কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে এখনও বাকি বেশ কয়েক মাস। কিন্তু তার আগে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী সামনে এল। বিরোধী শিবিরের কোনও নেতা বা নেত্রী নন, ভবিষ্যদ্বাণী করলেন তৃণমূলের মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। কিন্তু নিজের দলকে ফুলমার্কস দেওয়ার পরিবর্তে উদ্বেগের বাণীই শোনালেন হুমায়ুন। তাঁর দাবি, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের আসল সংখ্যা ২০০-র নীচে নেমে যেতে পারে। (Humayun Kabir)
২০২৬ সালের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এতদিনে নানারকম দাবি শোনা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের মুখে। সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ২১৫ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেন, অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় দু’টি আসন বেশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জানান, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্য়াগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার কথা বলেন। ২১৫-র বেশি হবে, কম হবে না বলে জানান তিনি। কিন্তু হুমায়ুনের মতে, ‘২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ১৯৫-১৯৮ আসন পাওয়ার মতো জায়গায় রয়েছে তৃণমূল। (West Bengal Assembly Elections 2026)
শুধু সংখ্যার হিসেব দিয়েই থামেননি হুমায়ুন, তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক বলে যাঁদের দিকে ইঙ্গিত করেন বিরোধীরা, তৃণমূলের প্রতি সেই সংখ্যালঘুদের সমর্থনও কমবে বলে দাবি করেছেন হুমায়ুন। এই মুহূর্তে তৃণমূলে হুমায়ুনের অবস্থান নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। দলের অন্দরে তিনি কোণঠাসা বলে যেমন শোনা যাচ্ছে, তেমনই কংগ্রেসের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন বলে তিনি নিজেই সম্প্রতি দাবি করেন।
সেই নিয়ে জল্পনার মধ্য়েই এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছেন হুমায়ুন। তাঁর বক্তব্য, “আমরা ১৯৫-১৯৮ আসনের জায়গায় রয়েছি।” তাহলে কি আসন কমবে তৃণমূলের? হুমায়ুনের জবাব, “হ্যাঁ, কমতেই পারে। অসম্ভব কিছুই নয়।” সংখ্য়ালঘুরা তৃণমূলের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে না পারায়, তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে বলেও দাবি করেন হুমায়ুন।
হুমায়ুন এদিন বলেন, “আমাদের এখানে সরকার তৃণমূলের। এখানেও ঠিকমতো বিরোধিতা (ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে) করতে পারছে না। নিজেদের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য যে ধরনের আন্দোলন হওয়া উচিত…জাফরাবাদে যে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস খুন হলেন, কিছু বাড়িঘর লুঠ হল, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হল…আজ সম্পত্তি রক্ষার আন্দোলনটাই করতে পারছে না। একটা ভীতি, আলোচনা, পর্যালোচনা, সমালোচনা শুরু হয়েছে।” সমালোচনা কি শাসকদলের বিরুদ্ধে? হুমায়ুনের জবাব, “হ্যাঁ, যে কেন আন্দোলন করতে পারব না?”
হুমায়ুন আরও বলেন, “পহেলগাঁও এবং কেন্দ্রের ওয়াকফ আইনের যে সংশোধন, তা নিয়ে পুরোপুরি যে অনুকুলে আছে আমাদের, তা বলতে পারব না আমি। জনগণনা শুরু করতে বলুন, দেখবেন মুসলিম সম্প্রদায় আজ গোটা বাংলায় ৩৫ শতাংশ পেরিয়ে গিয়েছে। এটা কম বিষয় নয়। এঁদের তো অনেক নির্ণায়ক ক্ষমতা আছে। ১৪টি জেলায় ১০০টি আসনে নির্ণায়কের ভূমিকা নিতে পারেন।”
মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুরের মতো সংখ্য়ালঘু অধ্য়ুষিত এলাকাগুলিতে একদা দাপট ছিল কংগ্রেসের। এই জেলাগুলিতে সিপিএম-এর সংগঠনও শক্তিশালী ছিল।
কিন্তু গত কয়েক বছরে সংখ্য়ালঘু ভোট পুরোপুরি চলে গেছে তৃণমূলের দিকে। কংগ্রেস-সিপিএম শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূলের প্রতি সংখ্য়ালঘুদের একাংশের মধ্য়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন হুমায়ুন। তাঁর মতে, এতে কংগ্রেস এবং সিপিএম লাভবান হতে পারে। হুমায়ুন বলেন, “এই মুহূর্তে যা হাওয়া, তাতে মুসলিম ভোটের যে ৯০ শতাংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দেয় (ভোট)। কিন্তু যেভাবে ওয়াকফ নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের মুসলিম, যাঁরা একটু কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, তাঁদের মধ্যে ওয়াকফ নিয়ে আত্মবিশ্বাস নেই, আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে। এই ধরনের আলোচনা-পর্যালোচনা, বিকল্প কী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। কংগ্রেস-সিপিএম শূন্য আছে। ISF একটি আছে। আমার ধারণা কংগ্রেস-সিপিএম এবং ISF জোট করে লড়বে আগামী দিনে। আর সেই জোট করে লড়লে কিছু না হলেও ৩০ থেকে ৪০টা আসন পেতে পারে।”
যদিও হুমায়ুনের ভোট-ভবিষ্যৎ কমানতে নারাজ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর কথায়, “আমি জানি যে মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ দেখে ভোট দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে সামনে রেখে তৃণমূলকে বেছে নেন। বাকিগুলো স্পয়লার, ছোটখাটো ইমপ্য়াক্ট হবে। ওভারঅল পুরো পশ্চিমবঙ্গ। সেই কোচবিহার থেকে তমলুক পর্যন্ত কোনও ইস্যু নেই যা মানুষকে অ্যাফেক্ট করে।”
অন্য দিকে, বিজেপি-র রাহুল সিনহার বক্তব্য, “হুমায়ুন কবীর এখন তৃণমূলেই ব্রাত্য। তাই কংগ্রেস ও সিপিএম-কে অধিক নম্বর দিতে চাইছে। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, কংগ্রেস-সিপিএম শূন্যই থাকবে। আর যে ৫০টি আসনের কথা বলেছেন, তা তৃণমূলের ভাগ্য়ে জুটবে। আর বাকি আসন বিজেপি পাবে, ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র সরকার হবে।” হুমায়ুনের এই ভবিষ্য়দ্বাণী নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া মিলছে। কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণী কতদূর ফলবে, তা বলে দেবে সময়ই।