জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কান্তিরাভা স্টেডিয়াম হোক বা জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম! কার্লেস কুয়াদ্রাতের ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) টিমের সেই একই ছবি! বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে ১-০ গোলে হেরে, লাল-হলুদ আইএসএলের (ISL 2024-2) অভিযান শুরু করেছিল, দ্বিতীয় ম্য়াচেও ইস্টবেঙ্গল হেরে গেল। রবিবার সন্ধ্য়ায় কোচিতে নিজেদের ঘরের মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্স ২-১ গোলে হারিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গলকে! অ্যাওয়ে ম্যাচে প্রীতম কোটালদের পাশাপাশি কেরালার প্রায় চল্লিশ হাজার সমর্থকের চাপ সামলাতে হবে কুয়াদ্রাতকে। তা জেনেও খেলার আগে ইস্টবেঙ্গল কোচ সাংবাদিক বৈঠকে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছিলেন যে, তাঁর দল তিন পয়েন্টের জন্য়ই ঝাঁপাবে! কোথায় আর ঝাঁপাল তাঁর টিম! উল্টে কেরালার কাছে জঘন্য় আনোয়ার-রাকিপ-ইউস্তেদের জঘন্য় ডিফেন্স আত্মসমর্পণ করে চলে এল! এবারের আইএসএলে এখনও জয় অধরা লাল-হলুদের!
এই ম্য়াচের আগে মোটামুটি নিশ্চিত ছিল যে, আনোয়ার আলির অভিষেক হতে চলেছে কেরালার বিরুদ্ধেই। কারণ গত বৃহস্পতিবার তাঁকে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটি জানিয়েছিল যে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে খেলতে পারবেন আনোয়ার। ফলে কুয়াদ্রাত ডিফেন্সের হতশ্রী চেহারা বদলাতে শুরুতেই আনোয়ারের সঙ্গে রাকিপ-ইউস্তেকে জুড়ে দিয়েছিলেন। ওদিকে মাঝমাঠে জিকসন সিং ও ফরোয়ার্ডে দিমিত্রিওস ডায়মান্টাকোস গত মরসুমে এই কেরালাতেই খেলে গিয়েছেন। কেরালার জলহাওয়া বুঝে নিতে এই দুই ফুটবলারই ছিলেন কুয়াদ্রাতের একমাত্র ভরসা। আনোয়ার ছাড়াও এদিন প্রথম লাল-হলুদ জার্সিতে মাঠে নামলেন দুই মিডফিল্ডার-মাদিহ তালাল এবং মার্ক জোথানপুইয়াও। প্রথমজন ফ্রান্সের, দ্বিতীয়জন ভারতের।
আরও পড়ুন: বিরাট জয়ে খেতাবি লড়াই জমাল কিবুর ডায়মন্ড, এবার বেশ চাপ বাড়ল বিনোর ইস্টবেঙ্গলের!
এবার আসা যাক খেলার প্রসঙ্গে। কিক-অফের পর থেকে ম্য়াচের টাইমলাইন বলে দিচ্ছে বিরতির আগে পর্যন্ত ৪-৩-৩ ছকে খেলা ইস্টবেঙ্গলের পজিটিভ চান্স মাত্র একটি! ১৯ মিনিটে নন্দকুমারের ক্রস থেকে গোল হতে পারল, কারণ কেরলের গোলকিপার সচিন সুরেশ বল বাঁচিয়েও গ্রিপ করতে পারেননি, সেই সময়ে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ ভাগ সচল থাকলে বিরতির আগে ইস্টবেঙ্গল ১-০ এগিয়ে যেতে পারত। বিরতির আগে কেরালাও একটি পজিটিভ চান্স পেয়েছিল। ৩৯ মিনিটে সন্দীপের ভাসানো ক্রসে রাহুল কেপি যদি ঠিকঠাক হেড টার্গেটে রাখতে পারতেন, তাহলে প্রভসুখন গিলও কিছু করতে পারতেন না। ৪৪ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের কাছে ছিল আগের বারের চেয়েও অনেক ভালো সুযোগ। জোথানপুইয়ার বাঁ-দিক থেকে ক্রস ডায়মান্টাকোস প্রথমে মিস করেন, এরপর তালালও সেই বল বুঝে উঠতে পারেননি! বলটি বগলদাবা করে নেন সচিন! বিরতিতে খেলার ফল ছিল গোলশূন্য়। ইস্টবেঙ্গেলর মহেশ ও কেরালার ড্রিনচিচ হলুদ কার্ড দেখেন।
দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলের শুরুটাই হয়েছিল হলুদ কার্ড দেখে। ৪৮ মিনিটে ডায়মান্টাকোস ফাউল করে বসেন। ৫৭ মিনিটে কুয়াদ্রাতের মনে হয়েছিল যে, বিদেশিদের হয়তো হবে না, দেশীয় ফুটবলারেই ভরসা রাখা যাক এবার। তিনি নাওরেম মহেশকে তুলে নামিয়ে দেন পিভি বিষ্ণুকে। কলকাতা লিগে দুরন্ত ফুটবল খেলা বিষ্ণু কোচের আস্থার দাম দিলেন মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই। ৫৯ মিনিটে তিনি ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন। কাউন্টার অ্য়াটাকে উঠে আসা ডায়মান্টাকোসের বিষ্ণুকে লক্ষ্য় করে বল বাড়িয়ে ছিলেন। বিষ্ণু বল ট্য়াপ করে সচিন সুরেশকে কাটিয়ে গোল করেন। কেরালার ফুটবলারই কেরালার গ্য়ালারিতে একেবারে চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন! তবে এই গোলের রেশ চার মিনিটও থাকল না!
৬৩ মিনিটে গোল শোধ করে দেন কেরালার নোয়া সাদাউই। সম্পূর্ণ একক দক্ষতায় এই গোল করেন তিনি। বাঁ-দিক থেকে বল পেয়ে সোলো রানে সামনে থাকা ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররাকিপকে কাটিয়ে গোল করে বেরিয়ে যান আমেরিকার নোয়া। যেমন দৃষ্টিনন্দন ছিল এই গোল, তেমনই দেখার মতো ছিল রাকিপের ভূমিকাও। যদিও এই গোলের ঠিক এক মিনিট আগেই ডায়মান্টাকোসের কাছে সুযোগ ছিল জোরাল শটে গোল করার, তা তিনি পারলেনই না, বারলেন পোলপোস্টের বহু দূরে, উল্টে পায়ে খিঁচও লেগে যায় তাঁর!
এরপর ৮৮ মিনিটে আনোয়ারের ভুলেই কেরালা দ্বিতীয় গোল তুলে নেয়। ঘানার ফুটবলার কোয়ামে পেপরাহ। তিনি আনোয়ারের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে শট মেরে গোল করে গ্য়ালারিকে মাতিয়ে দেন! যদিও কোয়ামের সামনে আনোয়ার ছাড়া ইস্টবেঙ্গলের আর কোনও ডিফেন্ডারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি তখন! আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের লিগের তৃতীয় ও ঘরের মাঠে প্রথম খেলা। এখন দেখার পয়েন্টশূন্য় দলকে সমর্থকরা তিন পয়েন্ট আনিয়ে দিতে পারেন কিনা! কারণ এদিন কেরালার ফ্য়ানদের চিত্কারের তীব্রতাও সামলাতে পারেননি আনোয়াররা।
আরও পড়ুন: সাদা-কালোর বিরুদ্ধে পিছিয়েও ড্র লাল-হলুদের, ট্রফির আরও কাছে চলে গেলেন জেসিনরা
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)