নবনীতা সরকার: ‘মরলে মরো, ছড়িও না…’ ২০১২ সালে এরকম একটা পোস্টার শহর কলকাতায় শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। কেউ কী ভাবে মৃত্যুর জন্য কাউকে প্রশয় দিতে পারে? মৃত্যুর মতো বা আত্মহত্যার মতো বিষয় নিয়ে বালখিল্যপনা কেউ কী ভাবে করে? পরে জানা যায় এটি একটি সিনেমার প্রচার কৌশলমাত্র। সিনেমার নাম হেমলক সোসাইটি। আত্মহত্যা থেকে কোনও মানুষকে বিরত করার জন্যই, আত্মহত্যার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরার জন্যই এই ছবি এবং পোস্টার বানানো হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার পর সেই ছবি তুমুল হিট হয়। গান, সংলাপ সব বিভাগেই পুরস্কার পেয়েছিল হেমলক সোসাইটি।
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখতে ফলো করুন Google News
বিগত দু সপ্তাহ ধরে ই.এম বাইপাস এবং শহরের আরও অন্যান্য জায়গায় আরেকটি পোস্টার সকলের চোখে পড়েছে। অসহায় লাগছে? হোয়াটসঅ্যাপ করুন। একটি ফোন নম্বর সেখানে দেওয়া রয়েছে এবং তার তলায় লেখা রয়েছে মৃত্যুঞ্জয় কর। অর্থাৎ আপনার অবসাদ লাগলে, অসহায় লাগলে, কোথাও যাওয়ার না থাকলে, আপনি এই নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপ করতে পারেন। মৃত্যুঞ্জয় কর নামে এক ব্যক্তি আপনাকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারে।
প্রথম প্রথম এই পোস্টারটি আকর্ষণীয় লেগেছিল সকলেরই। কিন্তু এখন সোশ্যাল মাধ্যমে এই পোস্টটারটিকে নিয়ে বিতর্ক শোনা যাচ্ছে। জানা যায় এটিও সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত এবং এস ভি এফ প্রযোজিত নতুন ছবি ‘কিলবিল সোসাইটি’র পোস্টার এবং হেমলক সোসাইটির সিকুয়েল। কিন্তু বিতর্ক এখানেই। অবসাদ, আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া ব্যাক্তিকে সাহায্য করতে সত্যিই কি কেউ এগিয়ে আসছে? কিছু মানুষ ইতিমধ্যে অসহায় মুহূর্তে সেই নম্বরে ফোনও করেছেন। তখন তাদেরকে বলা হয়েছে এটি একটি সিনেমার পোস্টার মাত্র। কিন্তু এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কেউ কি করে মজা করতে পারে?
শুধুমাত্র প্রচার কৌশলের একটি চমকপ্রদ ধরণ হিসেবে, এই পোস্টার কোনও প্রযোজনা সংস্থা কী ভাবে ব্যবহার করতে পারে? অসহায় অবস্থায় কেউ কারও শরণাপন্ন হওয়ার পর, যখন জানতে পারবে যে শুধুমাত্র প্রচার কৌশলের জন্যই নম্বরটি দেওয়া, তখন কি ভুক্তভোগী আরো বিভ্রান্ত হবে না?। সত্যিই যারা মনোরোগী বা অবসাদগ্রস্থ বা আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য এই বিজ্ঞাপন কৌশল কি শুধুমাত্রই সস্তার জনপ্রিয়তা অর্জনের জিনিস নয়? এই ধরনের সংবেদনশীল জিনিস নিয়ে, সমাজের এই জটিল মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো বিপণন করা কি খুব প্রয়োজন ছিল? সমাজ মাধ্যমের পাতা এই নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। রীতিমতো ঝড় উঠেছে নেটিজেন দের মধ্যে এই পোস্টারের ঔচিত্য নিয়ে।
এ বিষয়ে জি় ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল যোগাযোগ করেছিল পরিচালক সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এটি প্রযোজনা সংস্থার প্রচার-কৌশল মাত্র। তবে জি় ২৪ ঘন্টা ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার পরই সমাজের মাধ্যমে একটি পোষ্টের মাধ্যমে তিনি এই বিতর্কে তাঁর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন
জনসংস্থা এসভিএফের কর্ণধার মহিন্দ্র সোনির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে তাদের কী মন্তব্য তা জানা যায়নি। কিন্তু সোশ্যাল মাধ্যমে এই পোস্টার নিয়ে ঝড় অব্যাহত।
এই বিষয়ে মনোবিদ ডা.সুজিত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সিনেমা প্রচার কৌশল হিসেবে এই ধরনের পোস্ট অতন্ত্য খারাপ। অবসাদগ্রস্ত মানুষকে আরও বেশি বিভ্রান্ত করে তুলবে। তারা আরও বেশি নিরাশ এবং হতাশ হবেন। তাই শুধুমাত্র সিনেমার প্রচার কৌশল হিসেবে এই পোস্টার অন্যায্য।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল