ওয়াশিংটন: মাত্র আট দিনের অভিযানে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘতর হল সেই অভিযান। আগামী বছরের আগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সহযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোরকে পৃথিবীতে ফেরানো সম্ভব নয় বলে আগেই আভাস মিলেছিল। আলাপ-আলোচনার পর এবার তাতে সিলমোহর দিল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA. (Sunita Williams)
মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকার ফল মারাত্মক হতে পারে। মনের উপর তো বটেই, শরীরের উপরও প্রভাব পড়ে এতে। তাই এতদিন মহাকাশে আটকে থাকা সুনীতা এবং ব্যারির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যে Boeing Starliner মহাকাশযানে চেপে তাঁরা মহাকাশে গিয়েছিলেন, সেটিকে যদি সক্রিয় না করা যায়, তাহলে বিকল্প উপায় বের করা হচ্ছে না কেন, উঠছিল প্রশ্ন। (NASA News)
সেই আবহেই শনিবার জরুরি বৈঠকে বসে NASA. বৈঠক শেষে জানানো হয়, আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পৃথিবীতে ফেরানো হবে সুনীতা এবং ব্যারিকে। শুধু তাই নয়, Boeing Starliner-এর ওই বিকল হয়ে যাওয়া মহাকাশযানে চাপিয়ে ফেরানো হবে না সুনীতা এবং ব্যারিকে। বরং সুনীতাকে ফেরাতে ইলন মাস্কের সংস্থা SpaceX-কে ভরসা করছে NASA.
Spaceflight is risky, even at its safest and most routine. A test flight, by nature, is neither safe nor routine. Our decision to keep Butch and Suni aboard the Space Station and bring Starliner home uncrewed is the result of our commitment to safety: our core value. https://t.co/xfgEKFRY2f
— Bill Nelson (@SenBillNelson) August 24, 2024
আগামী মাসে SpaceX-এর Crew Dragon রকেটটি মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেবে। চার আসন বিশিষ্ট রকেটের দু’টি আসন সুনীতা এবং ব্যারির জন্য খালি রাখা হবে। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নোঙর করা রয়েছে Boeing Starliner মহাকাশযানটি। সেটিকে পৃথিবীতে কোনও পাবে ফিরিয়ে আনা যাবে কি না, সেই চেষ্টা চলবে।
NASA-র এই সিদ্ধান্তে জোর ধাক্কা খেল Boeing Starliner. কারণ মহাকাশ অভিযানের দুনিয়ায় বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে চরম প্রতিযোগিতা চলছে। Boeing Starliner এবং SpaceX এক্ষেত্রে দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। অভিযানের আগে থেকেই Boeing Starliner-মহাকাশযানটিতে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে পিছোতেও হয় অভিযান। শেষ পর্যন্ত ত্রুটি সারিয়ে ওই মহাকাশযানে চেপেই রওনা দেন সুনীতা এবং ব্যারি।
কিন্তু মহাকাশে পৌঁছে গেলেও, সেখান থেকে ফিরতে গিয়ে ফের সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। কারণ আবারও বিকল হয়ে যায় Boeing Starliner মহাকাশযানটি। হিলিয়াম চুঁইয়ে পড়ার পাশাপাশি, থ্রাস্টারও বিকল হয়ে যায়। ফলে অভিযানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও, পৃথিবীতে ফেরা হয়নি সুনীতা এবং ব্যারির। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে আপাতত মাথা গুঁজেছেন তাঁরা।
এত দিন পর্যন্ত Boeing Starliner মহাকাশযানটিকে চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন সুনীতা এবং ব্যারি। কিন্তু ওই মহাকাশযানটিকে যে আর ভরসা করছেন না NASA-র বিজ্ঞানীরা, এবার তা স্পষ্ট হয়ে গেল। বরং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী SpaceX-এর হাতেই দায়িত্ব তুলে দিল NASA, যাতে সুনীতা এবং ব্যারি নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন।
গত ৫ জুন যে অত্যাধুনিক CST-200 Boeng Starliner মহাকাশযানে চেপে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেন সুনীতা এবং ব্যারি। গোড়া থেকেই ওই মহাকাশযানে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। কখনও থ্রাস্টার রকেটগুলি ঠিক ভাবে কাজ করছিল না, কখনও আবার ছিদ্রবথে বের হচ্ছিল হিলিয়াম। মহাকাশেও সেই সমস্যা অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে NASA এবং Boeing সংস্থার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠছে।
মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কাজ করা হুইসলব্লোয়ারদের দাবি, রকেটে যে প্রযুক্তিগত ত্রুটি রয়েছে, ছিদ্রপথে হিলিয়াম বেরিয়ে আসছে, তা আগে থেকেই জানত NASA এবং Boeing। সেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান না করেই সুনীতা এবং ব্যারিকে মহাকাশে পাঠায় তারা। সেই কারণেই সুনীতা এবং ব্যারি মহাকাশে আটকে যান বলে অভিযোগ ওঠে।
এই অভিযান নিয়ে NASA-র সঙ্গে ৪৫০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছিল Boeing। সুনীতা এবং ব্যারি মহাকাশে পাঠানো পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা খরচ হয়ে যায়। এত টাকা খরচ করেও ঝুঁকিপূর্ণ মহাকাশযানটিতে চাপিয়ে সুনীতা এবং ব্যারিকে মহাকাশে পাঠানো হল, ওঠে প্রশ্ন। ইলন মাস্কের SpaceX সংস্থার Crew Dragon-এর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার আদৌ উপযুক্ত কি না Boeng Starliner, সেই প্রশ্নও ওঠে। কারণ ২০২০ সাল থেকে লাগাতার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে রসদ সরবরাহ করে আসছে SpaceX-এর Crew Dragon. আর নভোশ্চরদের নিয়ে প্রথম অভিযানে গিয়েই এই অবস্থা Boeng Starliner-এর।
আরও দেখুন