স্বরূপ দত্ত
আজ কালীপুজো। আর কালীপুজো মানেই কী এটা যদি কাউকে জিজ্ঞেস করি, তিনি বলতে থাকবেন যেগুলো, সেগুলো এরকম – শক্তির ঠাকুর। ডাকাবুকো ঠাকুর। পুরুষের বুকের উপর পা দিয়ে থাকা ঠাকুর। আলোর উত্সব। বাজির উত্সব, আর কত কত কী। আর অবশ্যই আসবে তাদের নাম। রঘু, বিষ্ণু আরও কত কত কী! হ্যাঁ, ডাকাতদের কথা বলছি। ডাকাত আর কালী ঠাকুর এই দুই শব্দকে আর কত আলাদা করে রাখবেন আপনি! কিছুক্ষণ পর ইতিহাস ঠিক মিলিয়ে দেবে। আর এই সব ভাবনা চিন্তা সকলের সব শেষ হয়ে গেলে আমি যেটা বলতে চাই, তাহলো – জুয়া। হ্যাঁ, কালী পুজো মানেই তো জুয়ার আসর। জুয়ার বোর্ড।
কলকাতা, শহরতলি, জেলা শহর, গ্রাম। উত্তর থেকে দক্ষিণ, আপনি খোঁজ নিয়ে দেখুন, সব জায়গায় আজ রাতে বসছে জুয়ার আসর। কলকাতা, দমদম, সোনারপুর, বারুইপুর, বজবজ, বেলঘরিয়া, বারাসাত, ব্যারাকপুর, নৈহাটি, কল্যানী, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, হাওড়া, আন্দুল, বর্ধমান, বাঁকুড়া অথবা মালদা থেকে শিলিগুড়ি, সর্বত্রই আজ বসবে জুয়ার বোর্ড। মাত্র দু-তিন ঘণ্টায় লেনদেন হয়ে যাবে কোটি টাকার। হ্যাঁ, সচেতনভাবেই টাকার অঙ্কটা লিখলাম। জুয়ায় আজ একেকটা জায়গায় মাত্র তিন-চার ঘণ্টায় কোটি টাকার হাত বদল হবে। কেউ হয়ে যাবেন দেউলিয়া। কেউ বা বাড়ি বয়ে নিয়ে যাবেন ব্যাগভর্তি টাকা।
সেইজন্যই ভর সন্ধেতে নিজের পক্ষে যতটা সচেতন করা সম্ভব, সেই কথাটাই বলতে চাইছি। আপনারা যে যে এই লেখাটা পড়ছেন, তাঁরা অন্যদের সচেতন করুন। এভাবে মাত্র এক রাত্রের জুয়া খেলায় নিজের কষ্ট করা রোজগারের টাকা মাত্র কয়েক মিনিটে উড়িয়ে দিয়ে এসে হতাশায় ডুবে যাবেন না। বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে নিজের কষ্টের কথাও ভাবুন। যে টাকা আজ জুয়ায় উড়িয়ে দিয়ে আসবেন, সেই টাকা রোজগার করতে কত কষ্ট করতে হয়েছে আপনাকে। তাহলে কেন খামোখা এক রাতে সব টাকা জুয়ায় হেলায় হারাবেন। মাথায় রাখবেন, জুয়ায় কেউ কোনওদিন বড়লোক হয়নি। বরং, পুরাণ থেকে ইতিহাস অথবা গতকাল থেকে আজ, জুয়ার উদাহরণে শুধু হারের গল্প। অর্থ আর সম্মাণের দেউলিয়া হওয়ার কাহিনিই জেনেছি। শুধু কী তাই? সমাজ বদলে গিয়েছে আজ অনেকটাই। এখন মানুষের মধ্যে সহিষ্ণুতা কমে গিয়েছে অনেক। নিজের কষ্টের টাকা মাত্র পাঁচ মিনিটে বিনা কারণে, শুধুমাত্র ভাগ্যর হাতে মার খেয়ে আরেকজনের হাতে তুলে দেওয়া অত সহজ? তাই মুহূর্তেই শুরু হিংসার। মারামারি। সঙ্গে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা। নিজের বা সামনের জনের প্রাণটা চলে যাওয়াটা স্রেফ কয়েক মুহূর্তের ঘটনা।
ভাবছেন, পুলিস কী জানে না? কী বলি বলুন তো? আসলে এটা এখন বাংলার সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেক বছর কালীপুজোর দিন জুয়ার আসর বসবেই।পুলিস জানতে পারলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে। অথবা যে যে জায়গায় আজ জুয়ার আসর বসবে, সেই জায়গাগুলোতে তো আর রোজ জুয়ার আসর বসে না। জুয়ার ঠেকও না। তাই একদিনের তিন-চার ঘণ্টার আসরের খবর পেতে পেতেই তো খেলা শেষ! লেনদেন শেষ কোটি টাকার। একদলের মুখে অযাতিত প্রাপ্তির টাকায় আকণ্ঠ মদ। হুল্লোড়। আর আরেক দলের চোখে আর বুকে দীর্ঘশ্বাস! সব শেষ। কে নিলো দেখতে পাচ্ছে। কীভাবে নিলো সব জানতে পারছে। কিন্তু কিছু বলার নেই। মাত্র ১৫ মিনিট আগেও যে টাকা ছিল একজনের পকেটে, সেই টাকাই ১৫ মিনিট পরে অন্যের পকেটে! তাই প্লিজ জুয়ার আসরে যাওয়ার আগে নিজেকে সামলান। অথবা অন্যকে বাধা দিন। সাধারণত, যারা জুয়া জাতীয় জিনিস খেলে, তারা অনেকবেশি সংস্কারাচ্ছন্ন হয়। তাই তাকে খেলতে যাওয়ার আগে বাধা দিলে, কাজ হলেও হতে পারে। অথবা কোথাও এমন ঘটনা ঘটছে জানলে প্লিজ পুলিসকে খবর দিন। তাতে হয়তো পুলিস এসে উত্সবের দিনে কয়েকজনকে গ্রেফতার করবে। কিন্তু অনেক মানুষের জীবন বাঁচবে। হতাশার দিন অযথা আসবে না। আর সেটাই যে হবে কালী ঠাকুরের ভক্তদের জন্য সেরা অঞ্জলি অথবা সেরা পুজো। ভালো থাকুন সবাই। শক্তির আধার সবল করুন আপনাদের সবাইকে। আলোয় ভরে উঠুক আপনাদের জীবন।
(এই লেখা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত। এই লেখার সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা ডট কম একমত হবেই এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।)
আরও পড়ুন দীপাবলির সেরা ১০ বাজির কোনটার সঙ্গে কোন বলিউড অ্যাক্টরের মিল আছে!