জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রেললাইনের উপর দিয়েই চলছে চারচাকা! মানে গাড়ি। শুনতে অবাক লাগলেও তেলঙ্গানায় এমনই কাণ্ড ঘটালেন এক মহিলা। তাঁর এই কীর্তির মাশুল দিতে হল ট্রেনযাত্রীদের। ওই লাইনের অন্তত ১৫টি ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য হলেন রেল কর্তৃপক্ষ। কিছু ট্রেন বাতিলও করতে হয়!

ঘটনাটি ঘটেছে তেলঙ্গানার বিকারবাদের রঙ্গারেড্ডী জেলার শঙ্করপল্লীতে। ওই ঘটনার কয়েকটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, একটি সাদা রঙের চারচাকা ট্রেনের লাইন ধরে চলছে। গাড়িটি কিয়া সনেট কোম্পানির। 

বিষয়টি নজরে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় রেলকর্মী এবং স্থানীয়দের মধ্যে। তাঁরা গিয়ে কোনওক্রমে গাড়িটি থামান। কিন্তু তার পরেই পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়। রেললাইনের উপর ওই মহিলা গাড়ি চালিয়ে রেলকর্মীদের হতবাক করে দেন। তাকে থামানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও, তিনি দ্রুত গতিতে পালিয়ে যান।

আরও পড়ুন: Vice president Jagdip Dhankhar: বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানেই বন্ধুকে জড়িয়ে ধরেই সংজ্ঞাহীন উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়! সংকটে…

আরও পড়ুন: Delhi Horror: বোরখা পরে প্রেমিকার ৫ তলার ছাদে! একধাক্কায় নীচে ফেলে সম্পর্কের টানাপোড়েনে ইতি প্রেমিকের…

গাড়িটি ট্র্যাক থেকে সরাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় রেলকর্মীদের। ওই মহিলা চালক কিছুতেই গাড়ি সরাতে রাজি হননি। গাড়ির মধ্যে থেকেই রেলকর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়ান তিনি। শেষ পর্যন্ত সকলে মিলে ঠিক করেন, তাঁকে বার করে এনে গাড়ি সরাবেন রেল ট্র্যাক থেকে। 

তবে তাঁকে গাড়ি থেকে বার করে আনা সহজ ছিল না। রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ করতে হয় রেলকর্মীদের। কোনওরকমে টেনেহিঁচড়ে, হাত বেঁধে গাড়ি থেকে নামিয়ে মহিলাকে চ্যাংদোলা করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। পরে সরানো হয় গাড়িটিও। প্রায় ২০ জন মিলে গোটা কর্মকাণ্ডটি শেষ করেন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বেঙ্গালুরু হায়দ্রাবাদ ট্রেন থামানো হয়েছে। বেশ কিছু গাড়ির যাত্রাপথ বদলে দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি ভিডিয়োতে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা, রেলকর্মীরা এবং পুলিস মিলে একসঙ্গে গাড়ি থেকে মহিলাকে বের করে আনার জন্য হিমশিম খাচ্ছেন। জনতা যখন তাকে বের করে এনে তার হাত বেঁধে ফেলে, তখন তিনি হিন্দিতে ‘আমার হাত খোল’ বলে চিৎকার করতে শোনা যায়।

তদন্তকারীদের মতে, ৩৪ বছর বয়সী ওই মহিলা ভোমিকা সোনি, সম্প্রতি টেক মাহিন্দ্রায় চাকরি হারিয়েছেন, তারপর থেকে তিনি বিরক্ত ও অন্যমনস্ক থাকতেন। আর তার জেরেই তিনি এই অবাস্তব ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।

শুধু রেলকর্মী নন, ঘটনাস্থলে আসতে হয় পুলিশকে। রেল ট্র্যাকের উপর গাড়ি থাকায় সেই লাইনে পরিষেবা ব্যাহত হয়। অনেক ট্রেন দেরিতে চলাচল করে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। রেল পুলিশের আধিকারিক চন্দনা দীপ্তির মতে, ওই মহিলার মানসিক সমস্যা থাকতে পারে। 

বর্তমানে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মহিলা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে তেলঙ্গানায় থাকতেন। সেখানকারই এক বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। গাড়ি থেকে ওই মহিলার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং প্যান কার্ড পেয়েছে পুলিশ। চন্দনা জানান, অভিযুক্ত এ ভাবে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

‘বেশ কয়েকজন রেলওয়ে কর্মী এবং পুলিশ গাড়ির পিছনে দৌড়ে যান। তারা তাকে গাড়ি থামান। তাকে গাড়ি থেকে নামানোর জন্য প্রায় ২০ জন লোকের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।’ রেলওয়ে পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি) চন্দনা দীপ্তির মতে, সোনিকা ভীষণই আক্রমণাত্মক ছিলেন এবং মানসিকভাবে অসুস্থ বলে মনে হচ্ছিল।

মহিলাকে চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

‘আমরা গাড়ি থেকে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং প্যান কার্ড উদ্ধার করেছি,’ পুলিস জানান। পুলিশ সুপার আরও বলেন যে মহিলা আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহিলাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)