ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : কসবাকাণ্ডের পর সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে পঠনপাঠন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে কলেজের পঠনপাঠন বন্ধ। আইন কলেজের পড়ুয়াদের প্রতিষ্ঠানে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। গতকালই কলেজে এ নিয়ে নোটিস দিয়েছে সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজ কর্তৃপক্ষ। কসবার এই আইন কলেজেই ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক প্রাক্তনী এবং দুই বর্তমান পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। মূল অভিযুক্ত শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেও জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই। পেশায় তিনি আইনজীবী। কসবার আইন কলেজের এই ঘটনার প্রতিবাদে দিকে দিকে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। তার মধ্যেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের পঠনপাঠন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজের গভর্নিং বডি।
২৯ তারিখ কলেজের তরফে নোটিস দেওয়া হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে বিএ এলএলবি এবং এলএলএম – এইসব কোর্সের পঠনপাঠন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হচ্ছে। এছাড়াও পড়ুয়াদের কলেজ চত্বরে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। কলেজের গভর্নিং বডির তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে।
পরিকল্পনা করেই গণধর্ষণ, প্রাথমিকভাবে তদন্তে ধারনা পুলিশের। ‘সন্ধে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ৮জন কলেজে ছিল, তারপরে ৪জন চলে যায়। বাকিরা চলে যাওয়ার পরে ছাত্রীকে আটকে রেখে অত্যাচার চালায় ৩জন’। নির্যাতিতার বয়ানের সঙ্গে হুবহু মিলছে একের পর এক তথ্যপ্রমাণ। কসবাকাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ, অত্যাচারে অসুস্থ হওয়ার দাবি নির্যাতিতার, মিলল ইনহেলার কেনার প্রমাণ। এছাড়াও নির্যাতিতার বয়ানের সঙ্গে মিলছে CC ফুটেজে অভিযুক্তদের গতিবিধি। নির্যাতিতার বয়ানে উল্লেখ, মনোজিতের ফোনে মিলল ‘ধর্ষণের ভিডিও’। নির্যাতিতার বয়ানের সঙ্গে মিলছে অত্যাচারের মেডিক্যাল রিপোর্ট। অসুস্থ হয়ে পড়ায় নির্যাতিতাকে ইনহেলার এনে দেয় অভিযুক্তরা, মিলল তারও প্রমাণ। আইন কলেজ থেকে অভিযুক্তদের ব্যবহৃত হকি স্টিকও উদ্ধার। কসবাকাণ্ডে বাজেয়াপ্ত হওয়া সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিকে। হকি স্টিক, পোশাক সহ বিভিন্ন জিনিস ফরেন্সিকে পাঠিয়েছে পুলিশ।
হুবহু মিলছে নির্যাতিতার বয়ান, মনোজিতের শরীরেও আঁচড়ের দাগ। ‘নির্যাতনের সময় প্রতিরোধেই মূল অভিযুক্তের শরীরে আঁচড়ের ক্ষত’, মনোজিৎ মিশ্রের মেডিক্যাল টেস্টে এমনই অনুমান চিকিৎসকদের, খবর সূত্রের। নির্যাতিতার শরীরে আঁচড়ের চিহ্ন, মেলাতে অভিযুক্তদের DNA টেস্ট। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগে DNA-র নমুনা সংগ্রহ। দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা ধরে অভিযুক্তদের চুল, নখ, ত্বক, রক্ত, দেহরসের নমুনা সংগ্রহ। নির্যাতনের সময় অসুস্থ হয়ে ইনহেলার চেয়েছিলেন তিনি, বয়ানে উল্লেখ করেছিলেন নির্যাতিতা। নির্যাতিতার বয়ানের সঙ্গে এবার মিলে গেল পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ।
ঘটনার দিন রাত ৮.২৯ মিনিটে কেনা হয়েছিল ইপ্রাটোপিয়াম লিভোসালবুটামোল ইনহেলার। ইনহেলার কেনা হয়েছিল কসবার একটি ওষুধের দোকান থেকে। ইনহেলার কিনতে গিয়েছিলেন ধৃত অভিযুক্ত জেব। ওষুধের রসিদে মিলেছে জেবের নাম। সাড়ে তিনশ টাকা দিয়ে ইনহেলার কিনেছিলেন জেব। জেব ওষুধের দোকানের বিল মিটিয়েছিলেন UPI অ্যাপের সাহায্যে। কিছু টাকা নগদে দিতে চেয়েছিলেন জেব। দোকানদার আপত্তি করার পুরো টাকা মেটান UPI অ্যাপের সাহায্যে। দোকানের CCTV ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত মানি রিসিটও।