কলকাতা: মহাকুম্ভে শাহিস্নানে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বহু পূণ্য়ার্থী। ভিন রাজ্য়ে গিয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন তাঁরা। কেউ হারিয়েছেন মা-কে। কারও প্রিয়জন ভর্তি হাসপাতালে। কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ পাচ্ছেন না। কোথায় যাবেন, কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না অসহায় পুণ্য়ার্থীরা। এদিকে, বাড়িতে চিন্তায়, শঙ্কায় ঘুম উড়েছে পরিজনদের। (Mahakumbh Stampede)
গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী, তিন নদীর সঙ্গমস্থল। মৌনী অমাবস্য়ায় এই সঙ্গমস্থলেই শাহি স্নানের জন্য় দেশ-বিদেশ থেকে জড়ো হয়েছিলেন পূণ্য়ার্থীরা। ছিলেন এই বাংলার বহু ভক্তও। কিন্তু কেউ ভাবতে পারেননি, পূণ্য়ার্জনের মুহূর্ত, নিমেষে বদলে যাবে বিষাদে, শোকে। জয়ধ্বনি নিমেষে বদলে যাবে স্বজন-হারানোর কান্নায়। (Mahakumbh West Bengal Connection)
পশ্চিমবঙ্গ থেকে মহাকুম্ভে যাওয়া এক পুণ্যার্থী যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন এবিপি আনন্দে। মহাকুম্ভের মহাপুণ্য়লগ্নে, শাহিস্নান উপলক্ষে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে পৌঁছেছিলেন এই রাজ্য়েরই বাসিন্দা, সুরজিৎ পোদ্দার। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা বাসন্তী পোদ্দার, বোন এবং মাসি। সুরজিৎ বেঁচে গেলেও, হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন সুরজিতের মা। তিনি বলেন, “কেউ শুনছিল না। মাড়িয়ে চলে যাচ্ছিল।” দিদিকে হারিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন সুরজিতের মাসি। তিনি বলেন, “আমাদের ফেলে দেয়। তোলার কোনও লোক ছিল না।ও (সুরজিৎ) অনেক চেষ্টা করেছে।”
ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের বাসিন্দা আর এক পুণ্য়ার্থী ও তাঁর পরিবারকে। রাজ্যের বাইরে একা, অসহায় বৃদ্ধা কেঁদে কুল করতে পারছেন না। তিনি বলেন, “সকালবেলা স্নান করতে গিয়ে আমার বোন…বোনের ছেলে, আমি বেঁচে আছি, বোন, বোনের মেয়ে, সবাই হাসপাতালে ভর্তি।”
ওই পুণ্যার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা চার জন গিয়েছিলেন মহাকুম্ভে। অন্য় লোকে তাঁকে চিয়েছে। উঠে দাঁড়ান তিনি। চোট পেয়েছিলেন। ওষুধ পেয়েছেন। অন্য দিকে, পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে কুম্ভমেলায় স্নান করতে গিয়েছিলেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা দীনেশ পণ্ডিত। ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়িতে জ্ঞান হারান শিলিগুড়ির যুবক।
আহত দীনেশের মা হীরামতি পণ্ডিত বলেন, “১১টার সময় কথা হল ওর সঙ্গে যে, মা আমার শ্বাস আটকে গিয়েছিল। দম আটকে গিয়েছিল। ওখানে লোকজন ধরে জল দিয়েছে।” এমন পরিস্থিতি যে মহাকুম্ভে পৌঁছেও আতঙ্কে সঙ্গমস্থলে যেতে পারেননি সুমন্ত সাহা নামের রাজ্যের এক পুণ্যার্থী। তিনি বলেন, “মহাকুম্ভস্থলে যাওয়া খুব দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। প্রচুর মানুষ এখনও নিখোঁজ। মেন রাস্তায় গেলে মানুষের ঢল, জনস্রোত যাকে বলে। এখান থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে কুম্ভমেলা এবং সঙ্গমস্থল। আজ এই মুহূর্তে আর যাওয়ার সাহস পাইনি।”
দেশ-বিদেশ থেকে কোটি কোটি মানুষ কুম্ভমেলায় পা রাখেন এবছর। সেই নিয়ে প্রচারও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু নিরাপত্তায় কেন ততটা জোর দেওয়া হল না, উঠছে প্রশ্ন। এত সংখ্যক মানুষ যে প্রাণ হারালেন, তার দায় কে নেবে? আদৌ কি কেউ দায় নেবে?
আরও দেখুন
+ There are no comments
Add yours