কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : প্রয়াত অভিনেতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্র (Manoj Mitra Passes Away)। আজ সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে জীবনবসান হয় তাঁর। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বার্ধক্যজনক অসুস্থতায় ভুগছিলেন কিংবদন্তি এই নাট্যব্যক্তিত্ব। ৮৬ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। নাট্যকলায় অনন্য অবদানের জন্য ২০১৬ সালে ‘সেরা বাঙালি’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় তাঁকে।
তপন সিংহের ছবি ‘বাঞ্চারামের বাগান’-এ তাঁর অভিনয় চিরদিনের জন্য জায়গা করে রেখেছে বাঙালির হৃদয়ে। সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বাসু চট্টোপাধ্যায়, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত, গৌতম ঘোষের মত পরিচালকের বহু ছবিতে অসামান্য অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।নাট্যমঞ্চেও তিনি কিংবদন্তী। নাটকের সঙ্গে তাঁর ভালবাসা ছিল সেই ছোটবেলা থেকেই।
বাঞ্ছারাম কাপালির হাহাকার আজও বাঙালির মনকে কাঁদায়। তিনি আজও আগলে রেখেছেন তাঁর বাগান। নাটকের বাগান। প্রেমটা সেই ছোটবেলার। স্কুল থেকেই নাটক টানত। মেয়ে সেজেও অভিনয় করেছেন। কিন্তু বাবা ছিলেন থিয়েটার-বিরোধী। তবু, তাঁকে আটকানো যায়নি।
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। স্কটিশচার্চ কলেজে ভর্তির পর নাটক আরও পেয়ে বসে। বন্ধুরা মিলে তৈরি করেন নাটকের দল ‘সুন্দরম’। কলেজে পড়াকালীনই তাঁর কলমে ‘মৃত্যুর চোখে জল’। প্রথম লেখা নাটকই সবাইকে চমকে দিয়েছিল। তারপর বার বার। সাজানো বাগান, পরবাস, চাক ভাঙা মধু, নরক-গুলজার, রাজদর্শন, যা নেই ভারতে——একশোরও বেশি নাটক লিখেছেন। করেছেন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তাঁর সৃষ্টিতে অনেক সময়ই, বিষাদের মধ্যেও হাস্যরস। সাদা-কালোর পাশে ধূসর। যে ভাবে তিনি জীবন দেখেছেন, তাঁর নাটক, সেই জীবন-দর্পন। তিনি মনোজ মিত্র। নাট্যকলা বিভাগে ‘সেরা বাঙালি-২০১৬’।
এর আগে নাট্যজগতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তকে ‘সেরা বাঙালি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ সম্মান জানানা হয়েছে। রঙ্গমঞ্চে দেবশঙ্কর হালদারের মতো বলিষ্ঠ অভিনয়কে কুর্নিশ করা হয়েছে। নাট্যকলায় অনন্য অবদানের জন্য সেরা বাঙালির সম্মান জানানো হয়েছে সুমন মুখোপাধ্যায়কেও ৷ আর ২০১৬ সালে সেরা বাঙালি সম্মানে সম্মানিত করা হয় মনোজ মিত্রকে।
তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “মনোজ মিত্র একজন শুধু অভিনেতা-নাট্যকার নন।অভিনেতা-নাট্যকার-পরিচালক-চলচিত্র অভিনেতা। ওঁর গদ্য লেখা অসাধারণ ভাল। মনোজ আমাদের থিয়েটারে একজন…উৎপল দত্ত, শম্ভু মিত্র, অজিতেশ বন্দ্য়্যোপাধ্যায়ের পর…যাঁরা দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন…ওই একই রকম…। উৎপল দত্ত নাটক লিখতেন, অভিনয় করতেন, পরিচালনা করতেন। মনোজ সেই গোত্রের মানুষ। নাটকের সবক্ষেত্রেই ছিল তাঁর অসাধারণ দখল। পদে পদে নাটক করে গেছেন। বহু চরিত্র অসাধারণ… যেগুলো এখনও আমাদের চোখে জ্বলজ্বল করে। “
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে
আরও দেখুন