প্রদ্যুত মুখোপাধ্যায়: এই মুহূর্তে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের একটি কালো দিন। ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের তবলার যে এত পপুলারিটি সেটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে জাকির ভাইয়ের জন্য। জাকির ভাই তার বাজনা নিয়ে আমেরিকা থেকে ইউরোপ , ইউরোপ থেকে আফ্রিকা সারা পৃথিবীতে, ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের মান বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওঁনার এত জনপ্রিয়তা, পৃথিবীর যেখানেই উনি বাজাতেন, তার এক থেকে দু মাস আগে সমস্ত টিকিট হাউজফুল হয়ে যেত।
জাকির ভাই শুধু তবলার জাদুকরই ছিলেন না। উনি ছিলেন একজন বহুমুখী মিউজিশিয়ান। উনি হলেন একজন গ্লোবাল আইকন। একদিকে যেমন অসাধারণ তবলা বাদক। আরেকদিকে তেমন অসাধারণ মিউজিক কম্পোজার এবং অভিনেতা। সর্বপরী উনি একজন খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন।
আমার বয়স যখন ২৪-২৫ বছর তখন থেকে আমি লস এঞ্জেলসে থাকতাম। ওখানে অনুষ্ঠান করতাম এবং তবলার ক্লাস করাতাম। উনি থাকতেন সান ফ্রান্সিকোতে। সেই সময় আমি ক্যালিফোর্নিয়া থাকাকালীন জাকিরজির কাছে যেতাম অনেক কিছু টিপসও পেয়েছি। উনার যে এত জনপ্রিয়তা, তা ওঁনাকে সামনে দেখে বোঝা যেত না। উনি সব সময় খুব হাসি খুশি থাকতেন এবং প্রত্যেক আর্টিস্টকে খুব ভালবাসতেন।
উনি এতটা বিনয়ী ছিলেন, যে একটি ঘটনা, আমেরিকাতে যখন ওঁনার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ তখন ওঁনাকে আমি উস্তাদজি বলে ডাকি, উনি আমাকে বলেন, ‘আমি উস্তাদজি নই আমি হলাম শুধুমাত্র জাকির হুসেন, তুমি আমাকে শুধু জাকির ভাই বলে ডাকো।’ একটা মানুষ কতটা বিনয়ী হলে এই কথাটা বলে। উনি ছিলেন মনের রাজা আর তার সঙ্গে উনি ছিলেন উস্তাদের উস্তাদ। তার কারণ তবলা মানে আমাদের প্রত্যেকের মনে একটাই নাম আছে উস্তাদজি জাকির হুসেন।
আরও পড়ুন:Gold smuggling: অন্তর্বাসে লুকোনো প্রায় ২ কেজি সোনা! গ্রেফতার এয়ার ইন্ডিয়ার কেবিন সদস্য…
উনি কলকাতার তবলার ছাউনি খুব পছন্দ করতেন। তাই উনি যখন কলকাতায় কোনও অনুষ্ঠানে আসতেন সেই সময় কোন কোন অনুষ্ঠানে উত্তর কলকাতার দুজন প্রখ্যাত তবলা মেকার ওনাকে গ্রীনরুমে তবলা গিফট করে আসতেন। সেই তবলা নিয়ে উনি কলকাতায় অনুষ্ঠান করতেন। তার কারণ উনি বলতেন, ‘কলকাতার তবলার সাউন্ড খুব মিষ্টি এবং tonal কোয়ালিটি খুব অসাধারণ।’
তবে এই মুহূর্তে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের অবশ্যই ছন্দপতন। সেটা কিভাবে পূরণ হবে জানিনা। তবে এইটুকুনি বলতে পারি উনি আমাদের সঙ্গে আগেও যেমন ছিলেন এখনও তেমনি থাকবেন। ওঁনার অনেক বাজনা বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আছে, ইউটিউবে আছে, সেইগুলি আমরা শুনবো, শ্রোতারাও শুনবে এবং আগামী দিনের শিক্ষার্থীরা শুনে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে আমি এটুকুই বলতে পারি, জাকিরজি তাঁর বাজনার মাধ্যম দিয়ে সারা জীবন আমাদের বুকে থাকবেন। আমি ওঁনার আত্মার শান্তি কামনা করি। উনি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)