শুভপম সাহা: ১৭২৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (East India Company) হাত ধরে ভারতে প্রথম ডাকঘর স্থাপন হয়েছিল বোম্বেতে (অধুনা মুম্বই)। এরপর ১৭৭৪ সালে কলকাতায় জিপিও তৈরি হয়। তত্কালীন বাংলার গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস (Warren Hastings), সেই বছরই সরকারি ডাক পরিষেবা চালু করেছিলেন। প্রতি ১০০ মাইলে দু’আনা করে ডাক খরচ নেওয়া হত। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইন্ডিয়া পোস্ট (India Post) আধুনিকীকরণের পথে হেঁটেছিল। দেশের মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ভারতীয় ডাক বিভাগ, মূল ডাক ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যাংকিং, বীমা এবং ই-কমার্স পরিষেবাও প্রদান করে।
ভারতীয় বাজারে ইন্ডিয়া পোস্টের ডকুমেন্টস (চিঠি ও নথিপত্র) শেয়ার যেখানে ৬০ শতাংশ, সেখানে ই-কমার্স মাত্র ৭ শতাংশ। এই বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে, ভারতীয় ডাক বিভাগ বিশ্বস্ততার সঙ্গে নিরাপদে এবং সময়ের মধ্যে এন্ড-টু-এন্ড প্রসেসিংয়ে পার্সেল ব্যবসা বাড়ানোর উপরেই নজর দিয়েছে এখন। সেই লক্ষ্যে রেল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে ভারতীয় ডাক রোড ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ককে (আরটিএন) আরও উন্নত করছে।
পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের ডাক বিভাগ, গত ১ জুলাই আরটিএনের অধীনে ‘কলকাতা-দিল্লি’ (Sch. No. 2064) এবং ‘দিল্লি-কলকাতা’ (Sch. No. 1064) লং রুট পার্সেল পরিষেবা চালু করল। ৫ টন ভার বহনে সক্ষম একটি ট্রাক প্রতিদিন কলকাতা থেকে দিল্লি যাবে পার্সেল নিয়ে, একই ভাবে কলকাতা থেকেও দিল্লিতে আসবে। সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত ট্রান্সশিপমেন্ট সেন্টারে থেকে প্রতিদিন এই ট্রাক ছাড়বে দিল্লির উদ্দেশে। কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ (গাজিয়াবাদ) এবং উত্তরাখণ্ডের পার্সেলগুলিও নেবে ওই ট্রাক। এই নতুন রুটে পূর্ব ও উত্তর ভারতের মধ্যে পার্সেল সহ পাবলিক ডাক নিরাপদ এবং দ্রুত পরিবহণকে উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নত করবে।
নতুন রুটের ফ্ল্যাগ অফ অনুষ্ঠানের পর চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল অশোক কুমার বললেন, ‘দেখুন আমরা গোটা দেশের সঙ্গে জুড়ে থাকতে প্রায় পুরোপুরিই রেল নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরশীল। সেখান থেকে ফের সড়ক পথ। এখন দেশে পার্সেল ব্যবসা বাড়ছে এবং ই-কর্মাসেরও রমরমা। গ্রাহকরা ঘরে বসে পার্সেল পেতে চাইছেন। একই সঙ্গে ই-মেল, এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপের যুগে আমাদের চিঠির ব্যবসাও পড়তির দিকে। তাই আমাদের ব্যবসার ফোকাস এখন পার্সেলের দিকেই। সড়ক পথে আমরা নিরাপদে এবং নিশ্চিন্তে সরাসরি ট্রান্সপোর্ট করতে পারব।’
পোস্টমাস্টার জেনারেল (মেইলস অ্যান্ড বিডি) সুপ্রিয় ঘোষ এই প্রসঙ্গে যোগ করলেন, ‘রেল থেকে রোড ট্রান্সপোর্ট হবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট, হাব টু হাব। ট্রেন থেকে পার্সেল নামানোর পর আর সড়কপথ ধরতে হবে না। খেয়াল করে দেখবেন আপনি কোনও কিছু অর্ডার করলে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি তিন থেকে সাত দিন সময় নেয় তা ডেলিভারি করতে। তারাও কিন্তু রোড ট্রান্সপোর্টেই করে। আমাদের পার্সেল আরও দ্রুত পৌঁছে যাবে। কম করে সময় একদিন বাঁচবে। বিশেষত উত্তর ভারতের। এছাড়াও বাংলায় ৩০টি ইন্টিগ্রেটেড ডেলেভারি সেন্টার হয়েছে। গোটা দেশে রয়েছে ৪০০টি।’
কলকাতা-দিল্লি ও দিল্লি-কলকাতা রুটে সরাসরি পার্সেল পরিষেবা প্রথম। কিন্তু ডাক বিভাগের বর্তমানে ৩৪টি জাতীয় রুট রয়েছে যা হাব অ্যান্ড স্পোক মডেলের মাধ্যমে ১১০টি রাজ্য স্তরের রুটের সাথে সংযুক্ত। যার ফলে ১০০টিরও বেশি টিয়ার টু এবং টিয়ার থ্রি শহরে প্রসারিত। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের ডাক বিভাগের আরও তিনটি জাতীয় আরটিএন রুটে সক্রিয়। কলকাতা-গুয়াহাটি ভায়া শিলিগুড়ি , কলকাতা-পটনা ভায়া ধানবাদ ও গয়া এবং কলকাতা-নাগপুর ভায়া ভুবনেশ্বর ও রায়পুর। একই ভাবে ফিরতি রুটেও পার্সেল পরিষেবা চলছে। বর্ধিত নিরাপত্তার সঙ্গেই, দ্রুত ডেলিভারি নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট কিছু দূরপাল্লার রুটে সরসারি পার্সেল পরিষেবা চালু করা প্রয়োজন বলেই মনে করে ভারতীয় ডাক।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)