ঘুমাতে দেয় না। রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ফারহান ফাইয়াজের পড়ার টেবিলের ছবি দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। ছেলেটা নিষাদের চেয়ে মাত্র কয়েক মাসের বড় ছিল! ফেসবুকে ঢুকলেই বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের টেনেহিঁচড়ে গ্রেপ্তারের দৃশ্য! আর সারাক্ষণ কানে বাজে একটা কণ্ঠ- ‘এই পানি লাগবে কারোর, পানি পানি…।’
সিয়াম আহমেদ- আমাদের যে ভাই ও বোনগুলো মারা গেছেন, দেখবেন, আপনি যদি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হন, তবে আপনি ঘুমাতে পারবেন না। যে ভাইটা মারা গেলো, আমার কানে এখনো বাজে তার কণ্ঠ ‘কারো পানি লাগবে।’
জায়েদ খান- এই সম্পদ, এই সুন্দর সুন্দর স্থাপনা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু এই কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা এসব স্থাপনা, এমনকি ময়লার গাড়িও ধ্বংস করেছে, আগুন সন্ত্রাস করেছে, সেটা কি কাম্য হতে পারে? এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম। দেশের প্রতিটি স্থাপনা প্রতিটি সুন্দর জিনিস আমাদের। আমরা সবাই এক।এই এক স্লোগান সামনে রেখেই আমরা ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি যার যার জায়গা থেকে। এ আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে। অনেক মানুষ হাসপাতালে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সবার পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আমি মর্মাহত। এদের মধ্যে কেউ আমার ভাই, আত্মীয়, প্রিয়জন। প্রতিটি মানুষই বাঙালি। আশা করি, এই শোক কাটিয়ে উঠবে হতাহতের পরিবার। সরকার তাদের পরিবারের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা করবে। যারা এই মানুষগুলোকে মেরেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।আমাদের বাংলাদেশ সুন্দর হবে। আমরা সবাই মিলে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব। হানাহানি বন্ধ হবে, সন্ত্রাস-আগুন হামলা বন্ধ হবে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের ক্লাসে ফিরে যাবে। যেকোনো দাবি যৌক্তিকভাবে সমাধান হবে। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
আরও পড়ুন- Arifin Shuvoo Divorce: শুনেছিলেন লাভ জিহাদের কটাক্ষ! কলকাতার অর্পিতার সঙ্গে ৯ বছরের বিয়ে ভাঙলেন আরিফিন শুভ…
অন্যদিকে কোটা আন্দোলন চলাকালীন ভাঙচুর করা হয় বাংলাদেশের সরকারি টেলিভিশনের অফিস। বৃহস্পতিবার বিটিভি ভবনে গিয়েছিলেন অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজ, অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারসহ আরও অনেকে। বিটিভি থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শোকাবহ আগস্ট মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গনে হাজির হয়েছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের একঝাঁক তারকা। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। ‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ স্লোগান ব্যানারে ধারণ করে বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তাদের মত প্রকাশ করেন শিল্পীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন সুজাতা, ফেরদৌস, রিয়াজ, অরুণা বিশ্বাস, নিপূণ আক্তার, শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)