দীপক ঘোষ, সত্য়জিৎ বৈদ্য়, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী: শাসকদলের নেতার উপর হামলায় প্রশ্নের মুখে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে কেউ প্রশ্ন তুলছেন, ইনটেলিজেন্স নিয়ে, কেউ বলছেন গয়ংগচ্ছ রুটিন। পুলিশকে নিয়ে প্রকাশ্য়ে আসছে একের পর এক শাসক নেতার ক্ষোভ। কিন্তু তৃণমূল কাউন্সিলরের উপর হামলার ঘটনার পরই কেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এত সমালোচনা? প্রশ্ন তুলে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা। (Susanta Ghosh)
কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের দাপুটে তৃণমূল কাউন্সিলর ও বরো চেয়ারম্য়ান সুশান্ত ঘোষের ওপর হামলার ঘটনা খাস কলকাতার আইনশৃঙ্খলা ব্য়বস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আর সেই থেকে তৃণমূলেরই একাংশ যেভাবে পুলিশের সমালোচনা করছে, তা আবার কার্যত বিরোধীদেরও হার মানিয়ে দেবে। এর নেপথ্য়ে তৃণমূলের অন্দরের সমীকরণ আছে কি না, তা নিয়ে জল্পনার মধ্য়েই বিরোধীরা প্রশ্ন করছেন। (TMC News)
বিরোধীদের প্রশ্ন, তৃণমূল কাউন্সিলের ওপর হামলা হল বলেই কি হঠাৎ করে পুলিশের দিকে নজর পড়ল তৃণমূল নেতৃত্বের? যখন পুলিশের সামনেই পঞ্চায়েত ভোটে অবাধ সন্ত্রাস হয়েছে, বিরোধীরা আক্রান্ত হয়েছেন, ছাপ্পায় হয়েছে, বুথ জ্যাম হয়েছে, সেই সময় কেন পুলিশের ব্যর্থতার কথা মনে পড়েনি তৃণমূলের? যখন রাজ্য়ের নানা প্রান্তে বিজেপি-সিপিএমের মতো বিরোধীরা মার খেয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে, টিটাগড়ে বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা হোন কিংবা ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুন হয়েছেন, সেই সময় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা কেন মনে পড়েনি?
রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তাই বলেন, “যখন আমাদের মারা হচ্ছিল, কিছু বলেনি। এখন যেই নিজেদের গায়ে এসে পড়ছে, তখন বলছে।” সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “বিরোধীদের উপর যখন হামলা হয়, কেন নিষ্ক্রিয় থাকে পুলিশ? আর তখন কেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কথা বলে না তৃণমূল?” অনুব্রত মণ্ডল যখন পুলিশকে বোমা মারতে বলেছিলেন, বগটুইয়ের ঘটনা যখন ঘটল, ব্যারাকপুর, ক্যানিংয়ে যখন উর্দিধারী পুলিশকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলেরই বিরুদ্ধে, ৯ অগাস্ট আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পর, ১৪ অগাস্ট রাতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তাণ্ডব চলেছে, সেই সময় কেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জাগেনি তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদদের, এমন প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধীরা।
সুশান্তর উপর হামলার ঘটনা সামনে আসতেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হন শাসক নেতৃত্ব। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে বলতো শোনা যায়, “এনাফ ইজ এনাফ। পুলিশকে বলব, অ্যাক্ট নাউ।” রাজ্যে এত অপরাধী ঢুকছে কী করে, কোথায় পুলিশের নেটওয়র্ক, প্রশ্ন তোলেন ফিরহাদ। একই সুরে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “একই সরকার রয়েছে বলেই গয়ংগচ্ছ পুলিশ।” তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ বিভাগের উপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন দলের নেতারা?
এত ক্রিমিনাল ঢুকছে কী করে? কোথায় পুলিশের নেটওয়ার্ক? প্রশ্ন তুলেছিলেন ফিরহাদ হাকিম। এবার একই সুরে পুলিশের তীব্র সমালোচনা সৌগত রায়ের। বললেন, ‘একই সরকার আছে বলেই গয়ংগচ্ছ পুলিশ।’ তবে কি মুখ্য়মন্ত্রীর পুলিশ দফতরের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন তৃণমূলের সিনিয়র নেতারা? তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদদের মুখে পুলিশের এই সমালোচনা কি ইস্যু ভিত্তিক? সব মিলিয়ে পুলিশ নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের অবস্থান প্রশ্নের মুখে।
আরও দেখুন