কলকাতা: বিজেপি-র মতুন রাজ্য সভাপতি হলেন শমীক ভট্টাচার্য। আর তাঁর সম্বর্ধনা সভায় নির্বাচনের সুর বেঁধে দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে হারানো এবং তাঁর ভাইপোকে জেলে পোরার শপথ গ্রহণ করলেন তিনি। আর লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য হিন্দুভোটকে বিজেপি-র ছাতার নীচে টেনে আনার বার্তা দিলেন। (West Bengal BJP)
বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি হিসেবে শমীকের নাম ঘোষণা হল। সায়েন্স সিটিতে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন শুভেন্দুও। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শমীকের নেতৃত্বে লড়াইয়ে নামার শপথ গ্রহণ করেন তিনি। দলের কর্মী-সমর্থকদের তিনটি মন্ত্রে দীক্ষিত হতে বলেন-শক্তিশালী সংগঠন, হিন্দুদের সংযুক্তিকরণ এবং সঙ্কল্পপত্র। মাত্র ৪-৫ শতাংশ ভোট বাড়লেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র ক্ষমতায় আসা আটকানো যাবে না বলে জানান তিনি। (Suvendu Adhikari)
দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে এদিন শুভেন্দু বলেন, “গত লোকসভা নির্বাচনে ৬৮ শতাংশ হিন্দু ভোট দিয়েছিলেন। এখন থেকে বুথ মজবুত করুন, নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করুন ভোটারদের সঙ্গে। ৮০ শতাংশ হিন্দু যদি ভোট দিতে যায়, তাহলে এই যে হিন্দু অত্যাচারী, মুসলিম লিগ-২ সরকার আছে, ‘২৬-এ পিসি-ভাইপোর এই চোরের সরকারকে উপড়ে ফেলে দেওয়ার কাজ করবে বিজেপি।”
তৃণমূলকে উৎখাত করার এই লড়াইয়ে সিপিএম-এর থেকে সাবধান থাকতেও কর্মী-সমর্থকদের সাবধান করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “সিপিএম-এর থেকে সাবধান থাকতে হবে। মুসলমানদের মিছিলে হাঁটায়, মিছিলে বলে ধর্মনিরপেক্ষতা জিন্দাবাদ, টুকড়ে টুকড়ে গ্য়াং, কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি বলে ওরা, অপারেশন সিঁদুরের বিরধিতা করে, পাকিস্তানের জলবন্ধ কেন প্রশ্ন তোলে, মোদিজি জবাব দাও বলে। এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এরা হিন্দুদের ভোট কাটে। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র ১২টি আসনের ক্ষতি করেছে এই মাকুরা।”
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে জেতাতে হলে সংগঠন মজবুত করতে হবে, বিজেপি সমর্থক হিসেবে হিন্দুদের সংযুক্তিকরণ ঘটাতে হবে এবং সঙ্কল্পপত্রকে সামনে রেখে এগোতে হবে, অক্ষরে অক্ষরে প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে বলে জানান শুভেন্দু। তাঁর মতে, শুধুমাত্র কলকাতা কেন্দ্রিক প্রচারে কাজ হবে না, দিঘা থেকে দার্জিলিং, কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহারে বিজেপি-র বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে না। নেতা-কর্মীদের বুথগুলিকে ‘রোহিঙ্গামুক্ত’ রাখতে বলেন শুভেন্দু। তিনি জানিয়েছেন, ১ অগাস্ট থেকে ভোটার তালিকা রিভিশন করবে নির্বাচন কমিশন, তাই বিজেপি-কে গুছিয়ে কাজ করতে হবে।
শুভেন্দু এদিন বলেন, “অতীতে যা হয়েছে, আগামীতে তা হবে না। নিজের বুথে, নিজের পঞ্চায়েতে, নিজের ওয়ার্ডে, নিজের শক্তিকেন্দ্রকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে হবে। রোহিঙ্গামুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করতে না পারলে, লড়বেন কী করে? নির্বাচন কমিশন যেভাবে সংস্কারের পথে এগোচ্ছে, তাতে আশা কির অতীতে যা হয়েছে, আগামীতে হবে না। আমাজের সুন্দর করে, গুছিয়ে কাজটা করতে হবে। এই সরকারের উপর ঘৃণা তৈরি হয়েছে। এদের আমলে মা, বোন, দিদি, কন্যা কেউ সুরক্ষিত নয়। আমরা মালদা দেখেছি, মুর্শিদাবাদ দেখেছি, মহেশতলাদেখেছি। ম-এ মমতাও। মমতা তাড়াও, হিন্দু বাঁচাও। হিন্দু বাঁচাও, মমতা ভাগাও। হিন্দু জাগো, হিন্দু জাগো, হিন্দু জাগো। আমাদের বদলা নিতে হবে। কালীগঞ্জে যদি ৭০ শতাংশ হিন্দু একসঙ্গে বিজেপি-কে ভোট দেয়, বাংলায় কেন ৭০ ভাগ হিন্দু পদ্মফুলে ভোট দিতে পারবে না? আমাদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া আর কপালের ভরসায় বসে থাকলে হবে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যোদ্ধা তৈরি করতে হবে। শমীক ভট্টাচার্যের সম্বর্ধনা সভার শপথ হোক, মমতাকে হারাতে হবে, ভাইপোকে জেলে পুরতে হবে।”
গত ২৭ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচিতে ৫০ লক্ষ মানুষ বিজেপি-র প্রাথমিত সদস্যতা গ্রহণ করেছেন। সক্রিয় সদস্য হয়েছেন ৫০ হাজার মানুষ। তবে এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে বলে জানান শুভেন্দু।