কলকাতা: কর্ণাটক থেকে পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশে (Bangladesh News) অশান্তির আবহে সামনে এসেছে ভুয়ো নথি তৈরি করে ভারতে আসার একাধিক অভিযোগ। তার ওপর আশঙ্কা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ জেল ভেঙে বন্দি পালানোর ঘটনা। বাংলাদেশ সরকারই জানাচ্ছে, যে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের মধ্যে অন্তত চুয়াত্তর জন এখনও ধরা পড়েনি। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, পশ্চিমবঙ্গে তৈরি এইসব জাল পাসপোর্ট জঙ্গিদের হাতে পৌঁচ্ছে যায়নি তো?
ভারতে আসার একাধিক অভিযোগ: ৫ অগাস্টের পর থেকে, বাংলাদেশে জেল ভেঙে পালানো শয়ে শয়ে বন্দি এখনও পলাতক। যা কপালে ভাঁজ ফেলেছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। জেল পালানো জঙ্গিরা ভারতে ঢুকে পড়েনি তো? ঢোকার ছক কষছে না তো? ভারতে ঢুকে নাশকতা বা জঙ্গি মডিউল তৈরির পরিকল্পনা নেই তো? আশঙ্কাটা বাড়ছে কারণ সম্প্রতি সেলিম মাতব্বর নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে ভারতের ভুয়ো পাসপোর্ট….নদিয়া ও দিল্লির ঠিকানা দেওয়া দু-দুটো জাল আধার কার্ড উদ্ধার হয়। সম্প্রতি কর্ণাটকের চিত্রদূর্গ থেকে ৬ জন বাংলাদেশের নাগরিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সূত্রের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারতে ঢোকে তারা। তারপর কলকাতা থেকে জাল পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে। সেখান থেকে কর্ণাটকে পৌঁছন।
আর এখানেই প্রশ্ন, বাংলাদেশ অশান্ত হয়ে ওঠার পর কলকাতাকে কি করিডর হিসাবে ব্য়বহার করছে অনুপ্রবেশকারীরা? এখানে কি সহজেই জাল পাসপোর্ট-আধার কার্ড মিলছে? এই সুযোগ কি জঙ্গিরাও নিচ্ছে? বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্প্রতি বাংলাদেশের কারা বিভাগের প্রধান জানান, বাংলাদেশের দেশের বিভিন্ন জেল থেকে পলাতকদের মধ্যে ৭০ জন কুখ্যাত জঙ্গি রয়েছে। এছাড়াও জামিনে মুক্তি পেয়েছে জেএমবি-সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ১৭৪ জন। বাংলাদেশের কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন বলেন, “৭০০ প্লাস বন্দি যারা এখনও পলাতক রয়েছে। ১৭৪ জনের মতো বিভিন্ন যারা বিভিন্ন নামে ছিলেন, তাদের মধ্য়ে শীর্ষ সন্ত্রাসের নামে আমাদের সংজ্ঞায় ১১ জন মুক্তি পেয়েছেন। মোট ৭০ জনের মতো যারা পালিয়ে গিয়েছে, তাদের মধ্য়ে ৭০ জনের মতো পলাতক আছে।”
এই জঙ্গিরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকে পড়েনি তো? ভারতে ঢোকার তোড়জোড় করছে না তো? পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সীমান্ত। বিএসএফ-এর উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে রয়েছে ৯৩৬.৭ কিমি সীমান্ত। যার মধ্যে কাঁটাতার নেই প্রায় ৩৭৫ কিলোমিটার এলাকায়। অর্থাৎ প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীরে ৯১৩ কিমি স্থলসীমান্তের সঙ্গে প্রায় ৩৬৪ কিমি (৩৬৩.৯) জল সীমান্ত রয়েছে। জল সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া সম্ভব নয়। আর স্থল সীমান্তেও কাঁটাতারহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৫৩৮ কিমি এলাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতের অন্ধকারে বনজঙ্গলে ঘেরা কাঁটাতারহীন সীমান্ত দিয়ে আবার কখনও দুদেশের মাঝে থাকা নদীর অংশ দিয়ে নজরদারি এড়িয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে অনুপ্রবেশকারীরা। কখনও কখনও তার সঙ্গে মিশে যায় জঙ্গিরাও। কোচবিহার জেলার একটা অংশ পড়ে গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের অধীনে। যেখানে স্থলসীমান্ত রয়েছে ১১০ কিমি। যার মধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার কাঁটাতারহীন। এছাড়াও এখানে ৬৭ কিলোমিটার জলসীমান্ত রয়েছে। আশঙ্কা এর সুযোগ নিয়ে ভারতে ঢুকতে পারে জঙ্গিরা। অতীতে এভাবেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকে শক্তিশালী জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি, আনসারুল্লা বাংলা-র মতো জঙ্গি সংগঠন। ২০১৪ সালে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ড।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Bangladesh: বাংলাদেশে খোঁজ মিলছে না দাদাদের, এপারে আশঙ্কায় রায়গঞ্জের বাসিন্দা
আরও দেখুন