সেলিম রেজা, ঢাকা: বদলের বাংলাদেশে স্থিতিশীল থাকছে না চায়ের উৎপাদন। কোনও বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি, আবার কোনও বছর লক্ষ্যমাত্রার ঘরেই পৌঁছতে পারেনি চায়ের মোট উৎপাদন। চা বাগানগুলো শ্রমিক অসন্তোষ, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়া সহ নানা কারণে বাংলাদেশে এবার চায়ের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে চা শিল্পের উপর।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১০ কোটি ৮০ লক্ষ কেজি। কিন্তু চায়ের মোট উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৩০ লক্ষ ৪২ হাজার কেজি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাংলাদেশে উৎপাদন কমেছে ৯৯ লক্ষ কেজি চা।
বাংলাদেশে ২০২৩ সালে ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছিল ১০ কোটি ২৯ লক্ষ ১৮ হাজার কেজি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ লক্ষ ১৮ হাজার কেজি চা বেশি। আর ২০২২ সালে চা এর লক্ষ্যমাত্রা ১০ কোটি কেজি চা ধরা হলেও উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৩৮ লক্ষ কেজি চা।
চা বাগান সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশে চায়ের কেজিপ্রতি গড় উৎপাদন খরচ ২২০-২৪০ টাকা। নিলাম বাজারে বর্তমানে তা লেনদেন হচ্ছে গড়ে ২০০-২২০ টাকায়। কয়েক বছর ধরে টানা লোকসানের ফলে উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের বাগান মালিকরা। ফলে সার্বিক চা উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। এছাড়াও বিরূপ বাংলাদেশের আবহাওয়া, শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়া এবং নিলামে চায়ের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় এবার চা উৎপাদনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, ক্ষুদ্রায়তনের বাগানসহ বাংলাদেশের ১৬৯টি চা বাগানে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অর্জিত ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৫২ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৭ লাখ ৫০ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ৪ লাখ ২০ হাজার, মার্চে ১৫ লাখ ৯৩ হাজার, এপ্রিলে ৪৮ লাখ ৮২ হাজার, মে মাসে ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার, জুনে ১ কোটি ২৮ লাখ ২৪ হাজার, জুলাইয়ে ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার, আগস্টে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬ হাজার, সেপ্টেম্বরে ১ কোটি ২২ লাখ ১৭ হাজার, অক্টোবরে ১ কোটি ৪৯ লাখ ২৩ হাজার এবং নভেম্বরে ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। আর ডিসেম্বর মাসে চা এর মোট উৎপাদন ছিল ৬৩ লক্ষ ৭৮ হাজার কেজি চা।
বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ক্ষুদ্রায়তনের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং পঞ্চগড় জেলা মিলে ৫৯ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে ১৬৯টি বাগানে চা উৎপাদন হয়। এর মধ্যে কেবল বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায় চা বাগানের সংখ্যা ৯০ এবং চা চাষের ভূমির পরিমাণ ৩৩ হাজার ১শ’ ৬০ হেক্টর। যা জেলার মোট আয়তনের ৫৫.১৯ শতাংশ বলে জানা গেছে।
চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন ‘বাংলাদেশ চা সংসদ’ (বিটিএ) এর চেয়ারম্যান জিএম শিবলি জি ২৪ ঘন্টার বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে টেলিফোনে বলেন, এবার বাংলাদেশের চা বাগানে গ্রীষ্মকালে তীব্র খরা বয়ে গেছে। এছাড়া সার, সেচ, কীটনাশক-এর মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদন খরচের কম মূল্যে চা বিক্রি- এসব কারণ বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া জাতীয় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ১০ ভাগ অবদান রাখা এনটিসি’র চা বাগানগুলোতে বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে দীর্ঘ সময়জুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট চলায় বাগানগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এগুলোই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় এর প্রভাব পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম চা কোম্পানি ফিনলের চা বাগানগুলোতে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ ভাগ চা কম অর্জিত হয়েছে। সরকারিভাবে চায়ের দাম ১৬০ টাকা ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করে দেওয় হলেও বাংলাদেশের বাগান মালিকদের এক কেজি চা তৈরিতে খরচ পড়ে ২০০ থেকে ২২০ টাকা; সেখানে নিলামে চা বিক্রি করতে হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। এতে করে চা উৎপাদনে বাগান মালিকরা কিছুটা হলেও আগ্রহ হারাচ্ছেন।
আরও পড়ুন, US Flood: ভয়াবহ বন্যা! বিদ্যুত্হীন ৩৯ হাজার মানুষ, মৃত কমপক্ষে ৯…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
+ There are no comments
Add yours