আশাবুল হোসেন, কলকাতা: বিধানসভার অধ্য়ক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে অবশেষে ফিরহাদ হাকিমের একটি মন্তব্য় ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কের অবসান হল। অধ্য়ক্ষের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় নিজের বক্তব্য় ব্যাখ্যা করেন ফিরহাদ। বিধানসভায় পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীর বক্তব্য় মেনে নেন দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফিরহাদের ব্যাখ্যায় সন্তোষ প্রকাশ করলেন বিজেপি বিধায়করাও। (Firhad Hakim)
গত ৩ জুলাই একটি অনুষ্ঠানে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদের বক্তব্য় ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। এর প্রতিবাদে তাঁকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি-র পরিষদীয় দল। বুধবার বিধানসভায় ফিরহাদ শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের প্রশ্নের জবাব দিতে উঠলে তিনবার বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করে বিজেপি। প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবারও দু’বার বিধানসভার কক্ষ ত্য়াগ করেন বিজেপি বিধায়করা। (Suvendu Adhikari)
এর পরেই এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন অধ্য়ক্ষ বিমান। পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্য় জানাতে বলেন তিনি। ফিরহাদ বিধানসভায় বলেন,
“অত্য়ন্ত দুঃখের ব্য়াপার। যখন সদস্য়রা (বিধায়ক) প্রশ্ন করেন, তখন প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে আসতে হয়। কিন্তু, যখন প্রশ্নের উত্তর দিতে যাচ্ছি, প্রশ্নকর্তা চলে যাচ্ছেন। তাঁরা যে কারণের কথা বলছেন, সেটা ঠিক নয়। আমার বক্তব্যের কেউ অপব্যাখ্যা করলে আমার কী করার আছে?”
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: রাজ্য সভাপতির পদ নিয়ে গুঞ্জন, সেই আবহেই বিধানসভায় দিলীপের জন্মদিন পালন শুভেন্দুর, নেপথ্যে কোন অঙ্ক?
শিলিগুড়ির বিধায়ক ও বিধানসভায় বিজেপির মুখ্যসচেতক শঙ্করের উদ্দেশে ফিরহাদ বলেন, “আপনি আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন। আমাকে ধর্ম নিরপেক্ষ মনে করেন কি না? ধর্মীয় সভায় কী বললাম সেটা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়।” পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীর এই বক্তব্য় শুনে কিছু বলতে চান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তাঁকে বলার অনুমতি দেন অধ্যক্ষ এর পর শুভেন্দু বলেন, “আপনি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতে পারেন। আপনাকে মন্ত্রী বা মেয়র হিসাবে ডাকা হয়েছিল। আপনার প্রথম পর্বের বক্তব্য নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। ধর্ম নিয়ে বলবেন। আমরাও সনাতন হিন্দুর কথা বলি। এতে আপত্তির নেই। আমাদের আপত্তি আপনার বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশ নিয়ে। আমাদের মনে হয়েছে আপনি অন্য ধর্মের লোকেদের নিজের ধর্মে আহ্বান জানাচ্ছেন। আপনার বক্তব্য ভুল হয়ে থাকলে, ক্ষমা চাইতে বলছি না। আপনি দুঃখিত সেটা বলুন। এখানেই মিটে যাবে।”
এরপর ফিরহাদ হাকিম নিজের বক্তব্য় ব্য়াখ্য়া করেন। তিনি বলেন, “ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমি সেই সমাজের প্রতিনিধি। আমি স্বজ্ঞানে বা অজ্ঞানে কোনও ধর্মকে অপমান করব সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। নিজের ধর্ম পালন করব, অন্য় ধর্মকে সম্মান করব, সেটাই আমার শিক্ষা। আমি নিজে দুর্গাপুজো ও কালীপুজো করি। আপনি মন্ত্রী থাককালীন আমার পুজোয় গিয়েছেন। আমি কাউকে আঘাত করিনি। কখনও করব না। সারাজীবন এটা মেনে চলি। এটা নিয়ে অযথা রাজনীতি করা হচ্ছে। আমি ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ। আমি আজীবন ধর্ম নিরপেক্ষ থাকব।”
ফিরহাদ আরও বলেন, “আমার পয়েন্টে কেউ আমাকে ভুল বুঝতে পারেন, ঠিকও করে দিতে পারেন। আমি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। আমি আমার ধর্মাচরণ করব, অন্যকেও সেই সম্মান দেব। আমার ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের কোনও ভেদাভেদ নেই। আমার ধর্ম আমাকে এটাই শিকিয়েছে। আমি ধর্মনিরপেক্ষতায়, ভারতের সংবিধানে বিশ্বাস করি, নিজের দলের ইস্তেহারে বিশ্বাস করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে বিশ্বাস করি। আমি ধর্মনিরপেক্ষ।”এর পর আর বিজেপি-র তরফে কোনও আপত্তি ওঠেনি। ফিরহাদের ব্যাখ্যার পর তাঁকে বয়কটের পথ থেকেও সরে আসে বিজেপি।
আরও দেখুন