সেলিম রেজা, ঢাকা: বদলের বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকায় হরহামেশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে এমন অন্তত ২৫টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা সূত্র, ঢাকার বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ছিনতাইয়ের মামলা এবং জিডিকে পর্যালোচনা করে এসব স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ছিনতাইয়ের স্পটগুলো নির্ধারণের পরও কেন ওইসব স্থান ঘিরে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, এ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কেন ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না এবং অপরাধ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারছেন না, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন রাজধানী ঢাকাবাসী।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকার বাসিন্দা উত্তরা মোটর্সের সিনিয়র টেকনিশিয়ান মোহাম্মাদ নুরনবী জি ২৪ ঘন্টার বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে বলছিলেন, দিন-রাত কোনো সময়েই এই শহরে আমাদের নিরাপত্তা নেই। রাজধানী ঢাকা এখন অপরাধীদের জন্য স্বর্গরাজ্য। ছিনতাইকারীরা রাতে কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই অপারেশন চালাচ্ছে। তাদের কার্যক্রম দেখলে যে কারোরই মনে হবে, এই শহরে তাদের থামাবে এমন কোনো শক্তি নেই। প্রশাসন শক্ত অবস্থানে থাকার জানান দিলেও কার্যত মাঠ পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই।
সম্প্রতি ঢাকার বনশ্রী এলাকায় ঘটে গেছে দুর্ধর্ষ এক ছিনতাইয়ের ঘটনা। বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে তিনটি মোটরসাইকেলে করে মোট সাতজন ছিনতাইকারী আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা ও এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। লোমহর্ষক এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নগরবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। একাধিক পেজ ও আইডিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির কমেন্টে ঢাকা শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখুন। ফলো করুন Google News
ঘটনার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যবসায়ীকে যখন প্রকাশ্যে গুলি করা হচ্ছিলো তখন তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য ‘মাগো মাগো করে চিৎকার করছিলেন’। কিন্তু তখন তাকে বাঁচাতে ঢাকার পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে যেসব বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন তাদের কাউকেই আসতে দেখা যায়নি।
যদিও প্রতিনিয়ত এসব বাহিনী ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাতের ঢাকার নিরাপত্তায় টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনা ঘটার সময় কোনো টহল পার্টিকে কেন পাওয়া যায় না প্রশ্ন নগরবাসীর। ঢাকার বনশ্রীর ওই ভয়াবহ ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, গত ২০ বছরেও তাদের এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেনি। তারা বলছেন, ঘটনার পর বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থলে এসেছে শুধু ক্যামেরার সামনে নিজেদের ছবি তুলতে। তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে ছবি তোলা, নিরাপত্তা দেওয়া নয়।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা স্যাটেলাইট ক্যাবল ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন জি ২৪ ঘন্টাকে বলেন, রাত কিংবা দিন এখন কোনো সময়ই এই শহরকে আর নিরাপদ মনে হয় না। মনে হয় বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চোর-ছিনতাইকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আর তো কোনো বাহিনী নেই যে সরকার মাঠে নামাবে, সব বাহিনীই তো আছে মাঠে। তাহলে এই অবস্থা কেন?
বাংলাদেশ পুলিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে সারা বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২৯৪ জন। এ সময়ে ১৭১টি চুরি, ৭১টি ডাকাতি, ১০৫টি অপহরণ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৪৪০টি। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এবার চুরি, ডাকাতি, খুন, অপহরণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে।
তবে বাংলাদেশ পুলিস প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, ঢাকায় জুলাই আন্দোলনের সময় লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধীদের হাতে চলে গেছে। আর এই অস্ত্র দিয়ে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়। তার মধ্যে এখনও বেহাত ১ হাজার ৩৮৪টি।
আরও পড়ুন, Bangladesh: বদলের বাংলাদেশে ফের পরিবর্তনের ঝোঁক, এবার ইউনূসের বিরুদ্ধেই পথে ছাত্রছাত্রীরা!
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)