সেলিম রেজা | ঢাকা: বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিসের চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে। গুলিতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে শীর্ষ অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারী এই বাহিনী। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পুলিসের ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। পুলিসের মহাপরিদর্শক তথা আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল- সব সদস্যের রদবদল হয়েছে। সম্পূর্ণ সংস্কারের জন্য গঠন করা হয়েছে কমিশন। কমিশন তাদের কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে।
আরও পড়ুন-ভুরি ভূরি গোল নষ্ট! তবুও দিমির সৌজন্যে তিন পয়েন্ট, টেবলে উঠল লাল-হলুদ
বিভিন্ন মহল থেকে পুলিসের পোশাক, মনোগ্রাম ও ক্যাপ থেকে নৌকার ছাপ পরিবর্তন করার দাবি উঠেছে। সংস্কার কমিশনও এ দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে পুলিসের পোশাক পরিবর্তনের প্রাথমিক সুপারিশ করেছে।
পুলিস কর্তৃপক্ষও চাইছে পোশাক পরিবর্তন করতে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশের পুলিস সদর দফতর। আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত একই ধরনের পোশাক পরিধান এবং মনোগ্রাম ও ক্যাপ থেকে নৌকাচিহ্ন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের শীর্ষপর্যায় সম্মতি দিলে আগামী বছরের মাঝামাঝি নতুন পোশাক ব্যবহার করবে বাংলাদেশের পুলিস। পোশাকের রঙ নিয়ে গবেষণা চলছে বলে পুলিসের একটি সূত্র জানিয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের তরফে জি ২৪ ঘন্টার বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে জানানো হয়েছে, ঢাকা মহানগর পুলিস-সহ সারা বাংলাদেশের পুলিস সদস্যদের জন্য একই রকমের পোশাকের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পোশাকের হাতের অংশে রেঞ্জ, জেলা, ইউনিট ও মেট্রোপলিটন পুলিসের মনোগ্রাম থাকবে। নৌকার ছবি থাকবে না। তবে পোশাকের রঙ কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। কয়েকটি রঙ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নিজস্ব ফ্যাক্টরি থেকে কাপড় কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য একজন উপ-মহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকার গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানা করার পরিকল্পনা আছে পুলিস সদর দপ্তরের। ২০০৪, ২০১৬ ও ২০২১ সালে পুলিসের কয়েকটি ইউনিটের পোশাকের রঙ পরিবর্তন করা হয়েছিল। সর্বশেষ আর্মড পুলিস ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পোশাক পরিবর্তন করা হয়েছে। পোশাক কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ আছে।
মাঠ পর্যায়ের পুলিস সদস্যদের অভিযোগ, পোশাকের কাপড় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিম্নমানের। এসব পোশাক সারাদিন পরে থাকা যায় না। গরম লাগে। অনেকে নিজের টাকায় ভালো মানের কাপড় কিনে পোশাক তৈরি করে থাকেন। আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতনদের পোশাকের কাপড়ের মান উন্নত। আর পুলিসের এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলদের কাপড়ের মান নিম্ন। রঙেও ভিন্নতা রয়েছে।
পুলিস-সংশ্লিষ্টরা জি ২৪ ঘন্টাকে জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে পুলিসের পোশাক ছিল খাকি। অনেক আগেই পোশাকের রঙ বদলেছে। মহানগর ও জেলা পর্যায়ে দুই রঙের পোশাক দেওয়া হয়। তবে, পুলিসের ইউনিট ও ব্যাটালিয়নভেদে পোশাকের ভিন্নতাও রয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিস সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জি ২৪ ঘন্টাকে বলেন, সারা বাংলাদেশের পুলিস সদস্যরা একই ধরনের পোশাক যাতে ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য তিনি কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ, জেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের পোশাক একই ধরনের হবে। পোশাকের ডান-বাম হাতের ওপরের অংশে শুধু ইউনিট, রেঞ্জ, জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিসের লোগো থাকবে। পুলিসের মনোগ্রাম থেকে নৌকা; ক্যাপ, ব্যাজ ও বেল্ট থেকে নৌকার সঙ্গে বইঠা বাদ দেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিসের উপ পুলিস কমিশনার মোহাম্মদ তারেক মাহমুদ জি ২৪ ঘন্টাকে বলেন, আইজিপি স্যার পুলিসের সব পোশাক একই ধরনের করার কথা বলেছেন। আমরা আশা করবো কাপড়ের মান যাতে উন্নত হয়। কোনো অভিযোগ যাতে না থাকে। পোশাকগুলো যেন একস্থান থেকেই আমরা সরবরাহ করতে পারি। তাহলে অপরাধীরা পুলিসের পোশাক পরে অপকর্ম করতে পারবে না।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)