সেলিম রেজা ও মোহাম্মদ আলী সুমন, ঢাকা: বদলের বাংলাদেশে মাঝরাতে গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখল করা নিয়ে দিল্লির মাওলানা সাদ ও ঢাকার জুবায়েরপন্থি অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক মুসল্লি(পুণ্যার্থী) আহত।
বুধবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিসের টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিব ইস্কান্দার ৩ জনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে, তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামও তিন মুসল্লি নিহত হওয়ার খবর জি ২৪ ঘন্টার বাংলাদেশ প্রতিনিধির কাছে নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন, বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু এলাকার বাচ্চু মিয়া (৭০) ও ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল (৬০)। অপরজন হলেন বাংলাদেশের বগুড়ার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (৬৫)।
আরও পড়ুন-অল্লু অর্জুনের জন্য খারাপ খবর! পদপিষ্টে আশঙ্কাজনক শিশু ভেন্টিলেশনে…
পুলিসের তরফে জানানো হয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই তাবলীগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদ অনুসারীদের জোড় ইজতেমাকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঢাকার মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা জোড় ইজতেমা পালন করেন। এরপর ২০ ডিসেম্বর থেকে দিল্লীর মাওলানা সাদ অনুসারীরা জোড় ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলে তাদেরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ইজতেমা ময়দান দখল নেন ঢাকার মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে দিল্লীর মাওলানা সাদ অনুসারীদের ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ ঠেকাতে ময়দানের চারপাশে ও বিভিন্ন সড়কের মোড়ে লাঠি হাতে পাহারা বসায় ঢাকার মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাদ অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানের উদ্দেশে বাস-ট্রাকে করে মাঠে আসতে থাকে। মধ্যরাতে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সাদ অনুসারীদের গাড়ি আটকে দেন জুবায়েরপন্থিরা। একপর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় গ্রুপের তিনজন নিহত ও অন্তত অর্ধশত মুসল্লি আহত হয়েছেন।
ওই ঘটনার পর থেকে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিস ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।
তাবলীগ জামাতের মুরুব্বী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম জি ২৪ ঘন্টার বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে টেলিফোনে বলেন, ২০ ডিসেম্বর টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তাদের জোড় ইজতেমা শুরুর হওয়ার কথা ছিল। মাঠ প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাঠের আশপাশে রাস্তার পাশে মুসল্লিরা এসে অবস্থান নিচ্ছিলেন। আমাদের এ প্রস্তুতি দেখে জোবায়েরপন্থি লোকজন বাইরে থেকে গাড়ি ভরে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং আমাদের লোকজন ইজতেমা ময়দানে ঢুকে পড়ে। সেখানে দুই গ্রুপের মধ্যে আবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে আহতদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টঙ্গীতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উত্তরা ও তুরাগ নদ সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিস।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)