কলকাতা: নয় নয় করে এক বছর পার হত চলেছে। আগামী ৯ অগাস্ট আর জি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তি। আর সেই উপলক্ষে নবান্ন অভিযানের ডাক দিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাশে দাঁড়িয়ে আগামী ৯ অগাস্ট ‘অরাজনৈতিক নবান্ন অভিযানে’র ডাক দিলেন তাঁরা। পতাকা-ব্যানার ছেড়ে সেই নবান্ন অভিযানে সমাজের সব স্তরের মানুষকে শামিল হতে আহ্বান জানালেন শুভেন্দুও। ১৪ অগাস্ট ফের রাতদখলে নামতেও আহ্বান জানানো হয়েছে সকলকে। (RG Kar Case)
গত বছর ৮ অগাস্ট রাতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনা শোরগোল ফেলে দেয়ে গোটা দেশে। ৯ অগাস্ট সকালে, মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় নিহত চিকিৎসকের দেহ। আগামী ৯ অগাস্ট, সেই বিভীষিকাময় ঘটনার এক বছর পূর্ণ হবে। ওই দিনেই ন্যায় বিচারের দাবিতে ফের পথে নামছেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। (RG Kar case Protests)
আর জি করের নির্যাতিতার মৃত্যুবার্ষিকীর আগে, শনিবার রাতে সোদপুরে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছন শুভেন্দু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচিও। সেখানে শুভেন্দুর পাশে দাঁড়িয়েই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী ছিল। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করত। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে তার নির্মম পরিণতি হয়েছে, যার দায় ঘাড় থেকে নামাতে পারে না রাজ্য সরকার, স্বাস্থ্য দফতর। আগামী ৯ অগাস্ট এক বছর হচ্ছে। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আদালতে রাজ্য সরকারের যে ভাবমূর্তি এখনও আছে, তার প্রতিবাদে এবং ন্যায় বিচার ছিনিয়ে আনার জন্য নবান্ন অভিযানের ডাক দিচ্ছি আমরা। সেখানে সমস্ত রকম লোককে আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।”
পাশাপাশি, আগামী ১৪ অগাস্ট রাত দখলের ডাকও দেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, “১৪ অগাস্ট যেমন কোটি কোটি লোক রাস্তায় নেমেছিলেন রাত দখল করতে। আমি বলব, এই সমাজকে পরিবর্তন করতে আবারও যেন রাস্তায় নামেন সকলে। ১৪ অগাস্ট রাতদখল আবার যেন পালিত হয়। সবাই রাস্তায় এসে সরকারকে বুঝিয়ে দেবেন, তারা অন্যায় করছে। সরকার অন্যায় করলে, তাকে বোঝানোর ক্ষমতা মানুষেরই আছে।”
নির্যাতিতার বাবার পাশে দাঁড়িয়ে মুখ খোলেন শুভেন্দুও। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমি বিশ্বাস করি বেলেঘাটায় আজ যেভাবে হত্যা হয়েছিল, তদন্তকারী সংস্থা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে বাধ্য হয়েছে। একই ভাবে ডাক্তার বোনের ক্ষেত্রেও শিয়ালদা কোর্ট এবং হাইকোর্টে যে আইনি লড়াই চলছে, তাতেও আমাদের দাবি এবং আশা পূরণ হবে। ডাক্তার বোনের মা-বাবার যে লড়াই, মেরুদণ্ড সোজা রেখে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই হিংসাশ্রয়ী শাসকের বিরুদ্ধে যে কঠোর এবং কঠিন লড়াই করছেন, তা অন্য কেউ পারবেন বলে মনে হয় না আমার। তাঁদের এই কঠিন লড়াই, লক্ষ্যে অবিচল থেকে চালিয়ে যাওয়া লড়াইকে প্রণাম জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই।”
শুভেন্দু আরও বলেন, “অরাজনৈতিক ভাবে যদি ডাক্তার বোনের মা-বাবা নবান্ন চলো অভিযানের মতো কোনও বড় কর্মসূচির ডাক দেন, তাহলে রাজনীতির পতাকা সরিয়ে রেখে, আমরা সবাই আয়োজনও করব, অংশও নেব। আমরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, আইনি লড়াইয়ে পাশে আছি। বিভিন্ন সংস্থা সঠিক তদন্ত করেনি। রাজনৈতিক ব্যানার ছাড়া, অভিযান হবে। সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি। দলগুলির সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার ব্যাপার নেই। আসতে চাই চাইলে স্বাগত।”
যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “ওরা তো যাওয়ার জন্য বসে আছে। সিপিএম, কংগ্রেস, নানা দল আছে, কেউ গেলেই অভয়ার মা-বাবা যাচ্ছেন। তাঁরা যেতেই পারেন, মেয়ে খুন হয়েছে, তাঁদের বুকে আগুন জ্বলছে। কিন্তু তাঁদের আবেগের অপব্যবহার হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়েছিল। ওঁরাই বাকিদের কথা শুনে সিবিআই ডেকে আনলেন। এখন আবার বলছেন সিবিআই বিচার দিতে পারছে না। তার পরও একাধিক মামলায় সিবিআই লাগেনি, পুলিশ ফাঁসির রায় নিয়ে এসেছে। কিন্তু ওঁরা তা করতে পারেননি। যাবজ্জীবন হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অভয়ার মা-বাবাকে রাজনৈতিক মঞ্চে ব্যবহার করা হচ্ছে।”