জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গার্হস্থ্য হিংসা মানসিক অত্যাচার এবং তার জেরে আত্মহত্যা, এই সংখ্যা যেন শেষ হচ্ছেনা। স্বামী কিংবা স্ত্রী, চাকুরীরতা অথবা গৃহবধূ, শিক্ষিত বা নিরক্ষর- কেউই এই ধরনের মানসিক ব্যাধি থেকে বেরোতে পারছে না। আর তার জেরেই সারাদেশ জুড়ে আত্মহত্যার প্রবণতা এবং সংখ্যা ক্রমশই বর্ধমান।
এই ধরনের মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করলেন এক শিক্ষিকা। উচ্চশিক্ষিতা,পেশায় শিক্ষিকা, আর্থিকভাবে স্বাধীন মানুষকেও মানসিক অত্যাচার এবং গার্হস্থ্য হিংসা শিকার হয়ে আত্মহত্যা করতে হয়।
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখুন। ফলো করুন Google News
দিল্লির গাজিয়াবাদে ২৯ বছরের অনভিতা শর্মার অকাল প্রয়াণ ঘটল এই কারণেই। সুইসাইড নোটে তাঁর স্বামীকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে গেছেন তিনি। রেখে গেছেন তাঁর চার বছরের ছেলেকে। নোটের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে তাঁর উপর মানসিক নির্যাতনের কথা।
আরও পড়ুন: অতুল-মানবের ছায়া ক্রমশ চওড়া! ‘বউ আমাকে মেরে ফেলবে…’, নিপীড়নের আতঙ্কে চরম পদক্ষেপ চলচ্চিত্রকর্মীর…
তাঁর স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার প্রতিটি কাজে শুধু খুঁত ধরত। সারা জীবন শুধু নিয়েই গেছে, আর পরিণামে কিছুই দেয়নি ওই অবহেলিত বধূকে। শেষ লাইনে তাঁর স্বামীকে উদ্দেশ্য করে তিনি লিখেছেন- ‘খাবার তৈরি হয়ে গেছে , খেয়ে নিও।’
স্বামী কৌশিক শর্মা পেশায় চিকিৎসক। শিক্ষিকার পরিবার থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর বাবা, শ্বশুরমশাই সুরেন্দ্র শর্মা এবং স্বামী কৌশিক শর্মার বিরুদ্ধে। বিয়ের এত বছর পরেও যৌতুক নিয়ে অসম্ভব চাপ দিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার অনুসারে মানসিক অত্যাচার এবং নিষ্ঠুরতার জন্য পুলিশ, স্বামী কৌশিক শর্মা এবং শাশুড়ি মঞ্জু শর্মাকে গ্রেপ্তার করেছে।
আরও পড়ুন: ভুজিয়া কোম্পানির নাম ‘চু*য়ারাম’! কী করে পায় রেজিস্ট্রেশন? তুলকালাম…
স্বামীর বিরুদ্ধে ভয়ংকর অভিযোগ এনে তিনি সুইসাইড নোটে লিখেছেন, তাঁর স্বামী সবসময়ই কাজে পারদর্শী, এক হাতে দশদিক সামলানো এরকম স্ত্রী পছন্দ করতেন। স্কুল থেকে ফেরার পরেও সমস্ত কাজ করতেন বাড়ির, তবুও স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কেউই খুশি হত না। শ্বশুরবাড়ির গঞ্জনা-বঞ্চনা-অত্যাচার দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তাঁকে সহ্য করে যেতে হয়েছে। ‘চাকরি করা বাড়ির ঝি’ চেয়েছিলেন শ্বশুর বাড়ির লোকজন এমনই অভিযোগ। সুখি এবং ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন তিনি। একমাত্র ছেলেকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট নিয়েই তিনি আত্মহত্যা করছেন।
কিন্তু তিনি কখনওই চাননি তাঁর ছেলে, তাঁর স্বামীর মতো একটি অমানুষ তৈরি হোক। তাই তার ছেলে যেন দাদু দিদা অর্থাৎ যুবতীর মা-বাবার কাছেই বড় হন।এই তাঁর শেষ ইচ্ছে। পুলিসের কাছে অনভিতার বাবা অনিল শর্মা অভিযোগ জানিয়েছেন, মেয়ের বিয়েতে তাঁর ২৬ লাখ টাকা খরচা হয়েছিল। তার সঙ্গে আরও আসবাবপত্র, সোনা দানা এবং গয়না দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তবুও খুশি ছিল না তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তারা চেয়েছিলেন দামি গাড়ি। এরপরে সেই দামি গাড়িও দেওয়া হয়েছিল।ওই মৃত শিক্ষিকার ব্যাংকের পাসবুক, চেক, এটিএম কার্ড শ্বশুরবাড়ি লোকজন নিয়ে নিত। কত টাকা বেতন মাসে, কত খরচ করছে, সব হিসেব শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাখত। দীর্ঘদিন ধরে এই অত্যাচারই তাঁকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল