নয়াদিল্লি: আমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর বেঁচে যাওয়া মিরাকলের চেয়ে কিছু কম নয়। সেই বিশ্বাসকুমার রমেশের নতুন ভিডিও ঘিরে শোরগোল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর আগে, বিস্ফোরণস্থল থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল রমেশকে। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন সেবার। কিন্তু নয়া ভিডিও-তে রাস্তা দিয়ে হেঁটে দুর্ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেই নিয়ে নানা তত্ত্ব উঠছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে কেন ভিতরে ঢুকেছিলেন রমেশ, তার নেপথ্য কারণ সামনে এসেছে। (Air India Crash Viral Video)
গত ১২ জুন আমদাবাদ লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান AI171 ভেঙে পড়ে। দুই পাইলট, ১০ বিমান কর্মী এবং ২৩০ জন যাত্রী সওয়ার ছিলেন বিমানে। লন্ডনের বাসিন্দা রমেশ এবং তাঁর দাদা অজয়ও বিমানে সওয়ার ছিলেন। দুর্ঘটনার পর আগুন ও ধোঁয়ায় যখন ঢেকে গিয়েছে চারিদিক, সব অসম্ভবকে সম্ভব করে সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে রমেশকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের একমাত্র জীবিত যাত্রী তিনি। তাঁর বেঁচে যাওয়াকে অবিশ্বাস্য় ঘটনা বলেও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। (Vishwas Kumar Ramesh)
আর সেই আবহেই সম্প্রতি দুর্ঘটনাস্থল থেকে নতুন একটি ভিডিও সামনে এসেছে, যাতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ভিতর ঢুকতে দেখা যাচ্ছে রমেশকে। বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে, গল গল করে ধোঁয়া বেরোতেও দেখা গিয়েছে ভিডিওতে। সেই ধ্বংসাবশেষের দিকেই এগিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে রমেশকে, যা নিয়ে এই মুহূর্তে জোর চর্চা সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা একমাত্র যাত্রী হঠাৎ আগুনের মধ্যে ফিরে গেলেন কেন, তা নিয়ে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও খাড়া করেছেন কেউ কেউ। সংবাদমাধ্যমে কেন বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
খবরের সত্যতা যাচাইকারী সংস্থা Alt News ওই ভিডিও-র নেপথ্য কারণ বিচার বিশ্লেষণ করেছে। তারা জানিয়েছে, রমেশের বোর্ডিং পাসের ছবি মিলেছিল। অর্থাৎ তিনি যে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে সওয়ার ছিলেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখনও পর্যন্ত সামনে আসা সব ভিডিও যাচাই করে Alt News জানিয়েছে, প্রথমে দুর্ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়েই আসেন রমেশ। এর পর, দু’-দু’বার বিমানের ধ্বংসাবশেষের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। দাদার খোঁজেই তিনি ভিতরে ঢোকেন। বেরিয়ে আসার কিছু ক্ষণ পরই দাদাকে খুঁজতে ভিতরে ঢোকেন তিনি। কিন্তু সফল হননি। এর পর পুনরায় ভিতরে ঢুকতে গেলে বাকিরা বাধা দেন তাঁকে। ধরে নিয়ে গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়।
Bit confused by seeing this viral video. The person who was shown as a survivor was found walking inside the accident zone area and then again he came out 😰 how’s that possible? I can’t believe this.#planecrash #ViralVideos#Accident #AirIndiaPlaneCrash #IranIsraelConflict… pic.twitter.com/eOIBysIAtN
— Amit Kumar Singh (@AmitSingh0208) June 18, 2025
প্রত্যক্ষদর্শীরাও এর সপক্ষে বয়ান দিয়েছেন। সতীন্দ্র সিংহ সান্ধু নামের এক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেয় BBC India. অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা থেকে উদ্ধারকার্য তদারকি করছিলেন সতীন্দ্র। তিনি বলেন, “পীড়িতদের অ্যাম্বুল্যান্সে তুলছিলাম। সেই সময় ওঁকে (রমেশ) ফটকের কাছে দেখি। ভিতরে গিয়ে আবার ফিরে আসেন। সেই সময় আমি হস্তক্ষেপ করি। ওঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলি। এর পরও ভিতরে ফিরে যেতে চান রমেশ। কিছু বুঝতে পারছিলেন না। কমপ্লেক্সের ভিতরে ঢুকে ফিরে আসছিলেন। আমরা টেনে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। উনি জানান, ধ্বংসস্তূপে ওঁর প্রিয়জন রয়েছেন, তাঁকে বাঁচাতে চান।” রমেশই যে বিমানের একমাত্র জীবিত, তা তখনও পর্যন্ত জানতেন না সতীন্দ্র।
নতুন ভিডিওটিতে খুঁড়িয়ে হাঁটতেও দেখা গিয়েছে রমেশকে। যে সময় তিনি ভিতরে ঢুকছিলেন, বাঁ দিকে দেওয়ালের বাইরে একটি স্কুটার দাঁড় করানো ছিল। ডান দিকে রাস্তায় ছিল একটি কুকুর। গুটিকয়েক মানুষকেই দেখা যায় সেই সময়। রমেশ সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যেতে উদ্যত হন কয়েক জন। সেই সময় স্কুটারটি ছিল না। মানুষজনের সংখ্যাও বেশি। অর্থাৎ রমেশের ভিতরে ঢোকা এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসার মধ্যে বেশ খানিকটা সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। আর একটি ভিডিও-তে দেখা যায়, হস্টেলের কমপাউন্ডে ঢোকার সময় ফোন দেখছেন রমেশ। সেই সময়ও স্কুটার ছিল না, দেখা যায়নি কুকুরটিকেও। অর্থাৎ রমেশ যে দু’-দু’বার ভিতরে ঢোকেন, তা স্পষ্ট। যে সতীন্দ্র BBC India-তে মুখ খোলেন, দ্বিতীয় বার রমেশ ভিতরে ঢোকার সময় তাঁকে রাস্তায় গোলাপি শার্ট ও নীল পাগড়ি পরা অবস্থায় দেখা যায়।
(ডিসক্লেমার: এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে Alt News, প্রতিবেদনটির অনুবাদ করেছে এবিপি লাইভ বাংলা।)