আমদাবাদ: মাটি থেকে ওড়ার কিছুক্ষণ পরই অধোমুখে ধাবিত। পর মুহূর্তেই তীব্র বিস্ফোরণ, বিধ্বংসী আগুন। আমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়ার ওই ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছিলেন সকলে। বাড়ির ছাদে উঠে ওই ভিডিও ক্যামেরাবন্দি করেছিল এক কিশোর। বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে ওই ভিডিও-ই এখন সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে তদন্তকারীদের। ইতিমধ্যেই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ বের করার ক্ষেত্রেও ওই কিশোর তদন্তকারীদের সাহায্য় করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। (Ahmedabad Plane Crash Viral Video)
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ওই কিশোরের বাবা প্রাক্তন সেনাকর্মী। বর্তমানে তিনি মেট্রোতে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কর্মরত। আদতে শামলাজি তালুকার বাসিন্দা তাঁরা। মেট্রো স্টেশনে মোতায়েন হওয়ার পর সর্দার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দর সংলগ্ন মেঘানিনগর এলাকায় ঘরভাড়া নেন। ভাড়াবাড়ির ছাদের উপর দিয়ে বিমান ওড়ে বলে ছেলেকে জানিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় ছেলেটি। বই কেনার জন্য় ১২ জুন, বৃহস্পতিবার বাবার ওই ভাড়াবাড়িতে এসে পৌঁছয় সে। (Ahmedabad Plane Crash)
ভাড়াবাড়িতে এসেই বিমান উড়তে দেখার জন্য উৎসুক হয়ে পড়ে সে। দুপুর ১২.৩০টা নাগাদ বাবার ভাড়াবাড়িতে পৌঁছয় সে। এর কিছু ক্ষণ পর বিমান আসার শব্দ পেয়েই ছুটে যায় ছাদে। মোবাইল ফোন বের করে উড়ন্ত বিমানটিকে ক্যামেরাবন্দি করতে শুরু করে। ফিরে গিয়ে বন্ধুদের দেখাবে বলে ভেবে রেখেছিল ছেলেটি। কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আকাশে হঠাৎই নীচের দিকে নামতে শুরু করে বিমানটি। এর পর তীব্র শব্দ, আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে যায় আকাশ।
আরিয়ান জানিয়েছে, চোখের সামনে গোটা ঘটনা ঘটতে দেখে ভয় পেয়ে যায় সে। প্রথমে নিজের দিদিকে ভিডিওটি দেখায়। দিদি বাবাকে গোটা ঘটনা জানায়। ওই কিশোরের তোলা ভিডিওটি প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এর পর সংবাদমাধ্যমেও সেটি উঠে আসে। ভিডিওটি রেকর্ড করার দরুণ গুজরাত পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চে ডাক পড়ে ওই কিশোরের। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কেন ভিডিওটি রেকর্ড করেছিল, ওই সময় ছাদে গিয়েছিল কেন সে, জানতে চাওয়া হয় বিশদে। ছেলেটির বয়ান রেকর্ড করেছেন তদন্তকারীরা।
Horrific visuals of sudden loss of lift, resulting in a deadly crash #Boeing #planecrash #Ahmedabad pic.twitter.com/1KoYAyXW4M
— Bucks Beyond Borders (@busiredyash) June 12, 2025
জিজ্ঞাসাবাদের সময় ছেলের সঙ্গে থানায় যান বাবাও। ভাড়াবাড়ির মালিক কৈলাসবেন ঠাকুর সংবাদমাধ্যমে বলেন, “প্রথম বার আমদাবাদ এসেছিল ছেলেটি। এত ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে পারে, ওই স্কুল পড়ুয়া কি তা ভাবতে পেরেছিল? ঘটনার পর চেহারা পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল ওর। কথা বলতে পারছিল না, খেতে পারছিল না। দাঁড়িয়ে খরথর করে কাঁপছিল।” আমদাবাদে গুজরাত পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চে বয়ান রেকর্ড করে এলেও, ছেলে এখনও আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে। রীতিমতো বাবার হাতে-পায়ে পড়ে সে। গ্রামে ফেরত পাঠানোর জন্য কান্নাকাটি করছিল। ওই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে ছেলেটি। তার বাবাও আপাতত সেখানে নেই। তবে ছেলেটি রাতে ঘুমাতে পারছে না, অস্থিরতায় তার দিন কাটছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই ছেলেটির সঙ্গে কথা বলে। তাকে বলতে শোনা যায়, “রেকর্ডিং শুরু করার ২৪ সেকেন্ডের মাথায় বিমানটি ভেঙে পড়ে। দিদি প্রথম ভিডিওটি দেখে। ওই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। আগে কখনও এত কাছ থেকে বিমান দেখিনি। তাই রেকর্ড করতে গিয়েছিলাম। বিমানটিকে নামতে দেখে ভেবেছিলাম বিমানবন্দরের অন্য প্রান্তে নামছে বোধহয়। কিন্তু তীব্র শব্দ হয়, আগুনের গোলা দেখতে পাই। ভয়ঙ্কর দৃশ্য।”
ঘটনার দিন ওই ভাড়াবাড়িতে আর এক কিশোর উপস্থিত ছিল। আরিয়ানের সঙ্গে সে-ও ছাদে উঠেছিল। সংবাদমাধ্যমে সে বলে, “আমি যে বাড়িতে থাকি, ও সেখান এসে উঠেছিল। আলাপ করতেই ছাদে গিয়েছিলাম ওর সঙ্গে। ভিডিও করতে করতে ও বলল, বিমানটি বোধহয় অন্য প্রান্তে নামবে। আমি ওকে জানাই, অন্য প্রান্তে বিমানবন্দর নেই।”
গুজরাত পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আরিয়ানকে আটক করা হয়নি। বয়ান রেকর্ডের পর যেতে দেওয়া হয় তাকে। ছেলেটির বাবার বয়ানও রেকর্ড করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী বলেই ছেলেটির বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। মেঘানিনগরের ওই বাড়ির বাসিন্দা এবং স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের পর আর ওই বাড়িতে ফেরেনি ছেলেটি, তাঁর বাবাও ফেরেননি। গ্রামের বাড়িতেও বহু মানুষ ভিড় করছেন। ফলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। তবে আরিয়ানের তোলা ওই ভিডিও-র মধ্যেই দুর্ঘটনার ‘ক্লু’ লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। শেষ মুহূর্তে ঠিক কী ঘটেছিল, তা খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে ভিডিওটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মত তাঁদের।