নয়াদিল্লি: বেআইনি জবরদখলকারিদের হটানোর নামে নির্বিচারে বুলডোজার চালানো নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়েছে। বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি, ধর্মস্থান ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে একাধিক। সেই নিয়ে শুনানিতে কড়া মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানাল, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। বেআইনি জবরদখলকারিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হলে, ধর্ম না দেখে সকলের প্রতি সমান আচরণ কাম্য। (Supreme Court)
বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে ‘বুলডোজার অ্যাকশন’-এর বিরুদ্ধে একাধিক আবেদনের শুনানি চলছিল মঙ্গলবার। আদালতে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশের হয়ে সওয়াল করছিলেনম সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। যদি কারও বিরুদ্ধে অপরাধ মামলাও দায়ের হয়, তাতেও কি তাঁর বাড়িতে বুলডোজার চালানো যায়? প্রশ্ন করে আদালত। জবাবে তুষার জানান, ধর্ষণ এবং সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এমন করা যায় না। (Bulldozer Justice)
বেশ কিছু ক্ষেত্রে একদিনের নোটিসে এমনকি বিনা নোটিসে নির্মাণের উপর বুলডোজার চালানোর অভিযোগও সামনে এসেছে। সেই নিয়ে তুষার জানান, কোন ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তার উপর নোটিস জারির করা নির্ভর করে। পুরসভার আইন রয়েছে সেই নিয়ে। ডাক মাধ্যমে সেই নোটিস পাঠানো হয়। এতে আদালত জানায়, পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের পৃথক ইন রয়েছে। অনলাইন পোর্টালে সমস্ত তথ্য থাকা প্রয়োজন।
বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে নিশানা করে বুলডোজার চালানোর যে অভিযোগ এসেছে, আদালত সেগুলিকে সামনে রেখে নির্দেশ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তুষার। এতে আদালত বলে, “আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে আমাদের নির্দেশ সকলের জন্য সমান ভাবে কার্যকর। জবরদখল নিয়ে আগেও বলেছি, সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত রাস্তা, ফুটপাত, জলাশয়, রেললাইনের জায়গা জবরদখল করা হলে, তা তুলে ফেলতেই হবে। জন নিরাপত্তা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। রাস্তার মাঝে যদি কোনও ধর্মস্থান নির্মাণ করা হয়, সে গুরুদ্বার হোক বা দরগা অথবা মন্দির, জনজীবনে কোনও রকম বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।”
বিচারপতি গাভাই স্পষ্ট বলেন, “বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে একটাই আইন থাকা দরকার। ধর্ম, আস্থা বা মূল্যবোধের উপর তা নির্ভরশীল নয়।” রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মানবাধিকার সংগঠনগুলির হয়ে আদাতে উপস্থিত আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার মাথাগোঁজার আশ্রয় পর্যাপ্ত নেই বলে আদালতে সওয়াল করেন। এতে তুষার বলেন, “জানি, কার হয়ে ওঁরা এসেছেন, আমরা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যেতে চাই না। আমাদের সাংবিধানিক আদালত যথেষ্ট ক্ষমতাশালী এবং সরকারও কোনও রকম শত্রুতাপূর্ণ আচরণ ছাড়াই সহযোগিতা করছে। কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থার হস্তক্ষেপ চাই না।”
আবেদনকারীদের হয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন সিইউ সিংহ। তিনি জানান, বুলডোজার কখনও অপরাধ মোকাবিলার হাতিয়ার হতে পারে না। এতে তুষার দাবি করেন, অতি অল্প সংখ্যক সংখ্যালঘু মানুষের সম্পত্তির উপরই বুলডোজার চালানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর এই মন্তব্য সঠিক নয় বলে জানায় আদালত। বলা হয়, “কয়েক জন বা দু’চার জন নয়। সংখ্যাটা ৪.৪৫ লক্ষ।” আদালত পরিষ্কার জানায়, কেউ কোনও অপরাধ করলেই তাঁর সম্পত্তি ভেঙে দেওয়া যায় না। নাগরিক আইন লঙ্ঘিত হলেই শুধুমাত্র এমন পদক্ষেপ করা যায়। আপাতত অনুমোদন ছাড়া কোনও রকম ‘বুলডোজার অ্যাকশন’ করা যাবে না বলে জানিয়েছে আদালত।
আরও দেখুন