# Tags
#Blog

কালিকাদা

কালিকাদা
Listen to this article


ফুলকলি

ইছামতীই যেন টেনে নিয়ে গেল তাকে। বিসর্জনের বাজনায় ডুবে গেল আর্তনাদ। মৃত্তিকায় যে মাটির মানুষ এমনভাবে মিশে যান, বিশ্বাস হয় না। বেঁচে থাকতেই বা কতটুকু মর্ম বুঝেছিলাম। যে মানুষটির নামের মাঝেই ‘কালি’ আর ‘কাদা’ এক হয়ে থাকে। ব্রাত্য লোকগীতির গা থেকে সে মানুষটি এই কালি আর কাদাই সুরের জলে ধুইয়ে মুছিয়ে দিতে পেরেছিলেন। বড় আনন্দে তাই দেখছিল শহরের মানুষ। তাই কি নয়ানজুলির গাড়ি-দুর্ঘটনা এমন অমোঘ সত্য? শুনেছি, গাড়িটিই তাঁর দিকে এমনভাবে উল্টেছিল যে জলকাদায় নাকমুখ চেপে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে…

কখনও কখনও কারও মুখ অল্প চেনা হলেও মৃত্যুটা বড় ধাক্কা দিয়ে আসে। কীভাবে এমন হল, মনে প্রশ্ন হঠাত্ই তাড়া করে। কালিকাদার সঙ্গে আমার পরিচয় সেই কলেজের দিনগুলোয়। কম্পারেটিভ লিটারেচার অনেক গায়কেরই জন্ম দিয়েছে যারা আজ এই দুনিয়ায় বেশ নামটাম করেছেন। খেলাচ্ছলে যখনতখন গান গাইতে পারতেন এই সদাহাস্যময় দাদা। সবার দাদা। গান গাইলে ঘিরে ধরতাম। আমরা, আমাদের প্রফেসররা। অনেককিছু চিনতে শিখিয়েছিল আমাদের এই খোলা আকাশের গন্ধ। ভিজে মাটির স্বাদ। কান যে শুধু শোনার নয়, চোখ যে শুধুই দেখার জন্যে নয়, এক ইন্দ্রিয় দিয়েও অনেকসময় অন্য ইন্দ্রিয়ে ঢুকে যাওয়া যায়। এক্সকার্সনে গিয়েছি, বোধহয় অযোধ্যা পাহাড়। পাহাড়, প্রকৃতি সবুজ, সবকিছুর আকর্ষণের সঙ্গেসঙ্গে একটু সুরের ছোঁয়া না পেলে পুরো ছবিটা আঁকা হত না। বনফায়ার আর বাউলগান, সবাই কোমর বেঁধে নাচছে। হঠাত্ই আনন্দের হলকা বয়ে যাওয়া।

দোহার হওয়ারও আগের কথা বোধকরি। সব গায়ককেই কঠিন পথ ধরে হেঁটে যেতে হয়। সামনা করতে হয় কর্কশ পৃথিবীর। পাশে থাকার ভুল প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতেও ক্লান্ত হতে নেই। সে জানে, তাকে চলতে হবে সুরকে পাথেয় করে। এই জনপদ, এই গ্রাম, এই নদীর সুঘ্রাণই তাকে দেবে সুরের সুস্বাদ। কালিকাপ্রসাদ গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন, সুরের সঙ্গে মিলিয়ে থাকা গল্প-কাহিনিও শিকার করে নিতেন কখন। প্রতিবারই যখন তাঁর বিশ্লেষণ শুনেছি, অবাক হয়েছি। এ মানুষটি কত জানেন।

কৌশিক গাঙ্গুলির পরিচালনায় বিসর্জনই ছিল শেষ গান। ভুবন মাঝি-র সঙ্গীত পরিচালকও তিনি। দুটি ছবিই এখনও প্রতীক্ষাতে। কিন্তু সেদিন কৌশিকদার চোখ দেখে মনে হচ্ছে, মনের ভিতর ঝরঝর করে বৃষ্টি হচ্ছে। বাঁধ ভাঙছে। গ্রাম ডুবছে। ডুবছে একতারা। বিসর্জন ছবির প্রতিটি গান যেন ভাসিয়ে নিয়ে গেল। গানের কথার এমন টান যে বোধহয় ভগবানের সঙ্গেই সংযোগ তৈরি হয়ে গেল অজান্তে। ভালরাই যে আগেভাগে চলে যান, অনেকেই বলে।

কালিকাদা যে সা রে গা মা পা-র নেপথ্যের রূপকার, আজকের এই রিয়্যালিটি শো যে আকাশ-বাতাস মাটি মাতিয়ে চলেছে। বাণিজ্য তাঁকে তেমন ভাল চোখে দেখেনি, তিনিই অন্যতম  মানুষ যিনি লোকশিল্পকে এমন অনায়াসে ঢুকিয়ে দিলেন মনে-প্রাণে। ড্রয়িংরুমে। ভালবাসার বারান্দায়।

আজ ছবির পাশে সাদা মালা। তবুও বর্ণময় অনেকের মন। মঞ্চে দোহার গাইছে। সঙ্গে কালিকাপ্রসাদের সেই প্রিয় বাদ্যযন্ত্র। হৃদমাঝারে রাখব, ছেড়ে দেব না।





Source link

শঙ্খের আলোয়

শঙ্খের আলোয়

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Review Your Cart
0
Add Coupon Code
Subtotal