সন্দীপ সরকার, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও শান্তনু নস্কর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে সহকারী সুপারকে প্রাণে মারার হুমকির অভিযোগ ! আতঙ্কে আজ পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে হাসপাতালে হাজির ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সহকারী সুপার। কী বলছে শাসকদল ?
তৃণমূল নেতা-সহ বাকিদের বিরুদ্ধে উঠেছিল প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ। এরপর এদিন পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে এলেন সহকারী সুপার সৌরভকুমার দাস। ফোনে যোগাযোগ করা হলে মন্তব্য এড়িয়েছেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা। মন্তব্য করতে চাননি ক্যানিং পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়কও। যদিও সহকারী সুপারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশ।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সহকারী সুপার সৌরভকুমার দাস বলেন, ‘কোথাও তো সেফটি-সিকিউরিটি দরকার হয়। কারণ, এত দূর থেকে আসছি, রাস্তা দিয়ে আসছি।’ আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজে ভয়ঙ্কর ঘটনার পর থেকে বারবার হাসপাতালে বহিরাগতদের প্রবেশ আটকানোর ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। থ্রেট কালচার বন্ধের কথা বলা হচ্ছে!
কিন্তু দিনহাটা থেকে ক্য়ানিং, যে ছবিটা উঠে আসছে তা ভয়ঙ্কর! একেবারে সরকারি হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য় কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা! ক্য়ানিং মহকুমা হাসপাতালে ঢুকে খোদ সহকারী সুপারকেই প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল বিধায়কের ভাগ্নের বিরুদ্ধে, যিনি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি দিয়ে ক্য়ানিং মহকুমা হাসপাতালের সহকারি সুপার সৌরভ কুমার দাস অভিযোগ করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে চুক্তিভিত্তিক সাফাই কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের ডিউটি রস্টারে অদল-বদল করা হয়। কাজে না এলেও বেতনের বিলে সই করে দিতে দেওয়া হয় চাপ। এরকমই নানা অনিয়ম গত একবছরে তাঁর নজরে আসে। আর এসবের বিরোধিতা করাতেই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য় তন্ময় দাস চুক্তিভিত্তিক সাফাই কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে ১১ তারিখ হাসপাতালে ঢুকে তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দেন বলে অভিযোগ।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তারক্ষী আকাশ দলুই বলেন,মানুষের সমস্যা হতেই পারে। এবারে একজনের জায়গায় একজন এসে ম্যানেজ করে দিচ্ছে। সেই জায়গাটাতো ফাঁকা নেই। আমরা তো ম্যানেজ করে দিচ্ছি। যার ডিউটি সেই করে। এবার বিপদের সময় তো একজনেরটা আরেকজনকে ম্যানেজ করতেই হবে। না করলে তাহলে তো জায়গাটা ফাঁকা থাকছে। আমরা জানিয়েছিলাম, দীপু দা লাস্টে গেল, গিয়ে বলছে কী সমস্যা হয়েছে, উনিও জানতে চেয়েছিল, উনি হুমকি দেয়নি। উনি জাস্ট জিজ্ঞেস করতে গেছিল তোমরা তো, এমলএর সোর্সে সবাই ঢুকেছি তো আমরা, এবার কী সমস্যা হয়েছে না হয়েছে উনি জানতে গেছিল। আমরা এমএলএকেও জানিয়েছি। সুপারকেও জানিয়েছি। অ্যাসিস্টান্ট সুপারকেও জানিয়েছি। আমরা এমএলএ-র সোর্সেই এসছি। এবার কোম্পানি আমাদের রেখেছে এখানে, কোম্পানিকেও জানানো হয়েছে। কোম্পানি বলছে ঠিক আছে আমরা দেখছি, সুপারের সাথেও কথা বলছি।’
এই পরিস্থিতিতে ভয়ে আতঙ্কে মঙ্গলবার পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে হাসপাতালে ঢুকতে হল সহকারী সুপারকে! সহকারি সুপারের অভিযোগ, তাঁকে জোর করে নিয়ম ভেঙে হাসপাতালে আয়া ঢুকতেও বাধ্য় করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে মঙ্গলবার পৌঁছয় এবিপি আনন্দ। কিন্তু তাঁর খোঁজ মেলেনি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে, মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল নেতা। হাসপাতালের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে দল কথা বলতে নিষেধ করেছে বলে জানিয়েছেন ক্যানিং পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক পরেশরাম দাস। পুলিশি নিরাপত্তা নিয়েই হাসপাতাল ছাড়েন সহকারী সুপার।
আরও পড়ুন, ভোটপ্রচারে গিয়ে মানিব্যাগ খোয়ালেন মিঠুন
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও দেখুন