সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে গণধর্ষণকাণ্ডের দিন, সকাল থেকে সন্ধে অবধি ডিউটিতে ছিলেন নিরাপত্তা রক্ষী সঞ্জীব শীল। এই কলেজে মনোজিৎ মিশ্রর দাপট ঠিক কীরকম ছিল হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন তিনি। ২০২৪ সালে তাঁর নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে এবিপি আনন্দে এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন, হাইকোর্টের দ্বারস্থ তামান্নার মা, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করুন, কেন আমাকে এতদূর আসতে হয়েছে ?’
সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের নিরাপত্তারক্ষী সঞ্জীব শীল বলেন, এরকম অমানবিক কাজ আমি ওকে করতে দিতাম না, তাতে আমার হাত-পা হয়তো ভেঙে দিত, জানে হয়তো মারত না। কিন্তু আমি অমানবিক কাজটা করতে দিতাম না। সঞ্জীব শীল। সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের সদ্য় প্রাক্তন নিরাপত্তা রক্ষী।ঘটনার দিন যাঁর ডিউটি ছিল সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত। কলেজে মনোজিৎ মিশ্র ওরফে ম্য়াঙ্গো দাদার যে কী রাজত্ব চলত তার প্রমাণ, ২০২৪ সালের নিজের একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্য়ে দিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজ নিরাপত্তারক্ষী সঞ্জীব শীল বলেন, দরজায় আওয়াজ পাচ্ছি, এই সিকিওরিটি, এই সিকিওরিটি। খাচ্ছিলাম, ভাত খাচ্ছিলাম, উঁকি দিয়ে দেখি, মনোজিৎ মিশ্র আমাকে ডাকছেন, এই সিকিওরিটি, এই সিকিওরিটি, গেটটা খোল। তুই তোকারি, অকথ্য ভাষায় তুই তোকারি করে বলে। আমি বললাম, এখন তো গেট খোলা যাবে না, কলেজের নির্দেশ আছে, কলেজ বন্ধ হয়ে গেলে বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ওরা গেট টপকে এসে আমাকে কানের পাশে একটা চড় মারে। দেওয়ালে ধাক্কা দিয়ে আটকে রাখে।
সেই ঘটনায় থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন প্রহৃত নিরাপত্তারক্ষী। তাঁর দাবি, সেখানেও হাজির হন মনোজিৎ। নিরাপত্তারক্ষী সঞ্জীব শীল আরও বলেন, থানাতেও সেই মনোজিৎ মিশ্র যায়। যখন আমরা বাইরে বসে থাকি বেঞ্চে, তখন মনোজিৎ মিশ্র গিয়ে আমাকে দেখতে পায়, আমাকে ডাকে হাত দিয়ে, এদিকে শোনো, শোনো, শোনো। আমি ভয়ের চোটে, বলে- শোনো না, একটা কথা আছে। মানে, থানা পর্যন্ত যায়। তারপর আপনি অভিযোগ করেছিলেন? এবিপি আনন্দ – এর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,হ্যাঁ, আমি বললাম, মনোজিৎ মিশ্র এসেছে। এখানে পর্যন্ত মনোজিৎ মিশ্র এসেছে। তখন থানা কর্তৃপক্ষ বলল, কই কই। বলতে বলতে চলে গেছে।
সেই ঘটনার পর থেকে কলেজের নিরাপত্তা রক্ষীরা রীতিমতো ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন। সাউথ ক্য়ালকাটা ল কলেজের ছাত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে, তাতে কার্যত ভেঙে পড়েছেন এই বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী।সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজ নিরাপত্তারক্ষী সঞ্জীব শীল বলেন,আমার যদি কিছু মানে, বিন্দুমাত্র এ পেতাম, তাহলে আমি নিশ্চয়ই আমার জীবনটুকু থাকতে আমার মতো করে চেষ্টা করতাম। এরকম একটা অমানবিক কাজ আমি করতে দিতে পারতাম না, কারণ, আমার ঘরেও একটা মেয়ে রয়েছে। এরকম অমানবিক কাজ আমি করতে দিতাম না। কাদের প্রশ্রয়ে মনোজিত মিশ্রর এই দাপট ছিল? তাঁদের কি শাস্তি হবে?