কলকাতা: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে বারবার পথে নেমেছেন সাধারণ নাগরিক (RG Kar Protest)। জুনিয়র চিকিৎসকদের (Junior Doctors) এই দীর্ঘ আন্দোলনে পাশে দাঁড়িয়েছেন সমাজের নানা স্তরের মানুষ। অভিনেতা, অভিনেত্রী থেকে আইনজীবী, কলেজ পড়ুয়া, স্কুলের প্রাক্তনীরা… পায়ে পায়ে হেঁটে বিচারের দাবিতে কণ্ঠ ছেড়েছেন অধিকাংশ নাগরিক। ঘটনা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তবে এই নিয়ে প্রশ্ন অনেক। রাজনৈতিক তরজাও থেকেছে চরমে। এই বিষয়ে এবিপি আনন্দের (ABP Ananda) ‘যুক্তি তক্কো’ (Jukti Takko) অনুষ্ঠানে এসে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh) কী বললেন?
‘যুক্তি তক্কো’ অনুষ্ঠানে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদের ঝড় প্রসঙ্গে কী বললেন রুদ্রনীল ঘোষ?
‘কতদূর যায় নাগরিক-স্বর/ বুঝিয়ে দিল আর জি কর/ পথে প্রতিবাদের ঝড়/ ভাঙতে পারবে দানব-গড়?’ এবিপি আনন্দ আয়োজিত সাম্প্রতিক ‘যুক্তি তক্কো’ অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল এটিই। অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গ টানেন অতীতের বেশ কিছু নারকীয় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার। সেই সময় কেন সাধারণ মানুষ এত সরব হননি, কেন এবারেই এত জোরালো দাবিতে সরব হলেন তাঁরা। রুদ্রনীলের দাবি, ‘বহুদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ’ এবার লাভা হয়ে ফেটে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা আস্তিক, যাঁরা ওপরওয়ালায় বিশ্বাসী হন, তাঁদের ঈশ্বরের ওপর মানুষের যেমন শ্রদ্ধা-ভালবাসাটা চূড়ান্ত ধরনের হয়। ঠিক তার পরেই বোধ হয় প্রাণ বাঁচানোর ক্ষেত্রে, বিশ্বাস-শ্রদ্ধা এবং তার সঙ্গে মেধা দিয়ে, মানুষ ডাক্তারদের তেমন ভালবাসেন। তাঁরাই ভগবানের কাছের রূপ, ডাক্তার। আমার মনে হয় আরও সেই কারণেই, এই জমে থাকা বারুদের স্তূপগুলোর সঙ্গে ঈশ্বরের পরেই ডাক্তারদের প্রতি থাকা ভালবাসা-শ্রদ্ধা, সবটা মিলিয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণেই এই চিকিৎসকদের আন্দোলনে তাঁদের পাশে সাধারণ মানুষ নেমেছেন। সেখানে বিভিন্ন বয়সের, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে, দল-মত নির্বিশেষে, ঝান্ডা হাতে, ঝান্ডা ছাড়া সকলে নেমেছে। তাই কারা নেমেছেন, তাঁরা অরাজনৈতিক না রাজনৈতিক, সেটা জানার ক্ষেত্রে দুপক্ষ বিচার করা উচিত। যাঁরা এই ঘটনাকে ঘটতে দিতে সাহায্য করেছেন, এক সেই পক্ষ। যাঁরা প্রতিবাদকে গালমন্দ করছেন, তাঁরাও ওই পক্ষেরই। দ্বিতীয় হচ্ছে বাকি রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, সাধারণ মানুষ মিলে একটা পক্ষ, যাঁরা এটার অবসান চাইছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনে হচ্ছে যেন কেউ কুর্সি চাইছে। ডাক্তাররা কেউ কুর্সি চায়নি। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে কেউ বললে, ওই কুর্সিতে যিনি বসেছিলেন, তাঁরাও জানেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এইভাবে কুর্সির চাওয়ার আন্দোলন করতে হয়, যখন সমাজ জেগে ওঠে। তারপর একটা নির্দিষ্ট ভোটের মাধ্যমে জনগণ ঠিক করবেন, কাকে রেখে দেবেন, কাকে ফেলে দেবেন।’
আরও পড়ুন: Jawhar Sircar : ‘যখন আমি দুর্নীতির কথা বলেছিলাম, তৃণমূলের ভাল লাগেনি, এখন অভিষেক…’, ফিরহাদের OSD-প্রসঙ্গে সরব জহর
তবে এই সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে অভিনেতা বলেন, ‘আমরা সবাই বলছি জাস্টিস চাই। বিচার চাইছি। বিচারক ন্যায়বিচার দেবেন। সেই ন্যায়বিচার হবে তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে। মুশকিল হল, আমাদের প্রাথমিক ন্যায়বিচার যাঁর দেওয়ার কথা, আমাদের রাজ্যের সম্মানীয়া মুখ্যমন্ত্রীর, তিনি যখন ‘জাস্টিস চাই’ বলে প্রমাণ করে দেন যে তিনি প্রাইমারি জাস্টিস দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছেন, তখন কিন্তু সবার ভয় হয়। এবং তিনি অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ দুটি পদে রয়েছেন, মাননীয়া পুলিশমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। ফলে মানুষ যখন দেখতে পাচ্ছেন যে, আমাকে যিনি প্রাথমিক বিচার দেওয়ার দায়িত্বে, আমি যাঁকে নিয়ে এসেছিলাম, তিনিও আমার মতো মিছিলে হাঁটছেন, তখন তাঁর ভয় হয়, রাগ-অভিমান হয়, ফলে ভিড় জমে। তাই তারা কেমন করে প্রতিবাদ করবে তা না ভাবলেই ভাল। মানুষের মতো করে প্রতিবাদ করুক।’
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও দেখুন