কলকাতা: কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (CBI) সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে জনৈক ‘অভিষেক ব্যানার্জি’র নাম। প্রাথমিক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় চার্জশিটে জনৈক ‘অভিষেক ব্যানার্জি’। CBI জানিয়েছে, ২০১৭ সালে সুজয়কৃষ্ণের ভদ্রের বেহালার বাড়িতে বৈঠক হয়। ‘কালীঘাটের কাকু’র সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষ। বৈঠকের অডিও রেকর্ড করেন কুন্তলের এক কর্মী অরবিন্দ রায় বর্মন। সুজয়কৃষ্ণের বেহালার বাড়িতে বৈঠকের সেই অডিও ক্লিপ CBI-এর হাতে। আর তাতে যে কথোপথন ধরা পড়ে, তা থেকেই জনৈক ‘অভিষেক ব্যানার্জি’র নাম উঠে এসেছে। (Primary Teachers Recruitment Scam)
কে এই ‘অভিষেক ব্যানার্জি’, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তিনি কে চার্জশিটে তা খোলসা করেনি CBI. কিন্তু সেই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসু। তিনি বিবৃতি দিয়ে বলেন, “তদন্তে সহযোগিতা করা সত্ত্বেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মিথ্যাচার চলছে। বার বার যাবতীয় তথ্য দেওয়া সত্ত্বেও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে CBI. কোনও তথ্য় প্রমাণ না মেলায় ED আমার মক্কেলের (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট দেয়নি। আমার মক্কেলকে (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) হেনস্থা করাই CBI-এর চার্জশিটের উদ্দেশ্য। CBI তাদের দাবির সপক্ষে কোনও নথি পেশ করতে পারেনি। এটা আমার মক্কেলকে ফের একবার বেআইনিভাবে টার্গেট করার চেষ্টা।” (Abhishek Banerjee)
সঞ্জয় আরও বলেন, “ED-কে বাগে আনতে না পেরে একটি রাজনৈতিক শক্তি এখন CBI-এর দিকে ঝুঁকেছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে, নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে, তথ্যপ্রমাণ ছাড়া, মানুের মনে সন্দেহ তৈরির মরিয়া চেষ্টায় এই নতুন চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মানহানি করতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে CBI একটি ধারণা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সত্য এবং ন্যায়ের পথে চলেন। কোনও ভিত্তিহীন অভিযোগে ভীত নন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সব ষড়যন্ত্র ফাঁস করে, সততা রক্ষা এবং ন্যায়বিচারের জন্য নিরলস লড়াই চালিয়ে যাবেন।”
CBI-এর সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটের ১২ নম্বর পাতায় বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে, কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ রায় বর্মন এবং সুরজিৎ চন্দ বেহালায় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর বাড়িতে গিয়েছিলেন তাঁকে ঘুষের টাকা দিতে। অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের নির্দেশে, তাঁর কর্মী অরবিন্দ রায় বর্মন নিজের মোবাইল ফোনে ওই বৈঠকের অডিও রেকর্ড করেছিলেন এবং পরে, সেই অডিও ফাইল নিজের মোবাইল ফোন থেকে ল্যাপটপে নিয়েছিলেন, তদন্তের সময় যা উদ্ধার হয়। (Kalighater Kaku)
ওই অডিও ক্লিপের কথোপকথন থেকে উঠে এসেছে যে, ওই মিটিংয়ে কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র কীভাবে ঘুষ নিয়ে অযোগ্য পরীক্ষার্থীদের বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়া যায় এবং হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে সুবিধাজনক রায় আদায় করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। কথোপকথন থেকে এও উঠে এসেছে যে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ করেছিলেন কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। (Teachers Recruitment Scam)
CBI জানিয়েছে, ওই অডিও ক্লিপে তিনজনের কথোপকথন ধরা পড়ে। তা থেকে জানা গিয়েছে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমেই বেআইনি নিয়োগের ব্যবস্থা হয়। বেআইনি নিয়োগ নিয়ে পার্থ এবং অভিষেকের দ্বন্দ্বের কথা উঠে আসে ওই কথোপকথনে’। সুজয়কৃষ্ণ বলেন, “চাকরি বিক্রির জন্য ১৫ কোটি চেয়েছেন অভিষেক ব্যানার্জি।” শান্তনু এবং কুন্তলের সঙ্গে কথাবার্তায় এমনই দাবি করেন ‘কালীঘাটের কাকু’। তিনি আরও জানান, এমনটা যে করা যাবে না জানিয়ে গিয়েছেন তিনি। কারণ প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থী ইতিমধ্যেই ৬,৫ লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন। সেটা শুনে না কি অভিষেক তাঁকে বলেন, “তাঁদের নিয়োগ আটকে দিতে হবে। নয়ত তিনি ওই চাকরিপ্রার্থীদের গ্রেফতার করিয়ে দেবেন অথবা দূরবর্তী জায়গায় তাঁদের পোস্টিং করাবেন।”
পাশাপাশি, CBI জানতে পেরেছে ১০০ কোটি টাকা তোলার জন্য, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষ আরও ২ হাজার চাকরিপ্রার্থীর থেকে ঘুষ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক ব্যানার্জি এবং মানিক ভট্টাচার্যকে ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া যায় এবং বাকি টাকা তাঁরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবেন।
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়, সম্প্রতি বিচারভবনের বিশেষ আদালতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেয় CBI. সেখানে অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, হুগলির বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি নেতা অনুপকুমার হাজরার। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে বলা হয়েছে, তদন্ত করতে গিয়ে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র এবং কুন্তল ঘোষের কণ্ঠস্বরের নমুনা পাওয়া যায়। সেই কণ্ঠস্বর এবং অভিযুক্ত তিনজনের কণ্ঠস্বরের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট এখনও আসেনি। (Kalighater Kaku)
আরও দেখুন